নেতাজিকে স্মরণ করতে কেন আন্দামানে গেলেন মোদী
মোমবাতির বদলে মোবাইল জ্বালাতে বলে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
- Total Shares
ডিজিটাল ভারতে মোমের বাতি নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের বললেন মোবাইল ফোনের মশাল জ্বালিয়ে ভারতের মাটিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলনের ৭৫ বছরকে স্মরণ করতে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখাই যেখানে দস্তুর, সেখানে সেই রীতি ভাঙলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
WATCH: Prime Minister Narendra Modi while addressing a public meeting at Marina Park in Port Blair, Andaman and Nicobar Islands asks people to take out their mobile phones and switch on the flashlights as a gesture to pay tribute to Netaji Subhas Chandra Bose. pic.twitter.com/aoQFwfZrK0
— ANI (@ANI) 30 December 2018
অনুষ্ঠানে সকলের মন জয় করলেন, একই সঙ্গে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পাশাপাশি বিশেষ ভাবে স্বীকৃতি দিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদানকে, যে অবদানের স্বীকৃতি এতদিন কোনও সরকার দেয়নি।
It is important for us as a nation to be proud of our rich history and those who toiled for our freedom.The response of the people of Andaman and Nicobar islands to a decision taken by the Government must be seen to be believed! pic.twitter.com/HIWlryX7oe
— Narendra Modi (@narendramodi) 30 December 2018
শুধুই কি ভোটের কথা ভেবেই এত কিছু করছেন?
সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি আসমুদ্র হিমাচলের শ্রদ্ধা থাকলেও তাঁর প্রতি অন্য আবেগ রয়েছে ভারতের অন্তত চারটি ভূখণ্ডে – তাঁর জন্মস্থান ওড়িশা, কর্মস্থল তথা তিনি যে জায়গার মানুষ সেই পশ্চিমবঙ্গ, ভারতের যে ভূখণ্ডে তিনি স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করে দ্বীপ দুটির নাম বদল করে রেখেছিলেন স্বাধীন ও স্বরাজ, সেই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং যে জায়গার পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আজাদ হিন্দ ফৌজ আর এগোতে পারেনি সেই মণিপুর।
তাঁর কীর্তির স্মরণে আগেই প্রথা ভেঙে লালকেল্লায় দ্বিতীয় বারের জন্য জাতীয় পতাকা তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, এ বার তিনি জাতীয় পতাকা তুললেন আন্দামানে। স্বল্পমেয়াদে লাভ হল বিরোধিতা সমালোচনা করতে পারছে না, দীর্ঘমেয়াদে লাভ – নেতাজি অনুরাগীদের মন জয় করতে পারা – তিনি কিছু তো করেছেন, যে কারণেই করুন না কেন!
আন্দামানের সবচেয়ে নামী ও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকা তিন দ্বীপের নতুন নাম ঘোষণা করেছেন – নিল (Neil) দ্বীপের নাম শহিদ, হ্যাভলকের নাম স্বরাজ ও রস আইল্যান্ডের নাম বদলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু দ্বীপ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম দু’টি নাম নেতাজিরই দেওয়া। সংসদে এই নাম বদলের বিরোধিতা করাও কঠিন হবে বিরোধীদের পক্ষে।
আন্দামানে ১৫০ ফুট জাতীয় পতাকা তুলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (সৌজন্য: টুইটার)
নরেন্দ্র মোদী যদি রাজনীতি করে থাকেন, তা হলে সেই রাজনীতি করার সুযোগ অনেকেরই ছিল। শুধু সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে নয়, ১৯৯৭ সালে আলাদা ভাবে স্মারক মুদ্রা প্রকাশ হয়েছিল সেলুলার জেল নিয়েও। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ঘটা করে অনুষ্ঠান করে সে কাজ করলেন। ইউপিএ সরকারের আমলে অনেককে নিয়েই স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশ হয়েছে বেশ ঘটা করে, কিন্তু সেই তালিকায় সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন না, এ কথা সত্যি।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে স্মারক মুদ্রা প্রকাশ (সৌজন্য: নিউমিসম্যাটিক সোসাইটি অফ ক্যালকাটা)
