স্বামী আমার উপরে চরম নিপীড়ন করলেও বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য লোকে আমাকেই দায়ী করে
আদালত আমার আবেদন মঞ্জুর করেলও, বিচ্ছেদের মামলায় দোষী করা হল আমাকেই
- Total Shares
"তুমি নিজের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করেছিলে। তাই অভিযোগ না করে নিজেই এখন সমস্যা সামলাও।"
আমি যখন আমার মা-বাবাকে জানাই যে আমার স্বামী আমাকে প্রত্যেক রাতে আমাকে ধর্ষণ করে, তখন তাঁরা এই কথাটাই বলেছিলেন।
“দেখ বাবা, বিয়ের পর ধর্ষণ বলে কিছু হয় না। তোমরা দু'জনেই বিবাহিত, সমাজ তোমাদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার অধিকার দিয়েছে। তোমার শরীরের উপর তোমার স্বামীর অধিকার এখন সমাজ-স্বীকৃত।" আমার সঙ্গে যা ঘটেছে সেটা শুনে গায়নোকোলজিস্টও আমাকে এই কথাটাই বলেছিলেন।
“ধর্ষণ? এই অভিযোগের ভিত্তিতে কী ভাবে একটা মামলা দায়ের করব? উনি তো আপনার স্বামী? এ ভাবে কী কোনও মামলা দায়ের করা যায়?"আমি যখন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে যাই তখন পুলিশ আমাকে এই কথাটা বলেছিল।
“আমি দুঃখিত, আমি খুব দুঃখিত, খুবই দুঃখিত। আপনার সঙ্গে যা ঘটছে সেটা ভুল, কিন্তু স্বামী ধর্ষণ করলে আইন কিছু করতে পারে না। খুব জোর আমি একটা আবেদন দায়ের করতে পারি এই বলে যে আপনার স্বামী আপনাকে যন্ত্রণা দিচ্ছে ও আপনার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন, তারপর যদি যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তা হলে সেই ভিত্তিতে হয়ত ওঁর সাজা হতে পারে। নয়ত, আমরা একটা পারিবারিক নির্যাতনের মামলাও দায়ের করতে পারি এবং এর মাধ্যমে আলাপ আলোচনার করে ব্যাপারটার মীমাংসা করা যেতে পারে। অথবা আরও সহজ উপায় হল বিবাহ বিচ্ছেদ।"
আমি যখন আইনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমার উকিলের কাছে যাই, তিনিও আমাকে এই একই কথা বলেন।
রায়ে আমাকেই দোষী সাব্যস্ত করা হল
“এটা পরিষ্কার একটা বৈবাহিক জীবনে অসাচ্ছ্বন্দের মামলা। এই দম্পতি আর একসঙ্গে থাকতে পারছেন না। স্বামী যে স্ত্রীর উপর নির্যাতন করেছেন তার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্ত্রী নিজেকে শারীরিক মিলনে অক্ষম বলে মনে করেন কিংবা মিলনকালে স্ত্রী ঠিকমতো সাড়া দিতে পারেন না। দম্পতির মধ্যে কোনও রকম সমঝোতার আর কোনও অবস্থা নেই তাই এই বিবাহ বিচ্ছেদের রায় মঞ্জুর করা হল।"
আসল কথাটা কেউ জানতে চাইল না
এটাই আমার বিবাহবিচ্ছেদের রায়ে লেখা ছিল।
কিন্তু কেউ এই কথাটা জানল না যে রাতের পর রাত আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। আমি বারণ করা স্বত্বেও আমার স্বামী আমাকে জোর করে ধর্ষণ করত। ঋতু চলাকালীন সময়ে আমি যখন যৌন মিলন চাইতাম না, তাতেও আমার স্বামী কোনও রকম কর্ণপাতই করতেন না। মোমবাতি থেকে শুরু করে পেনের খাপ এমনকি একবার সে একটা পয়সা দিয়েও আমাকে নির্যাতন করার চেষ্টা করেছিল। আমার সারা শরীর জুড়ে সে নিপীড়ন করত। আমরা কোনও পার্টিতে গেলেও আমার স্বামী আমাকে বাথরুমে টেনে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার চালাত, কখনও কোনও বন্ধুর বাড়িতে গেলে আমার স্বামী খুব নাটকীয় ভাবে তাঁদের বলত যে সে আমাকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না তাই সেই মুহূর্তেও তাঁর আমাকে পেতে ইচ্ছা করছে - তাই আমাদের বন্ধু কী কিছুক্ষণের জন্য আমাদের একটা ঘর ছেড়ে দিতে পারেন?
আমার স্বামীর এই ধরণের কার্যকলাপকে আমার প্রতি তাঁর অসম্ভব প্রেম ও আবেগের সমতুল্য মনে করা হত, তাই সবাই আমাকে চুপ করে থাকতে বলত ও এও বলা হতো আমি যেন অভিযোগ না করি। আমার স্বামী তাঁর বন্ধুদের আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসত যাতে তাঁরা আমার স্বামীর আমার সঙ্গে করা বিভিন্ন কার্যকলাপের ভিডিও তুলতে পারে। আমি যখন এতে সায় দিতাম না তখন সে আমাকে টেনে হিচড়ে আমার জামাকাপড় ছিড়ে ফেলতে থাকত যতক্ষণ না আমি তাঁর কথায় রাজি হতাম। যখন জানতে পারি যে আমি বেশ কয়েক সপ্তাহ অন্তঃসত্বা তখন বাচ্চার দায়িত্ব এড়াবার জন্য আমার স্বামী আমাকে মিফেপ্রিস্টন ও মিসোপ্রোস্টল খেতে বাধ্য করে। এই দুটো ওষুধ গর্ভপাতের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আমার হাতে তোমার নাম লেখা
একটা বিয়ে যাতে সুখের ও চিরস্থায়ী হয় তাই আমাদের সংস্কৃতি অনুসারে বিয়ের সময় হাতে মেহেন্দি করার সময় স্বামীর নাম লেখা হয়। আজ আমি আমার শূন্য হাতের পাতাটার দিকে যখন তাকাই তখন মনে পড়ে সেদিনটার কথা যেদিন অনেক হাসি-ঠাট্টার ও আশা নিয়ে খয়েরি মেহেন্দি দিয়ে আমার হাতেও আমার স্বামীর নামটা লিখে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কী করে বুঝব যে যে মানুষটার প্রেমে পড়েছিলাম, যাঁকে ভালোবেসেছিলাম সে একটা পিশাচ? আজ আমি ওই খয়েরি রংটার দিকে দেখি যে রংটা আর কখনও ধুয়ে যায়নি।
আজ সবাই ভাবে আমার স্বামী আমার প্রেমে পাগল ছিল আর আমি এমনই এক নারী যে তার স্বামীকে ভালোবাসত না। কেউ আসল কথাটা জানতে চাইল না।
(পরিচয় গোপন রাখার জন্য কারও নাম ব্যবহার করা হয়নি)
(এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় Bonobology.com-এ)
লেখাটা ইংরেজিতে পড়ুন