আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রাজ্যকে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

সিপিএমের হার্মাদদের ভরসাতেই চলছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার

 |  5-minute read |   24-04-2018
  • Total Shares

সব ক্ষেত্রেই গ্রামে তৃণমূল দারুণ কাজ করেছে, চারিদিকে সমস্ত প্রকল্পে প্রথম, বিশ্বজোড়া পুরস্কার—এত সমস্ত যে ঢক্কানিনাদ তৃণমূল কংগ্রেসের ছিল, তা যে সমস্তটাই জল এবং সমস্তটাই যে মিথ্যায় ভরা, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন।

যদি একটা সরকার ভালো কাজ করে থাকে, মানুষ যদি সেই সরকারের সঙ্গে থাকে, তা হলে মনোনয়ন আটকানো, মনোনয়ন জোর করে প্রত্যাহার করানোর মতো এই রকম জঘন্য পথ তৃণমূলকে নিতে হত না। মস্তান এবং পরিষ্কার খোলা অস্ত্র নিয়ে পুলিশের সহযোগিতায়, পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নির্লজ্জের মতো তৃণমূল কংগ্রেস এ বার বিরোধীদের মনোনয়ন আটকানোর চেষ্টা করল এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছে। হাই কোর্টের হস্পক্ষেপও প্রমাণ করে দিল যে এখানে মনোনয়নের নামে একটা অরাজকতা হয়েছে।

উচ্চ আদালতের রায়ের পরেও তৃণমূল কংগ্রেসের বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ হল না যে, যে ভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকেদের প্রকাশ্যে খুন করা, মারধর করা, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা, ঘরবাড়ি লুঠ করা—কোনও কিছুই বাদ রাখেনি ওরা। সর্বক্ষেত্রে পুলিশ কোথাও তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছে, কোথাও নিষ্ক্রীয় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি পর্যন্ত নেই। পুলিশ ও প্রশাসন এতটাই লজ্জিত যে তারা এর পক্ষে-বিপক্ষে কোনও মন্তব্যই করতে রাজি হয়নি।

তৃণমূল কংগ্রেস একটা নির্লজ্জ রাজনৈতিক দল। ওদের লজ্জা-শরম বলতে কিছুই নেই। সেই কারণেই টিভিতে এইসব দৃশ্য দেখার পরে এবং সংবাদপত্রে এই সব ছবি দেখার পরেও যারা বলতে পারে কিছুই হয়নি, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি বাংলায় আর কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি, তৃণমূল কংগ্রেসের দুটো ভয়, প্রথমত বিজেপির ব্যাপক উত্থান এবং ব্যাপক জনসমর্থনের ঝোঁক বিজেপির দিকে। দ্বিতীয়ত, ওদের দলের ভিতরে গোষ্ঠীকোন্দল।

body_042418053954.jpgআমরা মনে করি রাজনীতি হল নীতির লড়াই

তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীকোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। সব নির্বাচনে তৃণমূল আগে থেকে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করে। এ বার তৃণমূল কোনও প্রার্থীর তালিকাও ঘোষণা করতে পারেনি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দু’দিন ৭ ও ৮ এপ্রিল তাদের সমস্ত প্রার্থীর মনোনয়ন ওরা করিয়ে দিয়েছে যাতে আর কেউ বিদ্রোহ করে অন্য দলের প্রার্থী না হতে পারে।তার মানে তৃণমূল কংগ্রেস দলের ভিতরে যে অশান্তির বিস্ফোরণ কী পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

গতকাল মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, বিরোধী দলের উপরে হামলা যেমন হয়েছে, তৃণমূলের উপরেও ব্যাপক হামলা হয়েছে। এর আগের দিন বারুইপুরে মহকুমা আধিকারিকের অফিসের সামনে মহিলাদের কী ভাবে পুরুষ তৃণমূল কংগ্রেসের বাহাদুর নেতারা পেটাচ্ছে।ওটা বিজেপির নামে প্রচার হলেও, ওটা কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।

কালকেও আমরা এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চিত্র অসংখ্য জায়গায় দেখেছি এবং এই গোষ্ঠীকোন্দলের ফলেই বাড়ির মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূলের জনসমর্থন শেষ হয়ে আসছে এবং মানুষের রায় নিতে তৃণমূল কংগ্রেস ভয় পাচ্ছে। যদি মানুষের রায় নেওয়ার সৎসাহস থাকত, তা হলে নির্বাচনে এই ধরনের আচরণ করত না। আমি মনে করি, হয়তো এ ক্ষেত্রে বিরোধী দল অনেক আসনে প্রার্থী দিতে পারল না। বহু আসনে হয়তো তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতবে, কিন্তু আমি মনে করি, জেতাটা ভবিষ্যতে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে কাল হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এই একই ভাবে সিপিএমও এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা, মারধর করা – যে পদ্ধতি আজ তৃণমূল কংগ্রেস গ্রহণ করেছে, সবই সিপিএমের পদ্ধতি।

