নরেন্দ্র মোদীকে ঠেকাতে রাফাল কেন রাহুল গান্ধীর পয়লা নম্বর অস্ত্র

দুর্নীতিই হল এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু, কংগ্রেসও এটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে

 |  5-minute read |   13-10-2018
  • Total Shares

২০১৩ সালের লোকসভা ভোটের কথা একবার মনে করা যাক – ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী একটা ব্রত নিয়েছিলেন, তা হল দেশ থেকে দুর্নীতির সংস্কৃতি তিনি দূর করবেন।

সেখান থেকে সোজা চলে আসুন ২০১৮ সালে, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ঘোষণা করছেন যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুর্নীতিগ্রস্ত, তাই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।

এই দুই বিষয়কে যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করলে আমরা তা থেকে একটা মাত্র প্রতিপাদ্যেই পৌঁছাতে পারি, তা হল আমাদের দেশে দুর্নীতি ছিল এবং সেটিই দেশের সবচেয়ে জ্বাজ্বল্যমান ইস্যু।

অর্থাৎ আসন্ন নির্বাচনেও অন্য নির্বাচনগুলির মতো দুর্নীতিই হতে চলেছে সবচেয়ে বড় অ্যাজেন্ডা। কংগ্রেস অন্য বেশ কয়েকটি বিষয় তুললেও রাফালই হল তাদের সবচেয়ে সেরা অস্ত্র – অন্য দলগুলিও এই প্রচারে ইন্ধন জোগাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কোণঠাসা করার জন্য।

rahul-modi-story_1_101318065547.jpgসরাসরি আক্রমণ! রাহুল এখন এই ভাবেই শোধ তুলছেন (ছবি: পিটিআই)

বৃহস্পতিবার সকালে যখন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁর দলের সদরদফতরে প্রবেশ করলেন তখন রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যাঁরা তপর, তাঁরা বুঝতেই পারছিলেন যে এ বার রাফাল নিয়ে তিনি সরকারকে বিদ্ধ করবেন।

“রাহুল গান্ধী জিন্দাবাদ” স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি ওখানে উপস্থিত লোকজন চিৎকার করে বলতে শুরু করে দিলেন, “রাহুলজি, শেষকালে দেখা গেল চৌকিদারই কিনা চোর!” কংগ্রেসের কুলতিলক ভিড়ে ঠাসা কনফারেন্স রুমে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার পথে এ কথা শুনে সেই উপস্থিত ভিড়ের দিতে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্য স্থির করে দেওয়ার জন্য তিনি “দিল কি বাত” বললেন। রাহুল গান্ধী বললেন, “এখন প্রধানমন্ত্রী এক অন্য জগতে বাস করছেন। তিনি যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তিনি যে সব কথা তখান (২০১৩ সালে) বলেছিলেন, সেই সব প্রতিশ্রুতির কোনওটাই তিনি পালন করতে পারেননি। দেশের প্রধান ইস্যু হল দুর্নীতি। প্রধানমন্ত্রীর চোখের সামনেই সেই দুর্নীতি ঘটছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামেও দুর্নীতির আরোপ লেগেছে, বলা হচ্ছে তিনি নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে একটি কথাও বলছেন না। তিনি যদি কোনও অভিযোগের জবাব দিতে না পারেন তা হলে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। তবে প্রধান ইস্যু হল ইটাই (দুর্নীতি), যার উপরে ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছিলেন এখন তিনি নিজেই সেই কাজ করছেন।”

গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকারীর এই বক্তব্য স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাবে একটি বার্তাই দিচ্ছে, সেটা হল কেন এই রাফাল ইস্যু রাহুল গান্ধীর কাছে ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠছে।

আমেথির সাংসদ একের পর এক সাংবাদিক বৈঠক ও জনসভা করছেন, একই সঙ্গে টেলিভিশন মাধ্যমগুলিকে তিনি কথাও বলছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রাফাল প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করছেন। কেন কংগ্রেস এবং তাদের দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে সমস্ত বিরোধীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং কেন রাফালই তাদের মূল অ্যাজেন্ডা, সে কথা বোঝার জন্য কারও রকেট-সায়েন্স বোঝার প্রয়োজন হয় না।

আবার ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের সময়ে ফিরে যাচ্ছি।

modi-at-2_101318065620.jpg২০১৩ সালে তিনি দুর্নীতির সংস্কৃতি দূর করার অঙ্গীকার করেন, কিন্তু এখন কী অবস্থা? (ছবি: রয়টার্স)

বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী সে বার ডঃ মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার, কংগ্রেস দল এবং গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক অভিযোগ করেছিলেন।

