ঠেক থেকে সরাসরি: প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতরত্ন
জওহরলাল নেহরু কি নিজেই নিজেকে ভারতরত্ন দিয়েছিলেন?
- Total Shares
“তা হলে প্রণব মুখার্জি ভারতরত্ন হয়ে গেলেন। এখন আরও একজন বাঙালি ভারতরত্ন।”
২৬ জানুয়ারি সকাল। বাঙালি প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতরত্ন হয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এর চেয়ে বড় খবর আর কী হতে পারে! সে যাই হোক, কানুদার কথাটি ঠিক পছন্দ হল না অমলদার। তিনি বললেন, “তারাশঙ্কর-বিভুতিভূষণ নয়, প্রণব মুখার্জি ভারতরত্ন। স্রেফ পলিটিক্স।”
-- ঠিক আছে, বিজেপি তো আর আডবাণীকে ভারতরত্ন দেয়নি, দিয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেসিকে।
-- হ্যাঁ, প্রাক্তন কংগ্রেসিই বটে, উনি তো এখন আপনাদের আরএসএসের অনুষ্ঠানে যাতায়াত শুরু করেছেন।
-- আমাদের আরএসএস কেন হবে, তা ছাড়া আপনাদের জ্যোতি বসু তো বিধানসভায় ক্রসভোটিং করিয়ে ওনাকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছিলেন। যোগ্য লোক, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল, হতে পারেননি, রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। উনি পাবেন না তো কে পাবেন?
-- প্রধানমন্ত্রী হলেই ভারতরত্ন পাবে? কিছু না করলেও পাবে?
-- পেলে অসুবিধাই বা কী? বারাক ওবামা নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারে, শান্তি বজায় থাকবে ধরে নিয়ে, আর দেশের জন্য কাজ করে ভারতরত্ন পেলেই দোষ!
অমলদা আর কানুদার তর্কে এবার যোগ দেয় হালকা মেজাজের লালটু, “বারাক ওবামা না হয় কিছু করেছেন। মালালা ইউসুফজাই কেন নোবেল পেল? গুলি খেয়ে বেঁচে গেছে বলে? তা হলে তো খগেনেরও নোবেল পাওয়ার কথা।”
“খগেন কে?” -- প্রশ্ন করেন কানুদা।
“খ-গে-ন, অগ্নিশ্বর পড়েছেন তো, বনফুল, মানে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের লেখা। সেটা নিয়ে তো অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় সিনেমাও করেছেন। মনে নেই, সেই মুখে জরুলওয়ালা লোকটাকে উত্তমকুমার বদলে দিল... পরে এসপি না কি পুলিশের ডিজি হল... সেই খগেন...”
“থামো তো... কোনও একটা সিরিয়াস আলোচনা হলে বাজে বকা তোমার স্বভাব হয়ে গেছে।” – লালটুকে থামিয়ে দেন অমলদা।
তবে সে থামার পাত্র নয়, “এই যে রাজীব গান্ধী ভারতরত্ন পেলেন, কেন পেলেন? আত্মঘাতী হামলায় দেশের প্রথম শহিদ বলে। তাঁর মা ইন্দিরা কেন পেলেন? বা ধরুন জওহরলাল, মানে ইন্দিরার বাবা। তিনি তো নিজেই নিজেকে ভারতরত্ন দিলেন। ভারতরত্নের জন্য তো রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করেন প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা!”
