এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়ায় নামী পরিবারের কয়েকজনের নাম বাদ কেন?
জাতি-ধর্ম নয়, আবেদনকারীর নথির উপরেই নির্ভর করছে নাগরিকত্ব
- Total Shares
অসমের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণের (এনআরসি) চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যে সব ভারতীয় নাগরিক অসমে বসবাস করেন, তাঁরা বিদেশি নাগরিকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাইছিলেন। নাগরিকদের ক্ষেত্রে ‘সম্ভবত বিদেশি’ গোছের শব্দ বসিয়ে এই সমস্যাকে তাঁরা আর দীর্ঘায়িত করতে চান না। তাই নীতিগত ভাবে সকলেই এনআরসির খসড়া তালিকা প্রস্তুত করাকে মেনে নিয়েছেন।
তরুণ গগৈয়ের নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস সরকারের সময়ে এ নিয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সময়েই আসুর (অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন) সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও হয়েছিল। সেই বৈঠকে এনআরসি তালিকা সংশোধন-পরিবর্ধন-পরিমার্জনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থে ও তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু হয়।
নানা কারণে পুরো প্রক্রিয়া নির্ধারিত ভাবে ও নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে সহজ ভাবে এগোতে পারেনি। তারপরেই স্থায়ী ভাবে বিদেশি নাগরিক সমস্যা সমাধানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে থেকে কাজ এগোতে থাকে এবং আদালতের নজরদারির মধ্যেই এনআরসি-র চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হয়।
আমি মেনে নিচ্ছি যে বহু মানুষের নাম এই খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। এই বিশাল কর্মকাণ্ডে এমন ঘটনা ঘটার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর জন্য কিছুটা দায়ী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার, কারণ উপযুক্ত ভাবে এ ব্যাপারে প্রচার করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারেরও উচিত ছিল রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তের মানুষকে এই বলে সচেতন করা যে অসমের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এই তালিকা সংশোধন করা হচ্ছে।
নানা কারণে পুরো প্রক্রিয়া নির্ধারিত ভাবে ও নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে সহজ ভাবে এগোতে পারেনি
আসাম অ্যাকর্ড মেনে এনআরসি তালিকা সংশোধনের ব্যাপারে জাতীয় কংগ্রেস প্রথম থেকেই সহমত। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে সব মানুষ ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে এ দেশে এসেছেন তাঁদের ভারতীয় নাগরিক বলে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত ভাবে সমর্থন জানিয়েছে আসু এবং অসম গণপরিষদও। তবে কেন্দ্রে বিজেপি পরিচালিত সরকার আসার পরে এবং এই রাজ্যেও তারা আসার পরে এই ব্যাপারটিকে সামনে রেখে তারা মেরুকরণ করতে চাইছে।
তারা বলছে যে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ মেনেই তারা এ কাজ করছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট তো আর হিন্দু ও মুসলমান নিয়ে কিছু বলেনি। নাগরিকত্ব পুরোপুরিই নির্ভর করছে আবেদনকারীদের দাখিল করা নথিপত্রের উপরে। ৩.২৯ কোটি মানুষ আবেদন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২.৮৯ লক্ষ মানুষের নাম এই তালিকায় রয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে নামী পরিবার তো বটেই, অনেক পরিবারে কর্তা তথা প্রবীণতম ব্যক্তির নাম কী ভাবে এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেল। এ ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে যে একজনেরক নাম বাদ পড়ে গেলেও তাঁদের পরিবারের বাকি লোকজনের নাম এই তালিকায় রয়েছে। কেন এটি ঘটেছে, কী ভাবে এটি ঘটেছে সেই প্রশ্ন উঠছে।
বহু সদ্যোজাতর নাম এই তালিকায় নেই এখনও তাদের যথাযথ নথি তৈরি হয়নি বলে। এ দেশের প্রকৃত নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বহু নাম চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়েছে সচেতনতার অভাবে। যাঁদের নাম বাদ পড়েছে তাঁদের বড় অংশেরই জন্ম অসমের বাইরে। তাঁদের আবেদনপত্র যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যে পাঠানো হয়ে তাকলেও সেখান থেকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই সংক্রান্ত নথি এসে পৌঁছায়নি। অর্থাৎ অন্য রাজ্যগুলি সময়মতো নথি পাঠায়নি বলেই এখনও তাঁদের নাম চূড়ান্ত খসড়ায় নেই। পশ্চিমবঙ্গ থেকেই এক লক্ষের বেশি নাম যাচাই হয়ে আসেনি।
অনেকে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কারণে সব প্রমাণ হারিয়েও ফেলতে পারেন। সে ক্ষেত্রে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে নথি জোগাড় করার বহু উপায় রয়েছে। তাঁদের অবশ্যই সব নথি জোগাড় করে ফেলতে হবে। এখনও সময় আছে নথি জমা করার। আমাদের বিশ্বাস, এই সমস্যা অচিরেই মিটে যাবে।