তাঁর বাবা কে, এ কথা ইমরানকে বোঝালেন সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন
সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরে তিনি দেখালেন আসলে তাঁরা ঠিক কে
- Total Shares
সুতরাং, তাঁর নামমাত্র সময়ের পাকিস্তান সফরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সৌদি আরবের যুবরাজ মহম্মদ সলমন দেখিয়ে দিলেন যে তাঁর বাবা কে।
১। ড্রাইভার, গাড়ি চালাও!
কেন নয় বেশিরভাগ পাকিস্তানিকে তো তাই-ই বলেন সৌদিরা (ছবি টুইটার)
অর্থাৎ অবশ্যই, সৌদি আরবের যুবরাজের মতো বিশাল মাপের বিদেশি অতিথি যখন দেশে আসছেন তখন তাদের রাষ্ট্রপ্রধান যে বিমানবন্দরে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই ধরনের ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং করমর্দন করার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন, একই সঙ্গে তাঁরা ভিআইপি অতিথিকে স্বাগতও জানান। তাঁকে সম্বর্ধনা জানিয়ে প্রবেশ করানোটাই স্বাভাবিক।
যেটা স্বাভাবিন নয়, সেটি হল একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী গাড়ি চালাচ্ছেন – নিজে – ভিআইপি অতিথিকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে অতিথিশালায় পৌঁছে দিতে।
কিন্তু ঠিক এই কাজটিই করছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন তিনি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন।
তা হলে কেন ন্যক্কারজনক ভাবে সমালোচনা করা হবে না? যতই হোক বেশিরভাগ সৌদিই পাকিস্তানকে যে চোখে দেখে অভ্যস্থ এটা কি তেমনই কিছু নয়?
২) ‘উঠো, মিস্টার প্রেসিডেন্ট!’
ব্যাপারটা অদ্ভুতই ঠেকছিল। যুবরাজ সলমনের জন্য আয়োজিত সরকারি ভোজে আমরা দেখলাম যে খুবই অদ্ভুত ভাবে মাথার মতো দেখতে ফুলদানিগুলো সার দিয়ে রাখা আছে, তার পিছনে সাটিন কাপড়ে জড়ানো রয়েছে শক্ত প্ল্যাকার্ড, সেখানে সকলে বেশ গোগ্রাসে খাচ্ছেন আর রুপোর বাসনে টুং-টাং খুটখাট করে শব্দ হয়ে চলেছে, সঙ্গে আরও একটা শব্দ হচ্ছে, পাকিস্তানিরা মুরগি চিবোচ্ছেন।
PM is busy eating, President begins address sitting down, then is told: "kharay hu jaey". They have to be micro managed all the time. pic.twitter.com/59w6Dbf60p
— Naila Inayat नायला इनायत (@nailainayat) 18 February 2019
কিন্তু যুবরাজ যখন আভিজাত্যের সঙ্গে সামান্য খাবার সামান্য স্পর্শ করলেন তখন দেখা গেল একমনে খেয়ে চলেছেন ইমরান খান। এমনকি যখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি স্বাগত ভাষণ দিচ্ছেন তখনও তিনি তাকিয়েও দেখলেন না।
আশ্চর্য লাগল যখন দেশের রাষ্ট্রপতি – এই দেশে যাঁকে আমরা রাষ্ট্রপ্রধান বলে মনে করি – তিনি বসে বসেই বক্তৃতা করতে শুরু করে দিলেন (খাবারগুলো সত্যিই লোভনীয় ছিল) এবং তখন তাঁকে বলা হল যে – অর্ধেকটা কথা আর কামড়ের মাঝখানে – উঠে দাঁড়াতে।
ভাবতে পারেন?