অমলদা গম্ভীর ভাবে বলেন, “বিজেপি-মার্কা ইতিহাস বন্ধ কর তো! নেহরু যখন ইউরোপ সফর করে, বিশেষ করে সফল ভাবে রাশিয়া সফর করে দেশে ফিরলেন তখন রীতি ভেঙে বিমানবন্দরে তাঁকে আনতে যান রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ, তিনিই ঘোষণা করেন যে মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া ও প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ ছাড়াই তিনি জওহরলাল নেহরুকে ভারতরত্নের জন্য মনোনীত করেছেন। আর এই যে এম বিশ্বেশ্বরায়ার নামে স্টেশনের নামকরণ হল, বিজেপি প্রচার করল, তাঁকে তো ভারতরত্ন দিয়েছিল নেহরু-সরকারই।”
লালটুও দমে যাওয়ার পাত্র নয়, “ছাড়ুন তো আপনার ভুলভাল ইতিহাস। যে দিন জওহরলাল বিদেশ সফর করে ফিরলেন, সে দিন তো বিমান বন্দরে প্রচুর লোক জড়ো হয়েছিলেন। এমনি এমনি? কেউ কিচ্ছুটি জানতেন না? আসলে তখন এ রকম মিডিয়া ছিল না। তা ছাড়া গোবিন্দবল্লভ পন্থ কী এমন ঘটালেন যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকতে থাকতেই তাঁকে ভারতরত্ন দিতে হল? আপনারা তো বলেন জ্যোতি বসুকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব হলে তিনি ফিরিয়ে দিতেন। ভারতের জন্য কী করেছেন যে ভারতরত্ন দেওয়া হবে?”
শ্যামল উঠতি তৃণমূল। তার বক্তব্য, “সব বিএসপি কাঁসিরামের জন্য ভারতরত্ন চাইছে, শিবসেনা চাইছে সাভারকরের জন্য। তা হলে জ্যোতি বসু কেন নয়?”
লালটুর জবাব, “তোরা তো এবার দিদির জন্যও চাইবি। শোন, আঞ্চলিক রাজনীতি আর ভারতরত্ন এক নয়। সিভি রমন আর দিদি-দাদারা এক নন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্য দাবি করলে তার একটা যুক্তি হয়, সেই মাপের হতে হবে।”
শ্যামল বলে, “তা হলে তো শচিন তেণ্ডুলকরেরও পাওয়া উচিত নয়!”
-- নয় তো। কেন পাবে?
-- তা হলে তুমি পাবে?
-- আমি কেন পাব, ধ্যানচাঁদ পেতে পারে।
লালটুর দিকে তাকিযে কানুদা বলেন, “বাজপেয়ীর ভারতরত্ন পাওয়া নিয়ে তোর কী বক্তব্য?”
“কোনও বক্তব্য নেই। যে যখন ক্ষমতায় আসবে সে তখন দলের লোককে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে দেবে, এটা কোনও মাপকাঠি হতে না। তা হলে ইংল্যান্ডের প্রত্যেক প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর নাইডহুড পাওয়া উচিত আর ফ্রান্সের প্রত্যেক রাষ্ট্রপতির লিজিয়ন অফ অনার।”
কানুদার ফের প্রশ্ন, “প্রণব মুখার্জিকে নিয়ে বল, বাঙালি হিসাবে।”
লালটুর জবাব, “দেখুন কানুদা, ভারতরত্নটা ভারতের ব্যাপার, বাঙালি-বিহারির ব্যাপার নয়। তাও বলতে পারি, যদি পন্থ পেতে পারেন, রাজীব গান্ধী পেতে পারেন তা হলে প্রণব মুখার্জিও পেতে পারেন।”
অমলদা এতক্ষণ শুনছিলেন। এ বার বললেন, “শ্যামল, তোরা তো রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময় প্রথম থেকে প্রণব মুখার্জির বিরুদ্ধে ছিলিস। এখন কেন বাঙালি প্রধানমন্ত্রী, বাঙালি প্রধানমন্ত্রী করে চিল্লাচ্ছিস?”
শ্যামল বিরক্ত হয়ে বলে, “আপনাদের মতো ঐতিহাসিক ভুল করব না বলে।”
অমলদা অবশ্য এ বার রাগলেন না, “আমরা তো না হয় এখনও কেরলে আছি। তোরা কবে ইতিহাস হয়ে যাবি সেটাই ভাবছি। সম্বল তো একটা রাজ্য।”
এ বার শ্যামলের হাসি মুখ, “ত্রিপুরায় আপনারা হারার পরে একটা জব্বর জোক শুনেছিলাম – কেরল সিপিএম: আমাদের কোনও শাখা নেই।”