নিট পরীক্ষায় বাংলা ভাষায় প্রশ্নপত্র নিয়ে আবার সমস্যা
বাংলা-সহ আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে একেবারেই যত্নশীল নয় সিবিএসই
- Total Shares
অনেক তর্জন-গর্জনের পরে নিট পরীক্ষা নিয়ে একটা কথাই বলা চলে, কর্তৃপক্ষের অদক্ষতার বলি হতে হল এ রাজ্যের বহু ছাত্রছাত্রীকে। উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়ে তাঁরা অনেকেই সময়মতো প্রশ্নপত্রই পেলেন না। বাংলা মাধ্যমে যাঁরা পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের হয় হিন্দি ও ইংরেজি প্রশ্নপত্র পড়ে উত্তর করতে হল, নতুবা বসে থাকতে হল, যতক্ষণ না বাংলা প্রশ্নপত্রেপ ফোটোকপি এসে পৌঁছাল। যাঁরা উপযুক্ত প্রস্তুতি সত্ত্বেও সুযোগ পাবেন না বা পিছিয়ে পড়বেন মেধা তালিকায়, তাঁেদর এই দায় কে নেবে সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করছে।
ডাক্তারিতে অভিন্ন প্রবেশিকা বা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট-ইউজি) পরীক্ষা হয়ে গেল এই রবিবার। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসি)-র তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে এ বছর দেশের প্রায় ১৩৬টি শহরের ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার ৭২৫ জন ছাত্রছাত্রী এই পরীক্ষাটি দিয়েছে।
তবে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল যে গত বছর যেমন প্রশ্নপত্রকে ঘিরে নিট পরীক্ষা প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছিল এ বছরেও কিন্তু ঠিক তেমনটাই হল। যাঁরা বাংলা প্রশ্নপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তাঁদের কাছে পৌঁছল না বাংলা প্রশ্নপত্র। রাজ্যের বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে এসেছে একই খবর। এর ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের প্রচণ্ড সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
পর পর সবকটি ঘটনায় সিবিএসি-র পক্ষ থেকে চূড়ান্ত গাফিলতি দেখা যাচ্ছে
প্রদীপ সিনহা নামে এক অভিভাবক (যাঁর মেয়ের কোন্নগরের একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে সিট পড়েছিল) জানিয়েছেন, "আমার মেয়ের বাংলায় প্রশ্নপত্র পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ওই কেন্দ্রে বাংলা প্রশ্নপত্রই পৌঁছয়নি, তাই সময় চলে যাচ্ছে দেখে ওই কেন্দ্রের আধিকারিকরা আমার মেয়ের মতো আরও যাঁরা বাংলা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল, তাঁদের ইংরেজি-হিন্দি প্রশ্নপত্র দেন। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হয়। কারণ যেহেতু তারা বাংলায় পড়াশোনা করেছে এবং মডেল প্রশ্নগুলোর উত্তরও বাংলাতেই অভ্যাস করেছে তাই ইংরেজি অনেক শব্দ বুঝতে তাঁদের সমস্যা হয়েছে। আবার যাঁরা হিন্দিটা মোটামুটি কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো জানেন তাঁরা হিন্দি প্রশ্ন দেখে ইংরেজি শব্দগুলোর মানে বোঝার চেষ্টা করে। এর ফলে এইসব ছাত্রছাত্রীরা তিন ঘণ্টার মধ্যে ঠিক যতখানি প্রশ্নের উত্তর দেবে ভেবেছিল, তার চেয়ে অনেক কম প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে।"
কলকাতা, হুগলি-সহ বেশ কয়েকটি জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। আবার কয়েকটি পরীক্ষার হলে ওখানে উপস্থিত আধিকারিকরা বেশ কিছুক্ষণ পরে তড়িঘড়ি কয়েক সেট বাংলা প্রশ্নপত্রের ব্যবস্থা করলেও, তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বেশ কিছুক্ষণ পরে বাংলা প্রশ্নপত্র ফটোকপি করে এনে দেওয়া হয়, কিন্তু তাও আবার সবাই পায়নি।
কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে বেশকিছুক্ষণ পরে বাংলা প্রশ্নপত্র ফোটোকপি করে এনে দেওয়া হয় কিন্তু তাও আবার সবাই পায় না
একদিকে যখন পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনও রকম অসাধু উপায়ের অবলম্বন করতে না পারে তাই সিবিএসি-র তরফ থেকে নির্দেশিকা জারি করে পরীক্ষার্থীরা কী পরে পরীক্ষা দিতে যাবে বা কী কী নিয়ে যেতে পারবে না জানিয়ে দিয়েছিল তখন সেই পরীক্ষাতেই প্ৰশ্নপত্র পৌঁছচ্ছে না। এ ছাড়াও জানানো হয়েছিল যে সবকটি কেন্দ্রে বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরা। পরিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে নয় হাত-পা গুটিয়ে প্ৰশ্নপত্রের অপেক্ষায় বসে ছিল, নয়ত তাঁদের হাতে কয়েকটি প্রশ্ন তুলে দিয়ে বলা হয় তাঁরা যেন নিজেদের মধ্যেই প্রশ্নপত্র বিনিময় করে পরীক্ষাটা চালিয়ে নেয়। সিবিএসই-র এহেন অবস্থা দেখে একটাই কথা মাথায় আসে - বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।
কলকাতা, হুগলী সহ বেশ কয়েকটি জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে
গত বছরেও বাংলা প্রশ্নপত্র নিয়ে একটা গোলমাল বাধে যখন বাংলা প্রশ্নের সঙ্গে ইংরেজি প্রশ্নের অমিল পাওয়া যায় এবং বাংলা প্রশ্নপত্র তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি কঠিন করা হয়। পর পর সবকটি ঘটনায় সিবিএসই-র পক্ষ থেকে চূড়ান্ত গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। এই ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এটাই প্রমাণ করে যে কর্তৃপক্ষ বাংলা সহ আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে একেবারেই যত্নশীল নয় এবং ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীরা আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা দিতে আশঙ্কাগ্রস্ত হয়ে পড়বে।