এই ভাবেই তাঁরা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ব্যবহার করলেন।
তা হলে কে তাঁর বক্তৃতার মাঝে পায়ের ভঙ্গিমা বদলে দিল, কারণ ইমরান খানের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা তখন চিবোতে ব্যস্ত ছিলেন এবং দূরে এসব দেখে রাজকীয় ভাবে মুচকি হাসছিলেন যুবরাজ।
৩) ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী!’ – আরও একটা অত্যাশ্চার্য ব্যাপার ঘটল যখন ইমরান খানের বলার পালা এল, বেচারি যুবরাজ সলমন! ইমরান তাঁকে দ্য ডিম বলে সম্বোধন করলেন এবং মুখচেপে হাসতে হাসতে বলতে লাগলেন যে এমবিএস যদি আজ পাকিস্তানে নির্বাচনে লড়েন তা হলে তাঁর চেয়েও বেশি ভোটে জয়ী হবেন।
বেশ।
Pak PM @ImranKhanPTI tells Saudi crown prince that he (MBS) is SO popular that in a Pak election he wd get more votes than Imran himself. ... pic.twitter.com/CQ1YR7Qkjr
— Umber Khairi (@umberkhairi) 18 February 2019
তিনি যেন একটা ধ্রুবসত্য বলছেন, পাকিস্তানে যে কী ভাবে নির্বাচন হয়, ইমরান খানকে তো কার্যত মনোনীত করে নেওয়া হয়েছে! আর সৌদির মতো বন্ধু প্রতিবেশীরা তাদের প্রতি সদয় না হলে তারা তো নির্বাচনের খরচটাই বহন করতে পারবে না! আর সৌদি আরবই যখন টাকাটা খরচ করছে তখন তাদের যুবরাজ কেন জিতবেন না?
দুয়ো।
৪) ‘কাহানি ঘর ঘর কি’ – যখন তিনি ‘নয়া পাকিস্তানে’র প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন ইমরান খান বিশাল করে ঘোষণা করে দিলেন যে রাষ্ট্রীয় ভবনগুলি দেশের সাধারণ মানুষের হয়ে যাবে, কারণ সেবা মে হি মেবা হ্যায়, এ কথা আপনারা জানেন। এ কথাও বলা হয়েছিল যে ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আবাসও ইসলামাবাদ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি শাখা হয়ে যাবে। তবে ইমরানের সেই অভাবনীয় পরিকল্পনা মাথায় রেখেই বলছি, যখন যুবরাজকে ইমরান সেখানে নিয়ে গেলেন, মানে ইমরান যখন নিজে গাড়ি চালিয়ে সেখানে তাঁকে নিয়ে গেলেন, আশা করব তখন তিনি ছাত্রদের কোনও লেকচারের মধ্যে গিয়ে পড়েননি।
A few days ago we read news that PM house was turned into a university. But today we see pictures of PM Khan meeting visiting dignitaries in the PM house. Now again I am confused. Has the PM house been converted into a university or not?https://t.co/uzQnLrU9r2
— Miftah Ismail (@MiftahIsmail) 6 January 2019
বেচারি ইমরান খান – তাঁর সেই সুন্দর স্বপ্ন – এক সুন্দর স্বপ্না – সেটা সৌদির যুবরাজকে আতিথ্য দিতেই চলে গেল।
৫) ‘আমি বাড়ি যেতে চাই’ – সুতরাং আদর-সৎকার-এর পর যুবরাজ একটি রাজকীয় ঝটকা দিলেন পাকিস্তানের গর্বে। ভারত স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল যে এমবিএস যেন সরাসরি ‘টেররিস্তান’ থেকে ভারত সফরে না আসেন, তিনি যেন অন্য কোনও জায়গা হয়ে ভারতে আসেন। এবং সেই জন্যই পাকিস্তানের প্রিয় বন্ধু স্থির করলেন যে তিনি দেশে ফিরে যাবেন – ইমরান কি তখনও তাঁরে গাড়ি চালিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন, আমরা অবাকই হতাম – পরে তিনি নতুন করে রিয়াধ থেকেই ভারতে এলেন!
ঘরে ফেরার বেলা, কারণ ভারত ডাকছে! (ছবি: টুইটার)
কসমে ভাদের জন্য একটু বেশিই হয়ে গেল, বন্ধুত্ব – হয়তো বা যুবরাজ নিজেই চাইছিলেন পাকিস্তানের ধুলো ঝেড়েই অনেক বড় দেশটিতে যেতে।
আসলে এটাই সভ্যতা।
যেটা আমাদের প্রিয় প্রতিবেশীটি জানে না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে