দূষণ রুখতে কমাতে হবে প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা, ঢাকতে হবে নির্মাণ ক্ষেত্র
রাস্তার ধারের খাবারের দোকানগুলিও দূষণের জন্য অনেকটাই দায়ী
- Total Shares
পরিবেশ দূষণের জন্য বেশ কয়েকটি বিষয় দায়ী: যানবাহন, নির্মাণ ক্ষেত্র, রিসাসপেন্সন অফ দি পার্টিকেলস ম্যাটার অর্থাৎ গাড়ি চললে যে ধুলো ওড়ে, বর্জ্য জ্বালানো, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র থেকে যে দূষণ হয় প্রভৃতি। সব বড় শহরেই এগুলো ক্রমশ বাড়ছে। শহরগুলো বড় হচ্ছে, গাড়িঘোড়ার সংখ্যা বাড়ছে। তা ছাড়া আমাদের দেশে ছোট বাড়িগুলোকে ভেঙে বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। এই সব কারণেও দূষণ ক্রমেই বাড়ছে।
আমরা আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করছি যে ঋতুভেদে দূষণের মাত্রারও হেরফের হয়। যেমন শীতকালে শহরগুলোতে দূষণের মাত্রা বেশি এবং গ্রীষ্মকালে দূষণের মাত্রা আপেক্ষিক ভাবে কম। কলকাতা শহরের বিচারে বলা যাবে, গ্রীষ্মকালে দূষণ যা থাকে বর্ষাকালে তার চেয়ে পরিবেশ অনেক বেশি নির্মল থাকে, কিন্তু দূষণের নিরিখে শীতকাল সবচেয়ে খারাপ। আবহাওয়া দিয়ে এর ব্যাখ্যা করলে বলতে হবে, ধূলিকণাগুলো ঠান্ডায় নীচে নেমে চলে আসে, ফলে শীতকালে পরিস্থিতি খারাপ থাকে। কলকাতা শহরে শীতকাল রুক্ষ এবং এই সময়ে উত্তরপূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। যে দিন বায়ুপ্রবাহ কম হয়, অর্থাৎ বাতাস যে দিন কম বয়, সেদিন দূষণের মাত্রাও বেশি হয়।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ১০ কিমির মধ্যে কয়লা জ্বালান নিষিদ্ধ
দিল্লিতে আরেকটা ব্যাপার দেখা যায়, যেটা এখানে হলেও কম মাত্রায় হয়, তা হল ক্ষেতের ফসল পুড়িয়ে দেওয়া। এর ফলেও বাতাস দূষিত হয়। হরিয়ানা-উত্তরপ্রদেশে ফসল পোড়ানোর জেরে দিল্লিতে দূষণ দেখা যায়।
প্রশ্ন হল এ ক্ষেত্রে আমাদের কী করণীয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কয়েকটি নির্দেশিকা রয়েছে। দিল্লিতে এখন সিএনজি গ্যাস চালিত গাড়ি চলছে। আশা করা হচ্ছে কলকাতায় ২০২০ সালের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রস্তাব অনুয়াযী রাজ্যের পরিবহণ বিভাগের আর্থিক সহায়তায় দুর্গাপুর-আসানসোলে কোল-বেড মিথেন গ্যাসে চালিত ২০টি বাস চালু করা গিয়েছে। কিন্তু এই গ্যাস দুর্গাপুর-আসানসোল ছাড়া অন্য কোথাও এই কোল-বেড মিথেন পাওয়া যায় না বলে অন্য কোথাও এই ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে কলকাতায় তা চালু হয়ে যাওয়ার কথা।
যেখানে যে ধরনের নির্মাণই হোক না কেন, সেই নির্মাণক্ষেত্র ঢেকে রাখতে হবে, তা সে রাস্তা নির্মাণ হোক বা বাড়ি বা নতুন শহর। এই দায়িত্ব থাকে সাধারণ ভাবে স্থানীয় পুরসভার উপরে। মেট্রো রেলের নির্মাণও এর মধ্যে পড়ে। আমকা চাই যতটা সম্ভব ধূলিকণা ওড়া বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করা।
উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানায় মাঠে ফসল জ্বালান হয়
কলকাতা শহরে আলাদা করে ১৫ বছরের পুরোনো গাড়ি বাতিল করা হয়েছে, তিনচাকার গাড়িগুলোকে সিনএনজি চালিত করা হয়েছে, স্টেজ ফোর গাড়িগুলিকে আরও বেশি জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে। ডিজেল চালিত গাড়ি যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা যায় আমরা সেই নির্দেশিকা দিয়ে থাকি।
শহরে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো হয়, এটা চলছেই, কিন্তু এটা হওয়া উচিৎ নয়।
রাস্তার ধারের খাবারের দোকানগুলিও দূষণের ব্যাপারে অনেকটাই দায়ী। রাস্তার ধারে কয়লা পুড়িয়ে হোটেলগুলো চলে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা জ্বালানো আমরা নিষিদ্ধ করেছি। শহর দূষণমুক্ত রাখার জন্য সবুজের সমারোহ বাড়ানো প্রয়োজন।
দূষণে মুখ ঢেকেছে দিল্লি
প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা যত বাড়বে, দূষণও তত বাড়বে। তাই আমরা গণপরিবহণ আরও জনপ্রিয় করার কথা বলছি। কারণ তাতে রাস্তায় গাড়ির ভিড় কমে, তাতে দূষণও কম হয়।