বিজেপির সময় শেষ হতে চলেছে, কংগ্রেস কেন আত্মবিশ্বাসী
পিসিসি প্রধান সচিন পাইলট কাউন্টডাউন ঘড়ি লাগিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে চেয়েছিল
- Total Shares
বছর পাঁচেক ধরে মহেশ শর্মা রাজস্থান কংগ্রেসের একজন তৃণমূল স্তরের কর্মী। প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে তিনি প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির দপ্তরে প্রবেশ করেন আর, দপ্তরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মন খুশিতে ভরে ওঠে।
দপ্তরের প্রধান হলঘরের লাগোয়া দেওয়ালে ঝোলানো সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীর একটি পেল্লাই হোর্ডিং আর ঠিক আর তলায় একটি ঘড়ি শোভা পাচ্ছে। ঘড়িটির বিশেষত্ব হচ্ছে যে এই ঘড়িতে রাজস্থানে বিজেপির সরকারের সময়সীমা দেখতে পাওয়া যায়। তাও আবার দিন, ঘণ্টা, মিনিট এমনকি সেকেন্ডের নির্ঘণ্ট মেনে। যেমন গতকাল একটা সময় সেই ঘড়ি জানান দিচ্ছিল ১৭৪ দিন ১২ ঘণ্টা ১১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। সময় দেখে দ্রুত একটি হিসেবে কষে ফেললেন মহেশ শর্মা। আর তারপরেই তাঁর ঠোঁটের কোণে আত্মতৃপ্তির হাসি।
কংগ্রেসের সেই কাউন্টডাউন ঘড়ি
খুশিতে ডগমগ হয়ে মহেশ শর্মা জানালেন, "রাজস্থানে নিদারুণ শাসনব্যবস্থা শেষ হতে চলেছে, এই সময়সীমার দেখানোর ফলে আমরা এই কথাটি বোঝাতে চাইছি। মাত্র আর কয়েকদিন কংগ্রেসকে বিজেপির জঘন্য নীতি ও প্রকল্পগুলোকে মেনে নিয়ে চলতে হবে। এই ভাবেই আমরা কংগ্রেস কর্মী, বেকার ও মহিলাদের অনুপ্রাণিত করতে চাইছি যে আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যের দুর্দশা শেষ হবে।" এই কংগ্রেস কর্মীর মতে, এই ঘড়ি যত বার দেখবেন, রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের এই বার্তাটাই বারংবার মনে বাজতে থাকবে।
সচিন পাইলটের উদ্যোগে এই ঘড়িটি লাগানো হয়। এর একটি পোশাকি নামও রয়েছে - 'বিজেপির করুণ শাসন ব্যবস্থার সময়সীমা।'
পাইলট বিরোধীরা অবশ্য এই ঘড়ি নিয়ে পাইলটের উদ্যেশে কটাক্ষ করে বলেন, সব কংগ্রেসি নেতারা যখন ক্যালেন্ডার দেখেন, তখন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এই ঘড়িটির থেকে চোখ সরাতে পারেন না। তিনি ঘড়ির দিকে দেখেন আর ভাবেন তিনি কবে ক্ষমতায় আসবেন।
রাজস্থান কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অর্চনা শর্মা ইন্ডিয়া টুডেকে জানালেন, "এই ঘড়িটা আদতে কংগ্রেস কর্মীদের অনুপ্রাণিত করবার জন্য। এই ঘড়ি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কংগ্রেস আবার রাজস্থানে ক্ষমতা দখল করবে এবং সেই দিনটি খুব বেশি দূরে নয়। এটা সচিন পাইলটের উদ্যোগ।"
তাঁর সময় কি সত্যিই সীমিত?
এর সঙ্গে মহেশ শর্মা কিন্তু আরও একটি কথা জানাতে ভুললেন না, "বিরোধীরা বলছে আমাদের এই ঘড়ি প্রকল্পের অন্যতম কারণ আমরা ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। এটি কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের অনুপ্রেরণার উৎস।"
আলোয়ার ও আজমের লোকসভা-সহ উপনির্বাচনগুলোর ফলাফল কংগ্রেসের মনে নতুন করে আশার আলো সঞ্চার করেছে। এই উপনির্বাচনগুলোতে বিজেপির অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। এর পরেই এই 'কাউন্টডাউন' ঘড়ির ব্যবাহার বহুচর্চিত হয়ে পড়েছে।
কংগ্রেস দপ্তরের যে কোনও সাক্ষাপ্রার্থীর কাছেই এই ঘড়ি এখন দ্রষ্টব্য হয়ে উঠেছে। আর এক কংগ্রেস কর্মী শরৎ খাণ্ডেলওয়াল বলছেন, "বিজেপি সরকারের শেষ আর কংগ্রেসের উত্থান আজ নিশ্চিত। এই ঘড়ি তো সেই বার্তাই দিচ্ছে।"
ওই ঘরের উপরে নীল কালিতে লেখা দু’লাইনের কবিতা:
"জন-জন কে স্বপ্নে হোঙ্গে সাকার, জনতা কe মিলেগা স্নেহ ঔর পেয়ার
জব কংগ্রেস কি বনেগি সরকার, ইন্তেজার হ্যায় অব কেবল..."
এই স্লোগানের তলাতেই দিন ঘন্টা মিনিট ও সেকেন্ড দিয়ে বিজেপির বিদায় ঘণ্টার সময় দেখানো হচ্ছে। ঘড়ির হিসাবে বিজেপি সরকারের সময়সীমা ছ'মাসেরও কম।
বিজেপি অবশ্য এই নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। বিজেপির আনন্দ শর্মা জানালেন, "এটা কংগ্রেসের নাটক ভিন্ন আর কিছুই নয়। তারা বরাবরই মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়াতে সিদ্ধহস্ত। আগের কংগ্রেস তো দুর্নীতিতেও সিদ্ধহস্ত ছিল।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন বসুন্ধরা রাজে ও রাজস্থান বিজেপির কাছে কঠিন লড়াই হতে চলেছে। কিন্তু বিজেপি নেতৃবৃন্দ তা মানতে নারাজ।
আনন্দ শর্মা বলেলন, "গোটা দেশ থেকে কংগ্রেসই ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে যাবে। যাঁরা মনে করছেন যে রাজস্থানে ১৯৯৮ সাল থেকে কোনও দিনও শাসক দল জিততে পারেনি তাঁদের ভুল এ বার ভাঙবে। এই রাজ্যে বিজেপি পুনরায় ক্ষমতায় আসবে।"
সময়ই এর উত্তর দেবে।