নিটের গেরো ভাবাচ্ছে মুখমন্ত্রীকেও তাই তিনিও বাংলাতেও প্রশ্ন চান

যাঁরা ফটোকপি করা প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন তাঁদের 'কোড নম্বর'-এর সমস্যা হলে রেজাল্ট পাবেন না

 |  4-minute read |   12-05-2018
  • Total Shares

ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট) পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র বিলির অনিয়ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছেন। বহু ছাত্রছাত্রী যাঁদের বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তাঁরা প্রশ্নপত্র পাননি তাই সমস্যার পড়েন পরীক্ষার্থীরা। সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন যে সব প্রশ্নপত্র বাংলা ভাষায় করা হোক।

বিজেপি সরকার ২০১৬ সালে ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (নিট) চালুর জন্য সুপ্রিমকোর্টে আর্জি জানাই এবং সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে এ বিষয়ে ছাড়পত্র দেয়। এরপর সরকার মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) আইনের সংশোধনী পার্লামেন্টে পাশ করে এবং পাকাপাকিভাবে নিট চালু করে দেয়।

২০১৬ সালে পরীক্ষার ঠিক এক থেকে দেড় মাস আগে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় যে আবার চালু হবে। আমরা ওই সময় এর বিরোধিতা করি। আমাদের বক্তব্য ছিল যে এভাবে পরীক্ষার মাত্র এক মাস আগে হটাৎ এই ঘোষণা হলে পরীক্ষাথীদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে। তাছাড়া হটাৎ করে কেন্দ্র সরকার কারও মতামত না নিয়ে এই ধরণের একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসসি) বোর্ডকে অন্যান্য বোর্ডের উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। তাছাড়া আমরা এও বলেসিগিলাম যে নিটই একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করতে আমরা রাজি ছিলাম না, রাজ্য স্তরেও কোনও ডাকতাটির প্রবেশিকা পরীক্ষা হওয়াটা অতন্য বাঞ্চনীয়।

neet_body_051218063041.jpgগত বছর বাংলা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল ৩৪,৪১৭ আর এবছর সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছিল ২৭,৪৩৭-এ

২০১৬ তে যখন জয়েন্ট এন্ট্রাস বাতিল হয় নিট চালু হল তখনই আমরা বলেছিলাম যে এতে ছাত্রছাত্রীদের প্রচন্ড সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। বিরোধিতা করে আমরা স্বাস্থ্য ভবনে প্রতিবাদ জানাতে গেলে সেদিন পুলিশ আমাদের ওপরে এলোপাথারি লাঠিচার্জ করেছিল। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী এই ইসুতে এতো দিন পর সরব হয়েছেন। সেদিন আমরা যে আশঙ্কাটা করেছিলাম সেটাই কিন্তু আজ ঠিক বলে প্রমানিত হল। তখন যদি সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা কড়া ভাষায় বিরোধিতা করতেন তাহলে হয়ত আজ এই ইংরেজি ও হিন্দি মাধ্যমের এতটা বাড়াবাড়ি থাকত না।

কিন্তু সর্ষের মধ্যেই তো ভূত লুকিয়ে আছে। এই যে এবার পরীক্ষার আগে নিট কর্তৃপক্ষ ড্রেস কোড থেকে শুরু করে এমন কী পরীক্ষার্থীর দাঁত কি ধাতু দিয়ে বাঁধানো সেটাও মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে ধরা পরে যাচ্ছে বলে সেই পরীক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে হলে সধুক্তে দেওয়া হয় নি, সি সব বাহুল্য দেখা গিয়েছে সেটা শুধু ঢক্কা-নিনাদের মতোই।

আমরা আগেই যেমন জেনেছি যে ৬ মে যে নিট পরীক্ষা হয়ে গেলো সেখানেও কিন্তু বাংলা প্রশ্নপত্রকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়তে হয়েছে, কারণ যাঁরা বাংলা প্রশ্নপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তাঁদের কাছে পৌঁছলো না বাংলা প্রশ্নপত্র। রাজ্যের বেশ কয়েকটি পরীক্ষাকেন্দ্রে কিন্তু এই ঘটনা ঘটে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের প্রচণ্ড সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আবার কয়েকটি কেন্দ্রে ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি-হিন্দি প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়, আবার কোথাও তড়িঘড়ি কয়েকটি বাংলা প্রশ্নপরের কয়েকটি ফটোকপি করে এনে দেওয়া হয়। কয়েকটি কেন্দ্রে তো বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে একটি প্রশ্নপত্র দিয়েই কাজ চালাতে বলা হয়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের আতান্তরে পড়তে হয়।

