মোবাইল ফোন থেকে কানের দুল ও মাথার ফুল: নিটে অনিয়ম রুখতে কড়াকড়ি সিবিএসসির
পুরুষদের পরতে হবে হাফহাতা জামা, শাড়ি পরতে পারবেন না মহিলারা
- Total Shares
ডাক্তারিতে অভিন্ন প্রবেশিকা বা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট) পরীক্ষা শুরুর আগেই থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কড়াকড়ি সকলের নজর কেড়েছে। এই পরীক্ষা নিয়ে সম্প্রতি কাগজে একটা খবর দেখলাম। পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনও রকম অসাধু উপায় অবলম্বন করতে না পারেন তাই সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-র তরফ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা কী কী নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না তার একটা তালিকা দেওয়া রয়েছে নির্দেশিকাটিতে। এমনকি মহিলা বা পুরুষ পরীক্ষার্থীরা কে কী ধরণের জামাকাপড় পরবেন বা ড্রেস কোড ঠিক কেমন হবে তাও রয়েছে তালিকাটিতে।
মহিলা ও পুরুষ পরীক্ষার্থী উভয়ের জন্যই পরীক্ষার হলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে হেডফোন, মাইক্রোফোন, পেজার, ব্লু টুথ, ক্যালকুলেটর, ঘড়ি, বেল্ট, পেন, পেন্সিল, ইরেজার, স্কেল, পেন ড্রাইভ, ছাপানো বা লেখা কাগজ, স্ক্যানার, হেলথ ব্যান্ড, টাকা-পয়সার ব্যাগ, হাতঘড়ি, টুপি, রোদ চশমা, ক্যমেরা, আংটি, বড় বোতাম, ব্রোচ, ব্যাজ ও গলার হারের মতো বিভিন্ন জিনিস।
পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইলফোন নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না, চলবেনা ফুল-হাতা জামাও
পুরুষ পরীক্ষার্থীরা ফুলহাতা জামা পরতে পারবেন না, তাঁদের হাফহাতার জামা পড়তে হবে। কোনও ধরণের বন্ধ জুতো পরা যাবে না, তাঁদের চপ্পল পরতে হবে। জিন্স, এবং অন্য পোশাক পারা যাবে, কুর্তা-পাজামা পড়ে পরীক্ষা দিতে আসা চলবে না।
মহিলা পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যেমন শাড়ি পরা যাবে না তেমনই মাথায় ফুল গোঁজা যাবে না, চুড়ি পরা বা মাথায় কাঁটা-ক্লিপ জাতীয় কিছু লাগানো চলবে না। কোনও বড় ধরণের চামড়ার ব্যান্ড ব্যবহারকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জুতোর মধ্যে হালকা চপ্পল চলবে, হাইহিল জুতো পড়া নিষিদ্ধ।
এছাড়াও বিভিন্ন খাবারদাবারের উপরেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আমরাও যখন ছোটবেলায় পরীক্ষা দিতে যেতাম তখন সঙ্গে পেন-পেন্সিল ও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কয়েকটি অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে রাখতে পারতাম না। কিন্তু টুকলি রুখতে বা অন্য কোনও অসাধু কার্যকলাপকে রুখতে এ বছরের নিট পরীক্ষাকেন্দ্রে ফুল, শাড়ি কিংবা জুতোর মতো কয়েকটি জিনিসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পেছনে সম্ভাব্য কারণ কী একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক তাহলে।
আমরা অনেকেই সঞ্জয় দত্ত অভিনীত 'মুন্নাভাই এমবিবিএস' সিনেমাটিতে দেখেছিলাম কী ভাবে একটি ছোট্ট ইয়ারফোনের সাহায্যে মুন্নাভাই পরীক্ষায় নকল করে ডাক্তারি পরীক্ষায় পাস করেছিল। ওটা ছিল নিছক একটা সিনেমা, কিন্তু এ বছরের নিটে যদি কোনও পরীক্ষার্থী এ ধরণের কিছু করেন তাহলে তাঁর পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হবে।
আমরা সবাই জানি যে বিশেষ কয়েক ধরনের বৈদ্যুতিন যন্ত্র যেমন মোবাইলফোন ও পেজারের সাহায্যে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে যোগাযোগ করা সম্ভব।
অসাধু উপায় রুখতে সিবিএসি-র নির্দেশিকা
আজকাল প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন ধরণের রোদ চশমা বা সাধারণ দেখতে চশমা দিয়েও এই ধরণের হাইটেক পদ্ধতিতে নকল করা যাতে বন্ধ করা যায় তাই গগলস (Googles) পড়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া যাবে না। ঠিক যেমন বিমানবন্দরে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয়, ঠিক তেমন ভাবেই এখানেও যে কোনও ধরণের মেটাল বা ধাতু শরীরে থাকলেই কিন্তু শরীরে তল্লাশি করার জন্য যে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হয়, তাতে ধরা পড়ে যাবে এবং সেটি শব্দ করে সতর্ক করে দেবে। তাই আমার মনে হয় যে কোনও ধরণের ধাতু, তা সে নাকে সোনার নাকছাবি বলুন বা শাড়িতে লাগানোর ব্রোচই বলুন, সব কিছুই নিষেধের তালিকায় রাখা হয়েছে। যদিও বিমানবন্দরে সন্ত্রাস রুখতেই এতটা কড়াকড়ি ভাবে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয়ে থাকে।
বড় বোতামওয়ালা জামাকাপড় পরতে বারণ করা হয়েছে, এর কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, অনেক সময় এই ধরণের বোতামে বিভিন্ন ছোট যন্ত্র বসিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে উপর থেকে কিছুই বোঝা যায় না। এগুলোকে 'স্পাইং-যন্ত্র' বলা হয়। একই ভাবে অনেক সময় চাবির-রিংয়ের মধ্যেও এই ধরণের যন্ত্র বসানো যেতে পারে।
ভারী বা বন্ধ জুতো ব্যবহার করতে বারণ করা হয়েছে, কারণ জুতো বন্ধ হলে তার মধ্যে কোনও কাগজের টুকরো বা অন্য কোনও যন্ত্র ঢুকিয়ে রাখা সম্ভব। একই কারণে মহিলাদের হাইহিল পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
কোনও ছাপা বা লেখা কাগজ নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না
মহিলা পরীক্ষার্থীরা শাড়ি পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারবেন না। এখানে ব্যাপারটা এই ভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় শাড়ির মধ্যে সেফটিপিন বা ব্রোচ জাতীয় ধাতু থাকে যেগুলো মেটাল ডিটেক্টরে সহজেই ধরা পরে। আবার অনেক সময় ব্রোচের মধ্যেও ছোটখাট যন্ত্র লুকিয়ে রাখা যায়। তাই হাতের চুড়ি পরতে বারন করা হয়েছে।
চুলের ক্লিপ ও রবারের ব্যান্ড ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদিও কাপড়ের ব্যান্ড ব্যব্যহার করলে তেমন কোনও অসুবিধা নেই কিন্তু যদি রবারের মধ্যে কোনও ধরণের ধাতুর ব্যবহার হয়ে থাকে তাহলে সেটা ডিটেক্টরে ধরা পড়ে যাবে। মহিলা পরীক্ষার্থীরা মাথায় বা শরীরের অন্য কোথাও ফুল লাগাতে পারবেন না। প্রাকৃতিক ফুল ব্যবহার করলে কোনও রকম অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কিন্তু অনেক সময় কৃত্রিম ফুলে ধাতু জাতীয় যন্ত্র বসানো যেতে পারে। তাই এই নিষেধাজ্ঞা।