মালদার দুই কংগ্রেস সাংসদকে দলে টানলে কতটা লাভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
প্রাদেশিক দলগুলোর সঙ্গে জোটের সলতে পাকাচ্ছে কংগ্রেসও
- Total Shares
পাঁচ বছর আগের কথা। যে সব পঞ্চায়েতে তৃণমূল জিততে পারেনি, সেই সব পঞ্চায়েতও তারা দখল করে নিয়েছিল। কারণ রাজ্যের উন্নয়ন দেখে সেই সব পঞ্চায়েতের সদস্যরা সদলবলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটেও অন্য দলের প্রতীকে ভোটে প্রার্থী হয়ে, শেষ পর্যন্ত ভুল বুঝতে পেরে অনেকেই রাজ্যের শাসকদলের ঝান্ডা নিয়ে ভোট প্রচার করেছেন। প্রশ্ন হল, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কী হবে।
গনি খান চৌধুরীর গড় বলে পরিচিত মালদহের আসন দখল করার জন্য সেখানে দুই কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর ও আবু হাসেম খান চৌধুরীকে (ডালু) দলে টানতে আগ্রহী তৃণমূল। গত নির্বাচনে মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে এই কেন্দ্রে চতুর্মুখী লড়াইয়ে প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী বিপুল ভোটে জিতেছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। চতুর্থ স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
মালদহ উত্তরের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর
মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থীর চেয়ে বিজয়ী কংগ্রেস প্রার্থী মৌসম বেনজির নূরের জয়ের ব্যবধান ছিল পঁয়ষট্টি হাজারেরও বেশি ভোট। বেনজিরের চেয়ে প্রায় দু-লক্ষ ভোটের ব্যবঘানে তৃতীয় স্থানে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
মালদহ জেলায় ধর্ম হিসাবে মুসলমানের সংখ্যা বেশি, তাই এখানে বিজেপি খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না, কারণ তাদের ভরসা মূলত হিন্দু ভোট। কিন্তু সিপিএমের হিন্দু ভোটে ভাঙন ধরিয়ে তারা অন্তত কিছুটা ভোট বাড়িয়ে নিতে পারবে। এই জেলায় কংগ্রেসের সংগঠন দারুণ ভালো এমন ভাবার কারণ নেই। অর্থাৎ এখানে এখনও গনি খানের নামেই ভোট হয় এবং তাঁর পরিবারই ভোট পায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: লক্ষ্য রাজ্যের সবকটি লোকসভা আসন
কংগ্রেসের আরেক শক্ত ঘাঁটি মুর্শিদাবাদে দল ভাঙিয়ে অনেককেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ানো সম্ভব হয়েছে। মালদহেও কিছুটা তাই। তবে তার পরেও লোকসবার দুটো আসন পেতে তৃণমূলের সহজ হিসাব, দুই সাংসদকে দলে টেনে নাও! গনি খানের পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই করে লাখ দুয়েক ভোটের ব্যবধান ঘোচানো কার্যত অসম্ভব বুঝে রাজ্যের শাসকদল এই পন্থাই অবলম্বন করছে।
মোদী হাওয়ায় দেশ জুড়ে কংগ্রেস যখন ধরাশায়ী তখন মুর্শিদাবাদ ও মালদহে গড় রক্ষা করতে পেরেছে কংগ্রেস। তৃণমূলও কোনও দিনই গনি খানের পরিবারের বিরুদ্ধে হাওয়া তুলতে পারেনি। তাই গণির পরিবারকে এখন দলে ভেড়াতে তৎপর শাসকশিবির। ইতিমধ্যেই আবু কাশেমের ভাই আবু নাসের খান চৌধুরীকে (লেবু) দলে টেনেছে তৃণমূল। তিনি এখন সুজাপুরের বিধায়ক।
মালদহ দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী
ভোট ব্যাঙ্ক যে পরিবারকে কেন্দ্র করে, সেই পরিবার তৃণমূলে চলে গেলে মালদহে কংগ্রেসের অস্তিত্ব কতটা থাকবে বলা মুশকিল। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসও এখন চাইছে যে ভাবেই হোক, এই দুই সাংসদকে দলে রাখতে।
মালদহে গিয়ে এই জেলাকে বিরোধীশূন্য করার ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার পরেই জল্পনা শুরু হয়। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও অবশ্য জানিয়েছিলেন, বিজেপির জন্য সকলের দরজা খোলা। সংবাদমাধ্যমের খবর খবর অনুযায়ী, মৌসম নূর এব্যাপারে গুরুত্ব দেননি। তবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধরী যেমন চাঁচাছোলা ভাষায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিন্দা করেন, তেমন কথা কোনও দিন মৌসম নূরের মুখে শোনা যায়নি। তাই এই সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা বেড়েছে।
রাহুল গান্ধী: এখন আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট তৈরির চেষ্টায়
এ বারে যদি দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে এক জন করে প্রার্থী দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা হলে কী হবে? কংগ্রেসের দুই সাংসদকে দলে টেনে নিলে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে এক জোটে থাকতে পারবেন না। কংগ্রেস যদি অন্য প্রাদেশিক দলগুলির সঙ্গে আসন সমঝোতা করে এবং এ রাজ্যে দুটি আসনের জন্য তা না হয়, তা হলে ক্ষতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই। কারণ বিজেপি ও কংগ্রেস ছাড়া অন্য কোনও আঞ্চলিক দলের পক্ষে স্থায়ী সরকার গড়ার নজির একনও পর্যন্ত নেই। ২০১৯ সালে তা হবে, এমন পরিস্থিতিও দূর অস্ত্। কংগ্রেসও প্রাদেশিক দলগুলির সঙ্গে জোটের সলতে পাকাতে শুরু করেছে।