সিপিএমের সেই সময়ের লুটেরা গুণ্ডারা আজ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস চালাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা করছেন সিপিএমের সেই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী, সেই ভোট মেশিনারির উপরে। সেই বাহিনীর উপরেই তাদের ভরসা রাখতে হবে আগামী নির্বাচনে জিততে হলে। সেই কারণে সেই ভাড়াটে বাহিনী, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী যারা সিপিএমকে ডুবিয়েছিল, সেই হার্মাদ বাহিনী এখন তৃণমূল কংগ্রেসে আশ্রয় নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসেরও বিসর্জনের রাস্তা প্রশস্ত করতে বলে আমি মনে করি।

আগামী ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচন কিন্তু এই ক্ষমতাহীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে না। রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে হুমকি দিয়ে, ধমক দিয়ে নিজেদের পক্ষে ওরা এনেছে, তা কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে হবে না। তখন নির্বাচন হবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে। তখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দ্বারা ভোট হবে। অর্থাৎ তখন মানুষ তাঁর গণতান্ত্রিক ধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। যে ভাবে তৃণমূল গণতন্ত্রহীনতার রাস্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমার ধারনা, প্রায় ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করার দিকেই রাজ্যকে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ এখানে কোনও আইনের শাসন নেই, পুলিশের কোনও ক্ষমতা নেই, কোনও অধিকার নেই, কোনও কিছু করণীয় নেই।

body2_042418054147.jpgহোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন গ্রাহ্য করার জন্য আদেশ দিয়েছে আদালত

পুরো তন্ত্রটাই এখন মস্তান-তন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এই সরকার এখন জঙ্গলের সাসন কায়েম করেছে পশ্চিমবঙ্গে, যা অন্য রাজ্যের কাছে একটা কলঙ্কিত অধ্যায় বলে পরিচিত হচ্ছে বলে আমি মনে করি। সব রাজ্যেই নির্বাচন হয়, কিন্তু কোথাও এইরকম কোনও রেকর্ড আছে বলে আমার জানা নেই যে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে টিকিটই দেব না, তাদের মনোনয়নের অধিকার কেড়ে নেব, কেউ মনোনয়ন দিলে বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাব...। ভারতের কোথাও এই উদাহরণ নেই। দেশের ২১টি রাজ্যে বিজেপি সরকার আছে, কোথাও এমন কোনও অভিযোগ নেই যে বিজেপির পক্ষ থেকে কাউকে মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই রাজ্য একটা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যেটা সিপিএমের ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখেছে।

এই রাজ্যের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল, তার বড় কারণ ওদের ‘বদলা নয়, বদল চাই’ স্লোগান। মানুষ এখানে শান্তি চেয়েছিল, তৃণমূলের মধ্যে শান্তি দেওয়া একটা সম্ভাবনা তারা দেখতে পেয়েছিল তাদের স্লোগানের মাধ্যমে। কিন্তু এখন রাজ্যের মানুষ দেখছে, বদল তো দূরের কথা, এখন সবটাই বদলাই রূপান্তরিত হয়েছে। সেই একই হার্মাদ বাহিনী বদলার রাজনীতি বাংলায় করে যাচ্ছে, যাতে শুধু রক্ত ঝরছে আর বাংলার মায়ের কোল খালি হচ্ছে। যে দলের কর্মীই মারা যাক, বিজেপি হোক বা তৃণমূল, সিপিএম বা কংগ্রেসের, আখেরে বাংলা মায়েরই কোল খালি হল।

আমরা চাই এই খুনোখুনি, রক্তধরার রাজনীতি বন্ধ হোক। আমরা কখনোই চাই না যে রক্ত দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হোক। কিন্তু তৃণমূল যে ভাবে সেই রক্তঝরা রাজনীতির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পঙ্গু করবার চেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে লড়াই ও জনজাগরণের কাজ আমরা লাগাতার চালিয়ে যাব।

আমরা মনে করি রাজনীতি হল নীতির লড়াই। নীতির রাজা বা সেরা নীতিই প্রতিষ্ঠিত হোক। অস্ত্র দিয়ে অরাজক অবস্থা তৈরি করে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, এটাকে কোনও ভাবেই আমরা সমর্থন করতে পারি না। তাই আমি মনে করি, প্রকারান্তরে এই নির্বাচন একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে এবং আদালতকেও বার বার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

আজ আদালত যে রায় দিয়েছে, সেটার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ভাঙড়ে যে নজন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিল হোয়াটসঅ্যাপে, আদালত সেই মনোনয়ন গ্রাহ্য করার জন্য আদেশ দিয়েছে। তার মানে এ কথা পরিষ্কার যে, মনোনয়ন যদি সঠিক হত, তা হলে হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন দেওয়ার কথা আদালত কখনও বলত না। অতএব এটাই পরিষ্কার ইঙ্গিত করছ, এখানে মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং আগামী নির্বাচনে যেটা হবে, তাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকেরা কতটা প্রচার করতে পারবে, এবং মানুষ কতটা অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে পারবে, এটাও একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই কারণে আমি মনে করছি যে প্রকারান্তরে এখানে নির্বাচনের নামে গণতন্ত্র ধ্বংসের কাজ চলছে, গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে এবং যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তা জরুরি অবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RAHUL SINHA RAHUL SINHA

National Secretary, BJP | Former WB State President

Comment