যাঁরা প্রশ্নপত্র পেলেন না এবং একটা প্রশ্নপত্রকে অনেকেকের মধ্যে ভাগ করে নিতে হল বা যাঁরা ফটোকপি করা প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন তাঁদের ক্ষেত্রে তো 'কোড নম্বর'-এর সমস্যা দেখা দেবে। এর ফলে তো এদের রেজাল্টই বেরোবে না এবং ওয়েবসাইটে রেজাল্ট 'নট এভেলএবল' দেখাবে। তার দ্বায়িত কে নেবে?

এবার মজার ব্যাপার হল যাঁদের হাতে অবশেষে প্রশ্নপত্র পৌঁছে ছিল তাঁদের তো প্রশ্ন পরে মাথায় হাত। প্রশ্নপত্রে 'সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার'কে 'সেরিব্রাল হেমিসটাঙ' পড়াসংবর্ত নালিকা হয় গেছে 'পড়সংবর্ত নালিকা'।

neet_body1_051218063123.jpgএই বৈষম্যের ফলে যারা আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা দিল তাদের মেধা, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেধাতালিকায় পিছিয়ে গেল

যাঁরা ইংরেজির থেকে বাংলায় তর্জমা করেছেন তাঁরা কিন্তু যথেষ্ট যত্নশীল ভাবে কাজটা করেন নি। তাঁরা কোনও রকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই শুধু মাত্র ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে গেছেন।

প্রশ্নপত্রের একদম উপরে লেখা ছিল যে যদি আঞ্চলিক প্রশ্ন নিয়ে কোনও রকম দ্বন্দ্ব হয় তাহলে ইংরেজি প্রশ্নকেই যেন চূড়ান্ত বলে ধরা হয়। আমার মনে হয় এভাবে ইংরেজি ভাষাটিকে মাতৃভাষাগুলির উপরে একরকম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়েছে আর যদি তাই হয়েথাকে তাহলে সবাইকে গ্রেস নম্বর দিতে হবে কিংবা প্রশ্নপত্র বাতিল করতে হবে।

আঞ্চলিক ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে এটা একটা পরিকল্পিত চক্রান্ত। দেখা গেলো এবারেও ঠিক সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। এবারেই ইংরেজি ও বাংলা প্রশ্নপত্রে থেকে গেলো বিস্তর ফারাক। ফলে 'এক দেশ-এক পরীক্ষা' র স্লোগান যে গ্যাস বেলুন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে সরকার প্রণীত এই ওয়ান নেশন, ওয়ান এক্সামিনেশন নীতি পরিগণিত হলো বৈষম্য বাড়ানোর নীতিতে।

তাই আমার মনে হয় গত বছরেই অনেক ভুলছিলো বাংলা প্রশ্ন তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি কঠিন হয়েছিল আর তার ফল এবার আমরা হাতেনাতে পেয়েছি, গত বছর বাংলা পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল প্রায় ৩৪,৪১৭ ছাত্রছাত্রী আর এবছর সংখ্যাটা এসে দাঁড়িয়েছিল ২৭,৪৩৭-এ। ছেলেমেয়েরা একটা 'ফোবিয়া' বা একটা ভয় ভুগছেন। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংখ্যাটা আর দুয়েক বছরের মধ্যে গিয়ে ১০,০০০ ঠেকবে।

আর এই বৈষম্যের ফলে যারা আঞ্চলিক ভাষায় পরীক্ষা দিল তাদের মেধা, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মেধাতালিকায় পিছিয়ে গেল, কেউ কেউ আবার ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হলো। আর সুযোগ পেল উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা, যারা বেসরকারি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR. KABIUL HOQUE DR. KABIUL HOQUE

WB STATE COMMITTEE MEMBER, ALL INDIA DSO

Comment