উন্নাও-কাঠুয়া ধর্ষণ কাণ্ডের কথা মাথায় রেখে কর্নাটকে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার

কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের প্রকল্পগুলোর অনুকরণে নতুন প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে ইস্তাহারে

 |  4-minute read |   06-05-2018
  • Total Shares

কর্নাটক নির্বাচনের আর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি। তারই মধ্যে ৪মে বিজেপি দলের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করল।

কাঠুয়া ও উন্নাওতে ধর্ষণ কাণ্ডের পরে দলের কিছু নেতা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বিজেপিকে। তাই এই নির্বাচনী ইস্তেহারে নারী সুরক্ষা বিষয়টি বেশ বড় করে জায়গা পেয়েছে।

body_050618044735.jpgঅবশেষে কর্নাটকে বিজেপি প্রকাশ করল নির্বাচচনী ইস্তাহার এমনিতেই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ব্যাপারে বিজেপির জুড়ি মেলা ভার। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে দলের এই স্বভাবের সঙ্গে তাল মিলিয়েই দলের কর্নাটকের নেতারাও মহিলাদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে কর্নাটকের মহিলাদের বিনামূল্যে স্মার্টফোন ও মঙ্গলসূত্র বিতরণ করা হবে। এ ছাড়াও প্রায় হাজারখানেক মহিলাকে পুলিশে নিয়োগ করা হবে এবং বিজেপি ক্ষমতায় এলে কিট্টুর রানি ছেন্নাম্মা ফ্লাইং স্কোয়াড গঠন করা হবে।

কাগজে-কলমে প্রতিশ্রুতিগুলো বেশ আকর্ষণীয় বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এর আগে রাজকীয় ভাবে ঘোষণা করা হলেও বিজেপির আমলে অনেক প্রকল্প দিনের আলো দেখেনি। তাই এই প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যায়।

মহিলা নিরাপত্তা

উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের প্রাক্কালে রাস্তায় মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিজেপি 'অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড' গড়ে তুলবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই দলের সদস্যরা নীতি পুলিশের ভূমিকা পালন করতে শুরু করে দিলেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই এই স্কোয়াড বিলুপ্ত হয়ে পড়ল।

কাঠুয়া ও উন্নাও ধর্ষণ কাণ্ডের পর দলের তরফ থেকে দাবি তোলা হয়েছিল যে নতুন আইন প্রণয়ন করে শিশু ধর্ষণের ক্ষেত্রে অপরাধীকে ফাঁসি দেওয়া উচিৎ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন কোনও ভাবেই এই সংক্রান্ত অপরাধ রোধ করা যাবে না। উল্টে এই ধরণের কঠোর আইন প্রণয়ন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

বিজেপির কর্নাটক নির্বাচনের ইস্তেহারও অনেকটাই এই আদলে করা হয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে একগাদা আকর্ষণীয় প্রকল্পের কথা এখানে বলা হয়েছে।

যেমন ফ্লায়িং স্কোয়াড প্রকল্পটি। কোনও মহিলা বিপদে পড়ে ফোন করলেই এই স্কোয়াডের সদস্যরা চটজলদি বিপদগ্রস্ত মহিলা কাছে পৌছে যাবেন। এ ছাড়াও এই দলের অন্তর্ভুক্ত বিশেষ তদন্তকারী বিভাগ এক মহিলা পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে প্রায় হাজারখানেক মহিলা পুলিশ থাকবেন যাঁরা মূলত নারীদের উপরে ঘটা অপরাধের তদন্ত করবেন।

কিন্তু বর্তমানে যে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে তাদেরই তো এই কর্তব্য পালন করা উচিৎ। তাদের দিয়েই তো আরও দক্ষ ভাবে কাজ করিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু বিজেপি সেই পথে হাঁটবে না। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের মত রাজ্যগুলো বিজেপি শাসিত আর সেখানে নারীরা যে সুরক্ষিত নন তা বলাই বাহুল্য। তাই তো বিজেপি নতুন নতুন প্রকল্প ঘোষণা করে মানুষকে চমক দিতে চায়।

প্রতিশ্রুতি

সুরক্ষা বাদ দিয়েও নারীদের জন্য আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ইস্তাহারে বলা হয়েছে দুঃস্থ মহিলাদের বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হবে আর বাকিদের মাত্র এক টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করা হবে। দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী মহিলাদের বিনামূল্যে স্মার্টফোন ও তিন গ্রাম সোনার মঙ্গলসূত্র দেওয়া হবে। কর্নাটকে ভাগ্যলক্ষ্মী বলে নারীদের জন্য একটি অর্থ প্রকল্প বেশ জনপ্রিয়। সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পাওনা টাকার পরিমাণও বাড়িয়ে ২ লক্ষ টাকা করবার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া একটি ১০,০০০ কোটি টাকার স্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও বলা হয়েছে যা দিয়ে স্ত্রী উন্নয়ন দোকান খোলা হবে, অর্থাৎ সমবায় ব্যবস্থা মাধ্যমে মহিলাদের হাতে তৈরি নানান সামগ্রী সেই দোকানগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। মাত্র এক শতাংশ হারের বার্ষিক সুদে মহিলাদের দু'লক্ষ টাকা অবধি ঋণ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

এই ধরণের প্রতিশ্রুতি থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে বিজেপির নীতি নির্ধারণে কোনও রকম ধারাবাহিকতা নেই। কর্নাটকে বিজেপি স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করবার কথা বলছে আবার কেন্দ্রে সেই দলের সরকারি স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর ধার্য করা ১২ শতাংশ জিএসটি কমাতে নারাজ

মুদ্রা প্রকল্প, মহিলা-ই-হাট, ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক বা উদ্যোগিনী প্রকল্পের মত বেশ কিছু কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ইস্তাহারে লেখা হয়েছে, স্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পের মতো এই সব প্রকল্পও শুধুমাত্র নাম বদল ছাড়া কিছু নয়। তাহলে নিজেদের তৈরি করা প্রকল্প বিজেপি কেন আবার রাজ্য স্তরে অনুকরণ করতে চাইছে? এতে কিন্তু উপভোক্তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

একটা সময় দক্ষিণ ভারতের দলগুলোর 'প্রতিশ্রুতির রাজনীতি' নিয়ে বিজেপি সমালোচনায় মুখর থাকতেন। অথচ, আজ বিজেপির ইস্তেহারেই প্রতিশ্রুতির বন্যা।

বিনামূল্যে স্মার্টফোনের মতোই উত্তরপ্রদেশে 'বিনামূল্যে ল্যাপটপের সঙ্গে এক জিবি ডাটা' প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। এখনও অবধি একজনও এই প্রকল্পের সুবিধাভোগ করতে পারেনি।

কর্ণাটকের ৪৯ শতাংশ ভোটার মহিলা। তাই তো মহিলাদের কথা ভেবেই তাঁদের ইস্তেহার তৈরি করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

এখানেই শেষ নয়। ইস্তেহারে আরও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতির কথা বলা আছে - কৃষকদের ঋণ মকুব, গোহত্যার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন ইত্যাদি।

এখন দেখতে হবে বিজেপির এই গেরুয়া প্রতিশ্রুতি কর্ণাটকের ভোটারদের মন কতটা গেরুয়া করে তুলতে পারে।

এই লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

YASHEE YASHEE @yasheesingh

Senior sub-editor, DailyO

Comment