ক্ষমতায় এসে প্রথমেই সুভাষচন্দ্র বসুর বেশিরভাগ ফাইল প্রকাশ করে দেন নরেন্দ্র মোদী। তা থেকে সংবাদমাধ্যম খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ব্রেকিং নিউজ করতে পারেনি বলে। কিন্তু সাধারণের কাছে একটি বার্তা অবশ্যই গিয়েছে যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্বন্ধে যথাসম্ভব তথ্য প্রকাশ করতে আগ্রহী নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কিন্তু নেতাজির ফাইল প্রকাশ করার রেশ এখন আর নেই, তিনি যদি নেতাজির মৃত্যু রহস্য প্রকাশ করতে পারতেন এবং সে জন্য সরাসরি কংগ্রেসকে (পড়ুন জওহরলাল নেহরুকে) দায়ী করতে পারতেন তা হলে দেশের মানুষ হয়তো উজাড় করে ভোট দিত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। সেটি এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি, তাই তিনি অন্য ভাবে নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানালেন।
সুনামির পরে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কোনও খবর সারা দেশ কি করেছে? খ্রিস্টান যাজকের মৃত্যুর খবর বাদ দিলে এক কথায় উত্তর হল এক কথায় না। সেখানে প্রধানমন্ত্রী গিয়ে পতাকা উত্তোলন করছেন (মনমোহন গিয়েছিলেন সুনামির পরে) ভারতের প্রথম স্বাধীনতার স্মরণে... এমন ঘটনা ঘটেনি, ঘটবে এমন কেউ কল্পনাও করেননি।
কিন্তু এ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতাও সম্ভব নয়, সুভাষচন্দ্র অবিসংবাদী। আর কংগ্রেসের পক্ষে বিরোধিতা করা সম্ভবও নয়, কারণ যে ব্যক্তিকে নিয়ে কথা হচ্ছে সেই ব্যক্তির অন্তর্ধানের পিছনে কংগ্রেস রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তৃণমূল এবং বামপন্থী দলগুলিও বিরোধিতা করতে পারবে না। তার কারণও অতি সরল – যে গান্ধীজির সঙ্গে প্রবল মতবিরোধে সুভাষচন্দ্র বসুকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল, সেই গান্ধীজিই সুভাষচন্দ্র বসুকে সর্বশ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক (প্যাট্রিয়ট অফ প্যাট্রিয়ট) বলে সম্বোধন করেছিলেন, আর সুভাষচন্দ্রের প্রতি প্রায় প্রতিটি বাঙালির আবেগ রয়েছে।
দুই দ্বীপপুঞ্জের জন্য বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী (টুইটার)
ভারতের দুই প্রান্তের দুই দ্বীপপুঞ্জে একটি করে লোকসভা আসন রয়েছে। সুনামির জন্য একবার খবর হয়েছিল আন্দামান, আর দেশের সবচেয়ে কম বয়সী সাংসদ পাঠানোর নিরিখে বেশ কয়েক বছর আগে খবর হয়েছিল লাক্ষাদ্বীপ। এ বার সেই দুই দ্বীপের স্টার্টআপ উদ্যোগের জন্য বিশেষ ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিবেশবান্ধব স্টার্টআপের জন্য সহায়তার কথা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী এক সঙ্গে তিনটি বার্তা দিলেন – প্রথমত দ্বীপপুঞ্জের উন্নতির জন্য তিনি তথা তাঁর সরকার ভাবিত। দ্বিতীয়ত, প্রকল্প হতে হবে পরিবেশবান্ধব অর্থাৎ পরিবেশের ভারসাম্য ও বাস্তুতন্ত্র তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সৌরপ্রকল্প চালু করার কথা বলেছেন, পরমাণু চুল্লির কথা নয়। তৃতীয়ত মেক ইন ইন্ডিয়া পৌঁছে দিতে চাইছেন দ্বীপপুঞ্জগুলিতেও অর্থাৎ দ্বীপবাসীরা বিচ্ছিন্ন নন মূল ভারতের প্রকল্পগুলি থেকে। এ ছাড়া আগেই মোবাইলে টর্চ জ্বালিয়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার বার্তা তিনি দিয়েছেন।
হিন্দুত্বের কথাও তিনি ভুলে যাননি, আন্দামানে গিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী দামোদর সাভারকরের ছবির সামনে বসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সাভারকরের ছবির সামনে প্রধানমন্ত্রী (সূত্র: পিটিআই)
লোকসভা ভোটে জোট ও রাজ্য ধরে যখন হিসাব কষতে ব্যস্ত বিরোধী দলগুলি তখন একটি করে আসন ধরে কি এগোতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? সেটা প্রধানমন্ত্রী মোদী ছাড়া হয়তো অন্য কেউ জানেন না।