বিজেপি ও তাদের প্রার্থীরা যখনই ইউপিএ জমানাকে নিশানা করতেন, তখনই তাঁরা বলতেন যে দুর্নীতি করা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে নেশার মতো। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী ব্রত নিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় এলেই তিনি দুর্নীতির সংস্কৃতিকে ধুয়ে-মুছে ফেলবেন।

ইতিমধ্যেই বিজেপিও তাদের প্রতিআক্রমণ সাজিয়ে ফেলেছে, তবে কংগ্রেসও তাদের ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছে – ঘোলা জলে মাছ ধরার চেয়ে তারা সরাসরি আক্রমণ করে শত্রুনিধন করার পন্থা নিয়েছে।

দলের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যে দুর্নীতিমুক্ত একটা ভাবমূর্তি রয়েছে সেই ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে কংগ্রেস।

দলের এক বরিষ্ট নেতা বলেন, “আমরা দেশের মানুষকে দেখাতে চাই যে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত নন আর তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ রয়েছে রাফাল চুক্তির মধ্যে।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জমানায় তাদের তোলা বিভিন্ন বড় বড় ইস্যুকে এখন দুর্নীতি ইস্যুর সঙ্গে যুক্ত করতে চাইছে কংগ্রেস।

কংগ্রেস যে কথা বলতে চাইছে তা হল দুর্নীতি সর্বত্রই রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার নেপথ্যেও যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশাল আর্থিক দুর্নীতি রয়েছে সেই ইঙ্গিতও তারা দিয়ে রেখেছে।

demonetisation_3_101318065703.jpgরাহুল গান্ধীর অভিযোগ, কালো টাকা সাদা করার জন্যই নোটবন্দি করা হয়েছিল (ছবি: রয়টার্স)

আরেকটা সবচেয়ে বড় ইস্যু হল কর্মসংস্থানে ব্যাপক সমস্যা – এ থেকে বিরেধী দলটি যে উপসংহারে পৌঁছেছে তা হল মোদী সরকারের ব্যর্থতার বোঝা বহন করছে দেশের সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই পণ্য ও পরিষেবা কর এবং বিমুদ্রাকরণ নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস – ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের শিল্প ভেঙে পড়ার জন্য এই দু’টি বিষয়কেই তারা খাড়া করছে – তাদের মতে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধিতে এই দুই বিষয়ও ইন্ধন দিয়েছে। রাহুল গান্ধী মনে করেন বিমুদ্রাকরণ আসলে মোদীর জমানায় আরেকটি দুর্নীতি যার ফলে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।

কৃষকদের সমস্যা নিয়েও রাহুল গান্ধী বারে বারে বলেছেন যে সরকার কর্পোরেট সংস্থাগুলির পর্যন্ত ঋণ মকুব করে, কিন্তু তারাই আবার বলছে যে কৃষিঋণ মকুব করার মতো যথেষ্ট অর্থ তাদের কোষাগারে নেই। কংগ্রেস একটা কথা প্রথম  থেকেই বলে আসছে যে মোদী সরকারের সঙ্গে কর্পোরেট সংস্থাগুলির সুসম্পর্ক রয়েছে এবং সেই কারণেই তাদের ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে – যা দুই পক্ষকেই সুবিধা করে দিয়েছে।

কংগ্রেস সভাপতি একটি নতুন কথার জন্ম দিয়েছেন, নিজের পরিকল্পনার কথা বলার সময় তিনি ‘কর্পোরেট মিসাইল’ শব্দটি ব্যবহার করে বলেছেন ‘চৌকিদার ভ্রষ্ট হ্যায়’ (রক্ষাক নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত)।

রাফাল চুক্তি দিয়ে তিনি সবেমাত্র খাতা খুলেছেন, বৃহস্পতিবার এই ইঙ্গিত দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে রাহুল গান্ধী বলেছেন, “এই রাফাল চুক্তি শুধুমাত্র একটা চুক্তি নয়। এর মধ্যে আরও অনেক চুক্তি রয়েছে। আরও অনেক তথ্য রয়েছে, যা প্রকাশিত হবে, তবে সেটা পুরোপুরি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র নিয়ে। ধীরে ধীরে সেই সব চুক্তিগুলি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে।”

সংক্ষিপ্ত সার করে রাহুল গান্ধী বলেন, আগামী দিনে আরও অনেক কিছু প্রকাশিত হবে – তা হলে রাজনৈতিক রঙ্গভূমিতে বাগযুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUPRIYA BHARDWAJ SUPRIYA BHARDWAJ

Journalist. Life is a journey, Live it, Love it.

Comment