কেন আমরা অভিনেতা রজনীকান্তের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছি
গোড়া থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে সিনেমাটি আমার বাবার জীবন অবলম্বনে তৈরি
- Total Shares
আমার ভাই জওহর নাদর বাধ্য হয়ে যখন এমন কিছু করলেন যাতে 'কালা' সিনেমার নির্মাতা একটু নড়েচড়ে বসলেন তখন হটাৎই আমরা ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারের আলোয় চলে এলাম।
এ মাসের ৭ তারিখ বিশ্বের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে অভিনেতা রজনীকান্তের ছবি 'কালা' মুক্তি পেয়েছে। সিনেমায় আমার বাবার চরিত্রটিকে নেতিবাচক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে বলে আমার ভাই অভিনেতার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।
ফোনে পরিচালক পা রজনীকান্ত আমাকে পরিষ্কার জানান যে সিনেমাটি আমার বাবার জীবনী অবলম্বনে নয়
দীর্ঘ অপেক্ষিত ও বিতর্কিত এই ছবিটির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব যে আমার বাবা - এস থিরাভিয়াম নাদরের এই ব্যাপারটা নিয়ে আজ দীর্ঘ এক বছর ধরে লড়াইটা চলছিল কিন্তু এই টানাপোড়েনটা চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে যায় যখন লড়াইয়ে অর্থ ও আইনগত দিকগুলো ঢুকে পড়ে।
গত বছর গোড়ার দিকে তামিল সিনেমার সেই প্রবাদপ্রতিম পরিচালক পা রজনীকান্তের সঙ্গে আমার যখন ফোনে কথা হয় তখন তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে 'কালা' সিনেমাটি আমার বাবার জীবন কাহিনি অবলম্বনে নয়। সিনেমার গল্পটি কাল্পনিক।
যদিও একটি তামিল গণমাধ্যমেকে দেওয়া সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি স্বীকার করেন যে সিনেমাটি এমন একজনের জীবনী অবলম্বনে বানানো হয়েছে যিনি তামিলনাড়ুর তিরুনেলভেলিতে থাকতেন। পরে ডন হবেন বলে নিজের গ্রাম ছেড়ে তিনি মুম্বাই চলে যান।
প্রত্যেকদিন একজন করে ডন জন্মায় না। গোড়া থেকেই খুব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে এই সিনেমাটি আমার বাবার জীবনী অবলম্বনে তৈরি।
এস থিরুভিয়াম নাদর
চার সন্তানের তিনজনের সঙ্গে নাদর
আমার বিয়েতে
কুখ্যাত বরদারাজন মুদালিয়ারের সঙ্গে বাবা
আমার মা অম্বিকা নাদরের সঙ্গে বাবা
যদিও আমাদের হাতে তেমন কোনও অকাট্য প্রমাণ ছিল না, কিন্তু তবুও সিনেমার বিভিন্ন টিজার, ট্রেলার ও নির্দিষ্ট একটি গান দেখেই আমারা নিশ্চিত হয়েছিলাম যে আমাদের দাবিতে এক্কেবারে ঠিক।
খুব অবাক হয়েছিলাম যখন শুনেছিলাম অনেকেই বলেছিল যে একজন চিত্রনির্মাতা, যিনি একজন ব্যক্তির জীবনী অবলম্বনে সিনেমা বানিয়ে কিছু টাকা রোজগার করার চেষ্টা করছেন মাত্র, অথচ আমরা নাকি সেই চিত্রনির্মাতার থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছিলাম। আবার অনেক সময় সিনেমাটি কাল্পনিক একটি গল্পকে অবলম্বন করে তৈরি করা হয়েছে বলে আমাদের দাবিকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছলনা ও গোপনীয়তা অবলম্বন না করে তাঁর মাপের একজন পরিচালকের উচিৎ ছিল সিনেমাটি বানাবার আগে আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলা, আমাদের অনুমতি নেওয়া এবং আমার বাবাকে তাঁর যোগ্য কৃতিত্ব দেওয়া।
ঘটনাচক্রে ১৯৫০ সালে একটা ট্রেনের সিটের নিচে লুকিয়ে বাবা মুম্বাই চলে আসেন। ষোলো বছরের ছোট ছেলেটি যখন ট্রেনটিতে চাপে তখন সে ভেবেছিল ট্রেনটা বর্মা যাচ্ছে। কারণ বহু দক্ষিণ ভারতীয় উদ্বাস্তু সে সময় তৎকালীন সিলোন ও বর্মা পালিয়ে গিয়েছিল।
তিরুনেলভেডি জেলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে তিনি গ্রাম ছেড়ে পালান। মুম্বাইয়ের সায়ন এলাকায় কিছু পরিত্যক্ত জমি দখল করে তিনি তাঁর জীবন শুরু করেন। সে জমি কারও দখল করা ছিল না, সে জমি কারও প্রয়োজনও ছিল না।
তিনি ওখানেই কয়েকটি ঝুপড়ি মতো বানিয়েছিলেন। সেই ঝুপড়িগুলো যেমন ছিল দোকান তেমনই আবার ওই ঝুপড়িতে মানুষ বসবাস করতেন। হাজার হাজার মানুষ যাঁরা তাঁর পরে তিরুনেলভেলি ছেড়ে মুম্বই চলে এসেছিলেন তাঁদের উনি বসবাসে সহায়তা করেছিলেন। একসময় মুম্বাইয়ের ধারাভি অঞ্চলে যেখানে এক সময় মশামাছি স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা জমিতে ভরা ছিল সেই জায়গা পরিষ্কার করে মাটির বাড়ি-ঘর তৈরি করে দিয়েছিলেন।
একসময় ওই জায়গা যেখানে কেউ বসবাস করত না আজ সেই জায়গার মূল্য হল বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা এবং সমস্ত বড় রাজনৈতিক দলের নেতার এই জায়গাটার উপরে নজর রয়েছে।
একই ধরণের কাজকর্ম জড়িত আমার বাবার ''ভাই'' যেমন বার্ধাভাই মুদালিয়ার ও হাজি মস্তানের মতো আমার বাবা কখনও পুলিশের নজরে আসেননি, তাই আমার বাবার জীবনে বেঁচে থাকার লড়াই সম্বন্ধে কোথাও কোথাও কিছু লেখাও হয়নি কখনও।
শিবসেনার প্রধান বালাসাহেব ঠাকরের পরিকল্পনায় মুম্বাই থেকে "ম্যাড্রাসি"-দের তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখন এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করে সেই পথে বাধ সাধেন, এই ঘটনার হাত ধরেই আমার বাবা তাঁর খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান।
এই সব ঘটনাক্রম নিয়ে এখন একটা সিনেমা তৈরি হয়েছে যা মুক্তি পেতে না পেতেই হিট হয়েছে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন