জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ অফিসার এসএম সহায় কী ভাবে মুম্বাই মামলার নায়ক হয়ে উঠলেন
পাক জঙ্গিশিবিরে পাঠানো ৩০ প্যাকেট সিমকার্ডের তিনটি ব্যবহার করা হয় ২৬/১১ হামলায়
- Total Shares
এক দশকের বেশি সময় ধরে নীরব থাকার পর শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন যে ২৬/১১ মুম্বাই হানার প্রাক্কালে জম্মু-কাশ্মীরের এক পুলিশ অফিসার পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈবার শিবিরগুলোতে সিমকার্ড পুঁতে দিয়ে এসেছিলেন। এর ফলে মুম্বাই সেদিন আরও বড় নাশকতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল। সংশ্লিট পুলিশ আধিকারিকটির নাম এসএম সহায়।
একটি গোপন অভিযানে কাশ্মীর রেঞ্জের আইজি সহায় এক এজেন্ট মারফত পাকিস্তানের জঙ্গি শিবিরগুলোতে ভারতীয় সিমকার্ড ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এর ফলে, প্রভূত লাভ হয়েছিল ভারতের।
এই সিমকার্ডগুলোর জন্য মুম্বাই হানার সময় অপহৃত লোকেদের অনেককেই মুক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। এ ছাড়া মুম্বাই হানায় যে পাকিস্তানের হাত ছিল তাও প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু গত এক দশক ধরে এসএম সহায়ের এই কথা অজানা ছিল।
হিন্দুস্তান টাইমসকে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আইবি-র শীর্ষ আধিকারিক দিব্য প্রকাশ সিনহা। সেখানে তিনি ২৬/১১-র ঘটনা ও ঘটনা পরবর্তী তদন্তের পুঙ্খনাপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন। মুম্বাই হামলায় মোট ১৬৬ জন মারা গিয়েছিলেন।
২০১৫ সালে অবসর নেওয়া করা সিনহা জানিয়েছেন যে ওই দিন ওই সিমকার্ডগুলোর জন্য তাঁরা জঙ্গিদের ফোনে কথোপকথন পরিষ্কার শুনতে পেয়েছিলেন। এর ফলে ঘটনাস্থলে কী ঘটছে তা তৎক্ষণাৎ জানতে পারা যাচ্ছিল। এ ছাড়া জঙ্গিরা বন্দিদের কোথায় লুকিয়ে রক্ষার পরিকল্পনা করছে তাও জানতে পারা যাচ্ছিল।
সিনহা জানাচ্ছেন, "আমি কন্ট্রোল রুমে বসে স্পিকারে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছিলাম একজন জিজ্ঞেস করছে, 'বাটু টু ক্যায়া ওয়াজির হ্যায়?' (আপনি কি মন্ত্রী?) লোকটি জবাব দিল 'না না আমি তো স্কুলের শিক্ষক'। অন্য প্রান্ত থেকে কেউ বলছে, 'মেরে ফেল। একজন স্কুল শিক্ষক ২০,০০০ টাকা খরচ করে হোটেলে থাকতে পারে না। উর্দু ও পাঞ্জাবি মিশিয়ে কথা হচ্ছিল।"
[ছবি: পিটিআই]
আইবি কন্ট্রোল রুমে বসে সিনহা তাঁর সহকর্মীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে পাকিস্তানের এই নম্বরের খোঁজ তারা কী ভাবে পেল। উত্তরে, তাঁর সহকর্মীরা জানালেন যে নম্বর ট্রাক করতে গিয়ে তাঁরা একটি ভারতীয় সিমের সন্ধান পেয়েছে, যা সবে মাত্র চালু করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল, পাকিস্তানী জঙ্গিদের হাতে ভারতীয় সিম পৌছাল কী ভাবে? সিনহা জানিয়েছেন কাশ্মীর থেকে ওই সিমকার্ডগুলো এসএম সহায় পাঠিয়েছিলেন। যাতে লস্কর জঙ্গিরা ব্যবহার করলে তা ট্র্যাক করা সম্ভব হয়।
সিনহা জানালেন, "৩০টি প্রিপেড সিমকার্ড পাঠানো হয়েছিল লস্করের এক এজেন্ট মারফত। ভরতের গোয়েন্দারা সেই সিমকার্ডগুলোর উপর অনেকদিন ধরেই নজরদারি চালাচ্ছিল। যাতে তা চালু হলে কোনও রকম নাশকতার খবর যদি পাওয়া যায়।"
সিনহা বলেন, "ওই ৩০টির মধ্যে তিনটে সিমকার্ড মুম্বাই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল। তার মধ্যে একটি সিমকার্ডে আড়ি পেতেছিলেম আমরা। এই সিমকার্ডটি যে ব্যবহার করেছিল সে তাজে ছিল। এই সিমকার্ডগুলোর জন্য আমরা কন্ট্রোল রুমে বসে ঘটনাস্থলে কী ঘটছে তা পুঙ্খনাপুঙ্খ জানতে পাচ্ছিলাম। এর ফলে আমরাও আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ পরিকল্পনা করতে পারছিলাম।"
[ছবি: পিটিআই]
১৯৮৭ ব্যাচের আইপিএস সহায় অবশ্য কাশ্মীর কর্মরত অন্য আইপিএসদের মধ্যে অন্যতম সফল আইপিএস ছিলেন। তাঁর আইজি থাকার সময়তেই কাশ্মীরের অশান্তি অনেকটা কমেছিল এবং রাজ্যের জঙ্গি কার্যকলাপ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকে ছিল।
তিনি দু'দফায় আইজি হয়েছিলেন। প্রথম দফায় হিজবুল মুজাহিদিন নামের জঙ্গি গোষ্ঠীকে তিনি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেন। লস্করদের বিরুদ্ধে বেশ কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করেন সহায়। ২০১০ সালে দ্বিতীয়বারের জন্য দায়িত্ব পাওয়ার পর সহায় কিন্তু জঙ্গি কার্যকলাপকে সফল ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলেন। বিশেষ করে স্থানীয়দের জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে গিয়েছিল।
[ছবি: পিটিআই]
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদ ভবন আক্রমণে অভিযুক্ত মুহম্মদ আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হল তখন কাশ্মীরকে শান্ত রাখার পিছনে সহায়ের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
অনেকেই জানেন যে গুরুর ফাঁসির একদিন আগে সহায় কী ভাবে গোটা কাশ্মীর চোষে বেড়িয়ে ছিলেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে ছিলেন।
সহায়কে হিরো বলা হলেও রাজনৈতিক মহলে তিনি খুব একটা জনপ্রিয় নন। কারণ তিনি তাঁর কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পছন্দ করেন না। ২০১৬ সালে এডিজি পদে থাকার সময়ে সহায় সংবাদমাধ্যমকে জানান, হিজাব কমান্ডার বুরহান মুজাফ্ফর ওয়ানি যে পুলিশি অভিযানে মারা গিয়েছিল সেই অভিযানের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
এর এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে দিল্লিতে সরিয়ে দেওয়া হয়। সহায় এখনও দিল্লিতে রয়েছেন।
সহায় নিজে থেকে সিমকার্ডগুলোর কথা বলেননি। কিন্তু খবর প্রকাশের পর তাঁর জনপ্রিয়তা হে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে তা বলাই বাহুল্য।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে