সুস্থ থাকতে কলা খান, জেনে নিন কলার উপকারিতা
মনমেজাজ ভালো রাখে কলা
- Total Shares
যারাই আমার কাছে পুষ্টিকর খাবারদাবার সমন্ধে জানতে চান তাদের আমি আজ একটা করে কলা খাওয়ার পরামর্শ দিই। আমার এই পররামর্শ অনেককেই বেশ অবাক করে। বহু বছর ধরে এই ফলটা উপকারিতা নেই বলে বলা হয়, এবং যারা ওজন কমাতে চান এই ফলটা তাদের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে বলা হয়। আমার মনে হয় এই ধারণাটা ভুল।
প্রথমত, কলায় মেদ জাতীয় উপাদান একদম নেই বলেই চলে। দ্বিতীয়ত, এতে প্রচুর পরিমাণে রেসিস্টেন্ট স্টার্চ (আরএস) রয়েছে। আরএস একটি পুষ্টিকর কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের ছোটখাটো খিদেকে দমন করে এবং শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে।
একটা সামান্য পাকা, সুঠাম ও মাঝারি আকারের কলা থেকে আমরা প্রায় ৪.৭ গ্রাম আরএস পাই, যা আমাদের পেটকে বেশ কিছুক্ষণ ভর্তি রাখে।শরীরে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম বাড়াতে সাহায্য করে কলা এর ফলে হাড় ভালো থাকে। কলা থেকে আমরা যে আরএস পাই তাতে অনেক কম পরিমাণে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড থাকে।
এছাড়াও, হজম শক্তি বাড়ায় ও পেট ভালো রাখে কলা।
কলায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর কার্বোহাইড্রেট থাকে
কলায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর কার্বোহাইড্রেট থাকে বলে কলা খেলেই শরীর খুব তাড়াতাড়ি শক্তি পায়।সুক্রোজ, ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ- প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায় এই তিন ধরণের শর্করা থাকে কলায়। এছাড়া কলায় অনেক পরিমাণে আঁশ জাতীয় দ্রব্য থাকে। এই দ্রব্যগুলি শরীরে যেমন চটজলদি শক্তি যোগায় তেমনই তা শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে সাহায্য করে। কলার এই উপকারিতাটির জন্য প্রতিযোগিতার সময় খেলোয়াড়রা কলা খান।
কলায় প্রচুর পরিমাণে লোহা বা আয়রন থাকে।আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এর ফলে শরীরের ক্লান্তি দূর করে। সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণা অনুসারে যারা নিয়মিত ব্যাম বা শরীর চর্চা করেন কলা তাঁদের পরম বন্ধু।
আর একটু সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে খেলোয়াড়রা যে সুস্বাস্থ্যর জন্য যে স্পোর্টস ড্রিঙ্ক খেয়ে থাকেন সেই সব পানীয়গুলোতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের কোষকে ঠিক যে ভাবে প্রভাবিত করে তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো ভাবে ও দ্রুত কাজ করে কলা। তাই যাঁরা ব্যাম বা শরীর চর্চা করেন তাঁরা যদি এই সব পানীয়র বদলে কলা খান তাহলে আরও বেশি শক্তি পাওয়া যাবে এবং শরীরের কোথাও কেটে গেলে সেই ক্ষত তাড়াতাড়ি সারাতেও সাহায্য করে কলা।
কক্স-২ (COX-2) একটি উৎসেচক যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক উৎপন্ন করে। গবেষণাটি দেখা গেছে যে শরীর চর্চা করার আগে কলা খেলে শরীর এই উৎসেচকটিকে তৈরি হতে দেয় না বা অংকে কম পরিমাণে তৈরি হয়।
কলায় মেদ জাতীয় উপাদান একদম নেই বলেই চলে
কক্স-২-র কম উৎপাদন আমাদের শরীরকে ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্ত রাখে এবং দেখা গেছে যে এতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
এখানেই শেষ নয়। কলার যেমন দাম কম তেমনই কলা মনমেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেসব খাবারদাবার খেলে আমাদের মন ভালো থাকে সেই তালিকায় কলা অন্যতম। তার অনেক গুলো কারণও আছে। কলায় প্রচুর পরিমাণে ট্রিপ্টোফ্যান (tryptophan) ও টাইরোসিন (tyrosine) রয়েছে যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মত দুটি নিউরোট্রান্সমিটার উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। এই দুটো নিউরোট্রান্সমিটার মোনমোজাজকে ভালো রাখে।
কলায় পটাশিয়াম আছে, যা আমাদের স্নায়ুকে সতেজ রাখে। এছাড়া পটাশিয়াম প্রাকৃতিক শর্করার পরিমাণ বাড়ায় ও তা রাখতে মিশে শরীরে শক্তি উৎপাদন করে।
তাই আমার মনে হয়ে নানা খাদ্য গুন্ সম্বলিত এই সব পানীয় বা স্পোর্টস ড্রিঙ্কস না পান করে যদি অনেক কম দিয়ে কলা কিনে খাই তাহলে আমাদের শরীর প্রাকৃতিক ভাবে অনেকটা পুষ্টি পেয়ে যাবে।
তাই শরীরের পেশীকে সুস্থ্য রাখতে ও কাজ করার ক্ষমতা আরও বাড়াতে ব্যাম করার ঠিক এক ঘন্টা আগে বা ব্যাম করার সময় কিংবা ব্যাম শেষ করে যদি কলা খাওয়া যায় তাহলে আমাদের শরীরের পেশী যেমন ভালো থাকে ঠিক তেমনই কাজ করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। কঠিন ধরণের শরীর চর্চা যেমন দীর্ঘ সময় ধরে সাইকেল চালানোর পর কলা খেলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। তাই এই আশ্চর্য ফলটির উপকারিতা থেকে বঞ্চিত থাকবেন না।
কলায় প্রচুর পরিমাণে রেসিস্টেন্ট স্টার্চ (আরএস) রয়েছে
তাই প্রত্যেকদিন শরীর চর্চা না করলেও রোজের খাবার তালিকায় কলাকে অন্তর্ভুক্ত করুন। কিন্তু কলার কয়েক টুকরো ঠান্ডা খাদ্যশস্যতে যোগ করেও খেতে পারেন, অথবা দই বা দুধের সঙ্গে কয়েক টুকরো কলা যোগ করে শরবত বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে। আবার দুপুরবেলার দিকে শরীর একটু ক্লান্ত মনে হলে একটা কলা খাওয়া যেতে পারে, বা কলা দিয়ে ফলের সেলাড বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে অথবা পাউরুটিতে কিছুটা চীনাবাদাম দিয়ে তৈরি মাখন লাগিয়ে ও তার উপরে কয়েক টুকরো কলা ছড়িয়ে দিয়ে একটা স্যান্ডউইচ বানিয়েও খেতে পারেন।
আমার বই (ডোন্ট ডায়েট! ৫০ হ্যাবিটস অফ থিন পিপল) থেকে নেওয়া আমার খুব প্রিয় কলা দিয়ে তৈরি এই পদটা বাড়িতে তৈরি করে খেয়ে দেখতে পারেন। এই পদটা আপনাকে যেমন সম্পৃক্ত রাখবে। আনারস, পেঁপে, কলা ও শশাকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এবার এই টুকরোগুলোকে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার এতে এক কাপ ঠান্ডা নারকেলের জল মিশিয়ে নিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে অল্প অল্প করে খান।