কেসিআর কেন তেলাঙ্গনা নির্বাচনের দিন এগিয়ে আনতে চান?
রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলের উপর নির্ভর করবে বিধাসভা ও লোকসভার ফল
- Total Shares
১১৯ আসন বিশিষ্ট তেলাঙ্গনার বিধাসভা নির্বাচন ২০১৯ সালের মে-জুন মাসে হওয়ার কথা। কিন্তু বিরোধীদের পরাস্ত করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও নির্বাচনের দিন এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছেন।
এহেন চিন্তাভাবনার কারণ দলের তৃণমূল স্তর থেকে শুরু করে সমস্ত কর্মীই যেন নির্বাচনী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই, নিজেদের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে কাটাছেঁড়া করে ফেলেছে টিআরএস। দলের তরফ থেকে মনে করা হচ্ছে যে আসন্ন বিধাসভা ও লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন গুরত্বপূর্ন ভূমিকা নিতে পারে।
শাসক দল এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে বিধানসভা নির্বাচন জিতে পুনরায় সরকার গঠন করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে টিআরএসের কাছে।
তাই মনে করা হচ্ছে, এই আঞ্চলিক নির্বাচনের ফলাফলের উপরই পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ফলাফল নির্ভর করবে।
তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। নির্বাচনে অনগ্রসর শ্রেণীর আসন সংরক্ষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যের হাইকোর্টে মামলা চলছে এবং খুব শীঘ্র এই মামলা মীমাংসা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
কংগ্রেসের ঘর ভাঙতে পারলে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কের উপর প্রভাব পড়বে
এক কংগ্রেস নেতা রাজ্যে আঞ্চলিক সভাগুলোর আসন সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন।
আদালতের তরফ থেকে জানান হয়েছে অনগ্রসর শ্রেণীর সঠিক শুমারি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যাবে না। এতে অবশ্য টিআরএসের সুবিধা হয়েছে। কারণ এক বছরের মধ্যে একাধিক নির্বাচন হলে ভোটারদের বারংবার খুশি করতে হবে। শাসক দল তা চায় না।
নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মতামত চেয়ে কেকেআর ইতিমধ্যেই চমক সৃষ্টি করেছেন। প্রাথমিক ঝটকা সামলে উঠলেও দুটি দল কিন্তু এখনও বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার কথা সাহস করে বলতে পারেনি। অন্য ভাবে দেখতে গেলে টিআরএস কিন্তু এখনও একশোর অধিক আসন পাওয়ার বিষয় নিশ্চিত।
হায়দরাবাদের প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা ডানাম নগেন্দরকে দলে টেনে ইতিমধ্যেই ফাটকা খেলেছেন কেসিআর। এই চালের মধ্যে দিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে যে আর কেউ যদি টিআরএসে যোগ দিতে চান তাহলে তাঁদের জন্য লাল কার্পেট তৈরি থাকবে।
আরও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে দলে টানতে পারলে রাজ্য কংগ্রেসের উপর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে। স্বাধীনতা দিবসে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রদায় ভিত্তিক কিছু প্রকল্প ঘোষণা করার কথা কেসিআরের পরিকল্পনায় রয়েছে।
কোনও শরিক ছাড়াই নির্বাচন লড়তে চায় বিজেপি
প্রযুক্তির ব্যবহার করে সরকারের তরফ থেকে ৩০টি তথ্যচিত্র ও ২০টি শর্টফিল্ম তৈরি করা হয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে এই নতুন রাজ্যকে কী ভাবে ব্যাঙ্গারু তেলাঙ্গনায় রুপান্তরিত করা হবে তা দেখানো হয়েছে।
দলীয় নেতা ও মন্ত্রীরা ইতিমধ্যেই জেলা সফরে বেরিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নের বেশ কিছু গুরত্বপূর্ন কাজ এখনও বাকি রয়েছে।
রাজ্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যেন উত্তম কুমার রেড্ডি বলেছেন, "প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারা এই রাজ্যের অন্যতম সমস্যা। তাই তো সরকারের প্রতি যথেষ্ট বিশ্বাসযোগত্যার অভাব রয়েছে এবং মানুষ সরকারের উপর ক্রুদ্ধ।" তাঁর অভিযোগ সেই কারণে কেসিআর যখন নিজের কেন্দ্রে জনসভায় যোগ দিতে যান তখন এলাকার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখতে হয়।
রাজ্যে বিজেপি ছাড়া কংগ্রেস আর সব দলের সঙ্গে হাত মেলাতে তৈরি। টিআরএসকে হারাতে কংগ্রেস টিডিপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতেও প্রস্তুত। কিন্ত কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় সমস্যা দলীয় অন্তঃকলহ,নিজেদের মধ্যে কোন্দল।
বিজেপিও চেষ্টা করে চলেছে। দলের রাজ্য সভাপতি কে লক্ষ্মণ ইতিমধ্যেই প্রজা চৈতন্য যাত্রা বলে একটি প্রচার শুরু করেছেন যার মাধ্যমে সরকারের ব্যর্থতাগুলোকে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। তার দল টিআরএসকে গদিচ্যুত করবে বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, "জমির রেকর্ড ঠিক করতে গিয়ে শাসক দল গরিব কৃষকদের কাছ থেকে জমি ছিনতাই করেছে।"
১৩ জুলাই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ তাঁর সঙ্গে এই প্রজা চৈতন্য যাত্রায় যোগ দেবেন। প্রায় এক বছর পর এই রাজ্য সফরে আসছেন অমিত শাহ। বিজেপির তরফ থেকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দলীয় সদস্য ও সমর্থকরা যেন কোনও শরিক ছাড়াই আসন্ন নির্বাচনগুলোতে লড়াই করবার জন্য প্রস্তুত থাকে।
এর মানে, তেলাঙ্গনা ত্রিমুখী লড়াই হতে চলেছে।
(সৌজন্যে: মেল টুডে)
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে