ইয়ে দোস্তি হম নেহি তোড়েঙ্গে: এখন রাহুল তেজস্বীর গলায় সেই অবিস্মরণীয় গান

অঙ্ক বিরোধী জোটের পক্ষে, কিন্তু শরিকদের নিজেদের মধ্যে কেমিস্ট্রিটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

 |  4-minute read |   06-06-2018
  • Total Shares

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট ক্ষমতায় এলে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তথা বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্রী তেজস্বী যাদব।

এর আগে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন যে ২০১৯ নির্বাচনে বিরোধী জোট ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস যদি সর্বাধিক আসন দখল করতে পারে তাহলে তিনি দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী হতে তৈরি। এই বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমসকে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তেজস্বী যাদব জানিয়েছেন, "প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাহুল গান্ধী তৈরি। তিনি যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ কথা বলেছেন। যে দল সর্বাধিক আসন পাবে সেই দল থেকেই একজনকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা উচিৎ। ২০১৪ সালেও বিজেপির নেতাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে যে দল সর্বাধিক আসন পাবে সেই দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা যেতে পারে।"

এর সঙ্গে তেজস্বীর সংযোজন, "দেশবাসী যদি প্রধানমন্ত্রী রূপে রাহুলকেই দেখতে চায় তাহলে তা কেউই আটকাতে পারবে না।"

গত বছরে গোরক্ষপুর ও ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের পর বিরোধী ঐক্য অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে। কিন্তু আরজেডির সঙ্গে কংগ্রেসের সখ্য তো সেই ইউপিএ ১-এর সময় থেকেই। তেজস্বীর বাবা লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর ছিল।

body3_060618051923.jpgলালু প্রসাদ যাদবের সঙ্গে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সম্পর্ক অতন্ত্য মধুর ছিল

লালু শুধু ইউপিএ জোটের শরিক ছিলেন না, আগস্টা-ওয়েস্টল্যান্ড চুক্তি নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে লালু তখন বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়ে বলেছিলেন যে 'সোনিয়াকে ফাঁসানোর চক্রান্ত চলছে'।

কিন্তু তাই বলে লালুকে সব সময় ভালো মনে গ্রহণ করেনি কংগ্রেস।

সুপ্রিম কোর্ট রায়দান করেছিল যে কোনও সাংসদ বা বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা হবে। ২০১৩ সালে মনমোহন সিং সরকারে পক্ষ থেকে এই রায়কে অকার্যকর করতে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। এই অর্ডিন্যান্স দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন রাহুল গান্ধী। জনসমক্ষে কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি এই অর্ডিন্যান্সকে 'ছাইপাঁস' আখ্যা দিয়ে তা 'ছিঁড়ে ফেলবার' পরমার্শ দেন।

অনেকেরই ধারণা রাহুলের এই মন্তব্যে লালুপ্রসাদ যাদবকে লক্ষ করে, কারণ তিনি সেই সময় পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় ফেঁসে গিয়েছেন। মনে করা হয়েছিল দল না চাইলেও, রাহুল কিন্তু লালুর বিরুদ্ধেই যাবেন।

body2_060618051956.jpgলালুকে সব সময় ভালো মনে গ্রহণ করেনি কংগ্রেস

এরপর, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে মোদী হাওয়ায় পরাজিত হয়ে রাহুলের মনোভাব কিন্তু অনেকটাই বদলেছে।

ওই অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে ফেলার (যা না করলে সাংসদ রয়ে যেতেন লালু প্রসাদ যাদব) সাড়ে চার বছর বাদে রাহুল নিজেই দিল্লির এইমসে চিকিৎসাধীন লালুর শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় জেল হেফাজতে থাকা লালু এইমসে ভর্তি ছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি সেই হাসপাতালে গিয়ে লালুর সঙ্গে দেখাও করে এসেছেন।

গোরক্ষপুর ও ফুলপুরে বিজেপির পরাজয়ের পর থেকেই বিরোধী জোট ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। কর্নাটক বিধানসভায় কংগ্রেস-জেডিএস জোট দিয়ে শুরু হয়েছিল। এর পর, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া উপনির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ কৈরানা আসনটি সহ ১৪টির মধ্যে ১১টি আসনে জয়লাভের পর এই বিরোধী জোট সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে গেল।

২০১৪ সালে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী, দলিত ও উপজাতি ভোটের উপর নির্ভর করে লোকসভা দখল করেছিল বিজেপি। চিরাচরিত ভাবে এরা যে দলকে সমর্থন করত তার সঙ্গ ছেড়ে বিজেপির ২৮২টি আসন নিশ্চিত করেছিল এরা।

body4_060618052054.jpgঅর্ডিন্যান্স দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন রাহুল গান্ধী

এ বার অবশ্য খেলাটা অন্যরকম হচ্ছে। মায়াবতীর বিএসপিকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করে বিরোধীরা দলিতদের ভোট নিশ্চিত করেছে। এর প্রভাব তো কৈরানা আসনেই দেখা গিয়েছে। এছাড়া তেজস্বীর নেতৃত্বাধীন আরজেডিও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর ভোট বিরোধীদের অনুকূলেই নিশ্চিত করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে তেজস্বীর দায়িত্ব বর্তেছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী নেতা অখিলেশ যাদবের উপর।

লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিহারের ৪০টি লোকসভা আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো লালুর পুত্র বিজেপি-জেডিইউ জোটকে পরাস্ত করতে চেষ্টার কোনও কসুর করছেন না। জকিহাট বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এই তরুণ তুর্কিকে সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ পরিণত বলেই মনে হয়েছে। জকিহাটে জেডিইউ প্রার্থীকে পরাজিত করেছে আরজেডি। এর পরেই তেজস্বী প্রতিটি বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং প্রতিটি নেতার নাম আলাদা করে উল্লেখ করেছেন।

উল্টোদিকে, রাহুলও এই রাজ্যের গুরুত্ব বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরে ব্যক্তিগত ভাবে তেজস্বীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। গত বছরও এই সম্পর্ক বেশ মজবুত ছিল যখন রাহুল বিহারের নেতাদের মধ্যাহ্নভোজে নিয়ে যান। তেজস্বীও রাহুলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেই মধ্যাহ্নভোজের ছবি টুইট করেন।

আরজেডির সঙ্গে এই যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব তৈরি করবার পাশাপাশি কংগ্রেস আসলে যাদব সম্প্রদায়ের ভোটকেও দখল করতে চাইছে। শুধু বিহার নয়, উত্তরপ্রদেশেও যাদবদের ভোটব্যাঙ্ক অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।

body1_060618052117.jpgরাহুল তেজস্বীর বন্ধুত্বই এখন বিরোধী শিবিরের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক

বিরোধী জোটের পাশাপাশি বিজেপি এখন নিজেদের জোট শরিকদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। মহারাষ্ট্রের পালগড়ে শিবসেনা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুও এনডিএর সঙ্গ ছেড়েছেন। সব মিলিয়ে বন্ধুত্বের পাশে রাখতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে বিজেপিকে। এমনকি রামবিলাস পাসোয়ানের মতো ছোট ছোট শরিকরাও বেশ কিছু ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।

এই পরিস্থিতিতে রাহুল ও তেজস্বীর মতো আঞ্চলিক নেতারাই বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবার গুরুত্বটা বুঝতে পেরেছেন।

প্রতিটি বিরোধী দলের নেতারাই এখন বিরোধী জোটের নেতা হতে চান। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কই ঠিক করে দেবে এই বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ। অঙ্ক এখন বিরোধী জোটের পক্ষে কথা বলছে। কিন্তু জোট শরিকদের নিজেদের মধ্যে রসায়ণটাই এখন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

রাহুল তেজস্বীর বন্ধুত্বই এখন বিরোধী শিবিরের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SAIF ULLAH KHAN SAIF ULLAH KHAN @saifizm

Deputy Editor, DailyO

Comment