শীত এসে পড়ল: চেখে দেখা যাক শীতকালের পাঁচটি সুস্বাদু ও উপাদেয় খাবার

কাশ্মীরের হরিস্সা থেকে বাংলার নলেন গুড়, শীতকালীন ভোজনের তালিকা নেহাত ছোট নয়

 |  4-minute read |   18-11-2018
  • Total Shares

কথায় আছে, এক মাঘে শীত যায় না। কিন্তু শীত এলে মানুষের আহ্লাদের শেষ থাকে না। বিশ্বজুড়ে, খাদ্য রসিকরা তো শীতকালের জন্যেই অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ যা খুশি খাওয়ার এটাই তো আদর্শ সময়। তাপমাত্রা কম থাকে বলে শরীর খারাপ হওয়ার আশঙ্কা কম। তারপর গরম জামাকাপড়ের সৌজন্যে শরীরের 'বাড়তি' মেদটাও সহজে ঝরিয়ে ফেলা যায়।

গোটা দেশ জুড়েই এখন সুপার মার্ট বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোর রমরমা। আর এই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোর সৌজন্যে এখন বছরভর সবরকমের খাবরদাবার পাওয়া যায়।

তা সত্ত্বেও, একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, এমন কিছু উপাদেয় রয়েছে যা শুধুমাত্র শীতকালেই মেলে।

আসুন, সে রকম পাঁচটি উপাদেয় খাবারের খোঁজ নেওয়া যাক।

গাজরের হালুয়া

পশ্চিমি মিঠে রোদের তাপ যদি পোহানোই না যায় তাহলে আর শীতকাল কীসের? আর এই রোদ পোহানোর ফাঁকে এক বাটি গাজরের হালুয়া খেয়ে নেওয়া। আহা, যাকে বলে, সোনায় সোহাগা। আসলে, গাজরের হালুয়া তো শুধুমাত্র একটি খাবার জিনিস নয়। ভোজন রসিকদের কাছে এ যেন এক রূপকথা। ঠিকঠাক ভাবে সব ধরনের উপাদান দিনে বানাতে পারলে গাজরও যে স্বর্গীয় হয়ে উঠতে পারে তার সবচােয়ে বড় উদাহরণ এই গাজরের হালুয়া।

body_111818055444.jpgস্বাদ সত্যিই স্বর্গীয় [সৌজন্যে: টুইটার]

প্রবাসী বা অনাবাসী ভারতীয়দের কাছে ঠাকুমা-দিদিমার হাতের তৈরি গাজরের হালুয়া বেশ সম্ভ্রান্ত একটি ব্যাপার। তবে এই হালুয়া অবশ্য শঠেশাঠ্যং করেও বানানো যায়। যারা গাজর ছাঁচতে পারেন না তাঁরা প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নেন। অনেকেই আবার স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ঘি বা চিনির পরিমান কম দেন। কিন্তু যাঁরা সত্যিকারের ভোজন রসিক তাঁরা স্বাস্থ্যের কথা থোড়াই কেয়ার করেন। গাজর ছেঁচে, ঘি, দুধের মাঠা ও প্রচুর পরিমান চিনি মিশিয়ে একেবারে কব্জি ডুবিয়ে গাজরের হালুয়া ভক্ষণ করেন।

হরিস্সা

যাঁরা কাশ্মীরি খানা খুব একটা চেখে দেখেনি তাঁরা এক বার বানিয়েই দেখুন।

ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি হয় হরিস্সা। হালকা মশলা দিয়ে তৈরি এই খাবার মূলত সকালের জলখাবারে খাওয়া হয়ে থাকে। শ্রীনগরের পুরোনো বাজারগুলোতে তো এই খাবার অনেক সময় সকাল সাড়ে ন'টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কাশ্মীরের হাড় কাঁপানো শীতকালের সকালের জন্য যদি আলাদা করে কোনও খাবার থেকে থাকে, তাহলে সেই খাবার নিঃসন্দেহে কোনও বিশেষ ধরণের খাবার হবে।

body1_111818055531.jpgকাশ্মীরের শীতের সকালের বিশেষ খাবার [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

হরিস্সার বিশেষত্ব অনেক। যেমন এই খাবারটি তৈরি করতে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হালকা আঁচে সেদ্ধ করে মাংসের থেকে ফ্যাট সরিয়ে নেওয়া হয়। এত সময়ের নষ্ট করে শুধুমাত্র আসল উপকরণটি প্রস্তুত করা হল। এর পর মূল রান্নায় ঢুকতে হবে।

ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিঃসন্দেহে। কিন্তু ঠিক মতো রান্না করতে পারলে আপনি খাদ্য রসিকদের প্রশংসা পেতে বাধ্য।

ভুট্টার রুটি আর সরষে-শাক

বলিউডকে ধন্যবাদ। বলিউডের সৌজন্যে তো পাঞ্জাবিদের রান্নাঘর গোটা ভারতবর্ষের অন্দরমহলে প্রবেশ করে ফেলেছে। সারা বছর যতই রেস্তোরাঁয় মকাইয়ের (ভুট্টা) রুটি আর সরষে শাক খাই না কেন, শীতকালে পঞ্জাবী হেঁশেলে তৈরি মক্কে দি রোটি আর সরসো দা শাকের তুলনাই নেহি হ্যায়!

body2_111818055633.jpgস্বাদ পেতে চান, পঞ্জাবির সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন [ছবি: পাকওয়ানগলি]

ভুট্টার ময়দা, পালংশাক সঙ্গে সরষে ও রসুন আর এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মাখন - আহা, অতুলনীয়। স্বর্গীয়।

শুধু মাত্র ঘরে তৈরি রুটি আর শাক চেখে দেখার জন্য এক পাঞ্জাবির সঙ্গে বন্ধুত্ব করাই যেতে পারে।

দৌলত চাট

শীতকালীন খাবারের তালিকা বানাতে বসলে এই খাবারটি ছাড়া তালিকা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। মুচমুচে একই সঙ্গে কড়কড়ে - মুখে পড়লেই মনে হবে আপনি পৌছিয়ে গিয়েছেন সব পেয়েছির দেশে।

কথিত আছে এই চাট নাকি শুধুমাত্র শীতকালের পূর্ণিমার রাতেই বানানো যায়। আসলে এই খাবারটিতে ব্যবহৃত দুধ সারারাত ঘরের বাইরে রেখে দিতে হয় যাতে রাতের শিশির পড়ে দুধের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। দুধ এমন হবে যাতে মুখে দিলেই গলে যায়। কিন্তু হৃদয় থেকে না সরে।

body3_111818055736.jpgকথিত আছে এ জিনিস নাকি শুধুমাত্র শীতকালের পূর্ণিমার রাতে হয় [সৌজন্যে: টুইটার]

উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই খাদ্যটি বিভিন্ন নামে জনপ্রিয় - কোথাও মালাও, কোথাও মালাই মাখন কোথাও আবার নিমিষ। গোলাপ জল, কেশর ও মেওয়া ফল দিয়ে এই খাবার তৈরি হয়।

যা দিয়েই হোক না কেন, যে নামেই ডাকা হোক না কেন এর জুড়ি মেলা ভার।

নলেন গুড়

চলে আসুন এই বাংলায়। শীতকাল মানেই কলকাতার বাজারে নলেন গুড়ের সমাহারে। আর এই বাংলায় নলেন গুড়ের ব্যবহার তো বহুলপ্রচলিত।

নলেন গুড়ের রসগোল্লা, নলেন গুড়ের পিঠে, নলেন গুড়ের পায়েস, নলেন গুড়ের পাটিসাপ্টা, নলেন গুড়ের সন্দেশ - কোনও কিছুতেই খেজুরের রস বাদ নেই।

body4_111818055848.jpgনলেন গুড়ের জন্য বাংলাতে আসতেই হবে [সৌজন্যে: ইউটিউব]

এই খাবার খেতে প্রবাসীরা একবার ঘরে ফিরতেই পারেন, এই শীতে।

তাহলে শেষ পাতে মিষ্টি মুখ করা গেল। হাজার হোক, সব ভালো যার শেষ ভালো।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment