জেনে নিন প্রতিদিন তিন থেকে চারটি খেজুর খাবার কী উপকারিতা?

খেজুর খেলে পেটের ক্যান্সারের আশঙ্কা কম হয়

 |  5-minute read |   06-06-2018
  • Total Shares

খেজুর আমাদের পরম বন্ধুর কাজ করে। খেজুর খেতে মিষ্টি বলে যাঁরা মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন খেজুর তাঁদের খুব প্রিয় এবং যাঁদের মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার খেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাঁরাও খেজুর খেতে পারেন। কারণ খেজুর এমন একটি মিষ্টি ফল যেটা খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া মিষ্টি খেলে যেমন শরীরের ক্ষতি হয় খেজুর কিন্তু শরীরের কোনও ক্ষতি করে না।

এখন রমজান মাস চলছে তাই এই সপ্তাহে খেজুরের কথা মনে পরে গেলো। সারাদিন উপবাস থাকার পর শরীরে তৎক্ষণাৎ শক্তি সঞ্চারের জন্য খেজুর খেয়ে রমজানের সময় উপবাস ভাঙা হয়। খেজুরে আরও অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।

খেজুর খুব তাড়াতাড়ি আর খুব সহজে হজম হয় বলে সারাদিন উপবাসের পরে খেজুর খেলে পাচনতন্ত্রর উপর কোনও চাপ পরে না। এছাড়া খেজুর পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন রসকে ঠিকঠাক বাহিত হতে সাহায্য করে যার ফলে দীর্ঘ সময়ের পরে পেটে খাবার পড়লে ঠিকঠাক হজম হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় উপবাসী থাকার পর খেজুর খাওয়া মাত্র আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ ও স্নায়ুগুলি তৎক্ষণাৎ পুষ্টি পায়।

ঠিকঠাক খাবার না খেলে শরীরে ফাইবারের অভাব দেখা দেয় যার ফলে কোষ্টকাঠিন্য হতে পারে। খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খেজুর খেলে শরীরে চটজলদি শক্তি মেলে তাই  গ্রীষ্মকালে যখন আমরা ঘনঘন ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখন খেজুর খেলে শরীর আবার খুব তাড়াতাড়ি সতেজ হয়ে ওঠে। খেজুরের এই পুষ্টিগুণটির জন্য পুরোনোদিনে যাযাবর সমপ্রদায়ের মানুষ যাঁরা মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতেন যেখানে ঠিকঠাক খাবার মিলত না তাঁদের কাছে খেজুর তাই ছিল খুব প্রিয়।

এই যুগেও শরীর চর্চা করার আগে বা পরে ভালো খেলোয়াড়রাও খেজুর খেয়ে থাকেন। 

dates_body_060618084709.jpgখেজুর খুব সহজে হজম হয়

শুধুমাত্র রমজানের সময়েই নয় খেজুরের এতো পুষ্টিগুণ রয়েছে যে এই ফলটি সব সময় খাওয়া যায়। খেজুরে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে চিনি (ফ্রুকটোজ) ও গ্লাইসেমিক সূচক থাকা সত্ত্বেও চিনির থেকে খেজুরে অনেক বেশি পুষ্টি রয়েছে। কোনও খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক থেকে আমরা জানতে পারি যে সেই খাবারে ঠিক কতটা পরিমাণ ক্যাকবোহাইড্রেড রয়েছে যা আমাদের রক্তশর্করার তারতম্য ঘটাতে পারে। চিনি থেকে যেমন শুধুই ক্যালোরি মেলে তার থেকে কোনও পুষ্টি পাওয়া যায় না তবে খেজুর খেলে শরীর প্রচুর পুষ্টি পায়। চারটি খেজুর অর্থাৎ ৩০ গ্রাম খেজুর থেকে শরীর পায় প্রায় ৯০ ক্যালোরি , ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৩ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অনেক পুষ্টি।

পুষ্টিগুনে ভরপুর

গবেষণা বলছে খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও বি৬ রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় ও পড়ুয়ারা খেজুর খেলে তাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ে তাই তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করে। খেজুরে ভিটামিন কে রয়েছে। শরীরে কোথাও কেটে গেলে ভিটামিন কে দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে ও হাড় ভালো রাখে। খেজুরে ভিটামিন এ থাকে বলে খেজুর খেলে চোখ সুস্থ থাকে ও রাতকানা বা রাতে দৃষ্টিশক্তি কম হওয়ার মতো সমস্যা হয় না। খেজুরে জিয়েক্সেনথিন রয়েছে। বয়স হলে অনেক সময় চোখের দৃষ্টিশক্তি কম হয়ে যায় বা অন্ধত্ব দেখা দিতে পারে তাই খেজুর খেলে এইসব সমস্যা দেখা দেয় না। খেজুরে ভিটামিন এ রয়েছে তাই ত্বক সতেজ থাকে।

ছোট এই ফলটিকে পুষ্টিকর খনিজের আতুরঘর বলা যেতে পারে কারণ খেজুরে অল্প পরিমাণে হলেও প্রয়োজনীয় সবকটি খনিজ রয়েছে, যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনিসিয়াম (শরীরে হাড় গড়তে সাহায্য করে ও যৌন স্বাস্থ্য ও ক্ষমতার জন্য যে উৎসেচকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটি বড় ভূমিকা রয়েছে শরীরের শক্তি সঞ্চারে সাহায্য করে, শরীরকে তার পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পেতে সাহায্য করে, রক্তশর্করার মাত্রা ঠিক রাখে, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকে ভালো রাখে)। এছাড়াও খেজুরে দস্তা, তামা (তামা লাল রক্ত ​​কণিকার তৈরিতে সাহায্য করে, টিস্যু সুস্থ রাখে ও মস্তিষ্ক সতেজ রাখে), লোহা (রক্তাল্পতা হতে দেয় না), সেলেনিউম্ ও পটাসিয়াম। এছাড়াও খেজুরে রয়েছে ফ্লুওরিন যা দাঁত ভালো রাখে ও দাঁতের ভেতরে গর্ত হতে দেয় না। তাই চিনির বদলে মন ভোরে খেজুর খান যাতে রয়েছে অসংখ পুষ্টিগুণ।   

রোগমুক্তি

খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ফাইবার যা রক্তের সঙ্গে মিশে যায় আবার যেগুলো মেসে না এই দুইধরনের ফাইবারই পাওয়া যায় খেজুরে। ফাইবার আমাদের শরীরের রক্তশর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের পেটও অনেক্ষন ভরা থাকে। রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা ঠিক রাখে ও খাদ্যনালীকে সুস্থ রাখে।

খেজুরে বিভিন্ন ক্ষতিকর চর্বি যাকে ইংরেজিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাট বলা হয় সেসব থাকে না। এছাড়া খেজুরে সোডিয়াম কিংবা কোলেস্টরল থাকে না বলে খেজুর হৃদযন্ত্রের জন্য খুব উপকারী। এছাড়া খেজুর শরীরের খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কম করতেও সাহায্য করে। খেজুরে পটাসিয়াম থাকে বলে হৃদ কম্পন ঠিক রাখে ও রক্তচাপ কম করে।  ফলটিতে অনেক পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে ও অনেক কম সোডিয়াম রয়েছে বলে স্নায়ুর পক্ষে খেজুর খুব ভালো।

date_body2_060618084807.jpgপারে। খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়

খেজুরে পলিফেনোলস নামে একটি আন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমরা গাছ থেকে পাই। এই আন্টিঅক্সিডেন্টটি আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থগুলি বার করে দিয়ে শরীরকে পরিষ্কার রাখে তাই শরীরে কোথাও কোনও অবাঞ্চিত ফোলা ভাব দেখা দেয় না। খেজুরের আন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রাডিক্যালের মাত্রা কম করে ও খাবার থেকে আমাদের শরীর যে পুষ্টিগুলো পায় সেগুলি শরীরকে আরও ভালো ভাবে পেতে সাহায্য করে। এর ফলে ক্যান্সারের আশঙ্কা কম করে। তাই জন্যেও মধ্যপ্রাচ্যের বেদুইনরা প্রত্যেকদিন অনেক খেজুর খান বলে বিশ্বে যেসব দেশগুলিতে ক্যান্সারের প্রকোপ অনেক কম তাদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যও পরে।

আরও আছে!

খেজুর যৌন ক্ষমতা বাড়ায়। খেজুরে এস্ট্রাডিওল (estradiol) ও ফ্ল্যাবহনয়েড (flavonoid)-এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে বলে তা শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায় ও যৌন্য সজীবতা বাড়ায়। ঠিক এই কারণেই যুগ যুগ ধরে খেজুরকে যৌনক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

খেজুর পেটের জন্য খুব উপকারী ও পেট পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে। খেজুরে থাকা ফাইবার যেমন কোষ্টকাঠিন্য দূর করে তেমনই পেটের ক্যান্সারের আশঙ্কা কম করে। নিয়মিত খেজুর খেলে খাদ্যনালীতে প্যাথোজেন তৈরি হতে দেয় না ও উপকারী জীবাণু তৈরিতে সহায়তা করে। প্যাথোজেন হল একধরণের জীবাণু যা শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

আগের দিন বেশি মদ্যপান করে ফেললে পরের দিন তার রেশ থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি খেজুর সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খান। এতে যেমন নেশা কাটবে, পেটও পরিষ্কার হবে।

তাই আমি বলবো দিনে তিন থেকে চারটে খেজুর খান। সারারাত ভিজিয়ে রেখেছে পরের দিন সকালে বীজটা ফেলে দিয়ে সঙ্গে কয়েকটা আখরোট কিংবা বাদাম যোগ করে যে কোনও সময় খেতে পারেন। অথবা শরবত বানিয়ে খেতে পারেন বা পুডিং, খির, কাস্টার্ড, ওটস ও মুসলির উপরে ছড়িয়ে দিয়ে খেতে পারেন।

 

লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KAVITA DEVGAN
Comment