১০০-১০০০ টাকার কয়েন কোথা থেকে কী ভাবে পাবেন
এ সব কিনতে গিয়ে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, কারণ বাজারে নকল ভর্তি
- Total Shares
আচ্ছা, ১০০০ টাকার কয়েন কি সত্যিই বেরিয়েছে? যদি সত্যিই বেরিয়ে থাকে তা হলে কবে? শুনেছি ১০০ টাকার কয়েনও বেরিয়েছে। ২০০০ টাকার নোট হাতে আসছে, নতুন ১০০ টাকা, ২০০ টাকার নোটও হরদম হাতে আসছে, কিন্তু এই সব কয়েনগুলি হাতে আসে না কেন?
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে বেশ কিছুদিন অন্তর একটি মেসেজ পাই বিভিন্ন গ্রুপে, ১০০ টাকার কয়েন বাজারে ছাড়ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গোছের কিছু একটা, কিন্তু মেসেজই সার, কয়েনটি হাতে পাই না। প্রথমেই একটি কথা বলে রাখা দরকার যে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মুদ্রা তৈরি করে না, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও অন্য প্রতিষ্ঠানকে এমনকি ব্যক্তিদেরও খুচরো পয়সা দেয় নিয়মমাফিক। কোন নিয়মে কাকে কী পরিমাণ বা কত সংখ্যায় কয়েন দেয় সে প্রসঙ্গে আর ঢুকছি না।
পয়সা তৈরি করে টাঁকশাল। ভারতের টাঁকশালগুলি সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ভারতীয় প্রতিভূতি মুদ্রণ তথা মুদ্রা নির্মাণ নিগম লিমিটেড বা SPMCIL) নামে প্রতিষ্ঠান মুদ্রা তৈরি করে। সেখান থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কে পাঠানো হয় মুদ্রা। তবে যে সব মুদ্রার ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হয়, সেগুলি নয়। সেগুলি তৈরি হয় ঠিকই, তবে সাধারণ ভাবে কেনাবেচা করার জন্য নয়।
এগুলি বিশেষ স্মারক মুদ্রা, শুধুমাত্র সংগ্রাহকদের জন্যই তৈরি করা হয়। যেমন দেশের প্রথম ১৫০ টাকার মুদ্রাটি তৈরি হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে। সেটি ছিল বিশেষ মোড়কে। সেই বিশেষ খাম ও খামের ভিতরে যে মোড়কে মুদ্রাটি ছিল সেটির ছবি দেখলে স্পষ্ট হয়ে যাবে ব্যাপরাটি ঠিক কেমন।
১৫০ টাকার প্রথম স্মারক মুদ্রার খাম
১৫০ টাকার প্রথম স্মারক মুদ্রার সামনের দিক
১৫০ টাকার প্রথম স্মারক মুদ্রার পিছনের দিক
মুদ্রার সামনের দিক কোনটি? পিছনের দিকই বা কোনটি? ব্রিটিশ আমলে একটা কথা চালু ছিল হেড-টেল। রানি ও রাজার মুখের ছবি যে দিকে দেওয়া থাকত সেই দিকটি হেড, অন্য দিকটি টেল। হেড সোজা দিক। যে দিকে সাল ও মুদ্রাম দাম লেখা থাকে সেই দিকটি টেল। তবে যে সব দেশে রাজা নেই, সেই সব দেশে অবভার্স ও রিভার্স শব্দ দুটি চালু। অবভার্স বা সোজা দিক হল যে দিকে সাল ও মুদ্রার দাম লেখা থাকে। আমাদের দেশের স্মারক মুদ্রায় মুদ্রার দাম যে দিকে লেখা থাকে তার বিপরীত দিকে থাকে সাল। তাই আমাদের দেশে দাম লেখা দিকটিকে অবভার্স বলা হয়।
খামটির ডানদিকের নীচের কোণ খেয়াল করলে দেখা যাবে সেখানে লেখা প্রুফ কয়েন। প্রুফ কয়েন আর নীচের বৈষ্ণোদেবী মন্দির বোর্ডের একই জায়গা খেয়াল করলে দেখা যাবে লেখা রয়েছে ইউএনসি।
বৈষ্ণোদেবী স্রাইন বোর্ডের ২৪ বছর উপলক্ষে স্মারক মুদ্রার খাম ও (নীচে) স্মারক মুদ্রার এক দিক
প্রুফ ও ইউএনসি (আনসার্কুলেটেড) মুদ্রাগুলি বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়। যেগুলি ফ্রস্টেড হয় সেগুলি প্রুফ ও না হলে তাকে ইউএনসি বলা হয়। এগুলি আয়নার মতো চকচকে, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। এই সংজ্ঞা অবশ্য দেশ-কাল ভেদে পৃথক হতে পারে। সেটি এখানে প্রাসঙ্গিক নয়।
স্বাধীন ভারতে সত্তরের দশকের গোড়ায় বিশেষ মোড়কে এই ধরনের মুদ্রা তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করে বোম্বে টাঁকশাল। ১০ টাকা ও ৫০ টাকার কয়েন, রুপোর। পরে ১০ টাকা ও ২০ টাকার সেটও বার হয়। ভারতে ১ পয়সা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মানের মুদ্রা এই বিশেষ প্রুপ ও ইউএনসি সেটে জায়গা পেয়েছে।
১০০০ টাকার স্মারক মুদ্রা, সঙ্গে ৫ টাকার। মুদ্রার মাপ বোঝা যাবে সঙ্গে থাকা ৫ টাকাটির সঙ্গে তুলনা করলে। অবভার্স ও রিভার্স লেখাও রয়েছে।
অতি সাম্প্রতিক কালে ১, ২, ৫, ১০, ২০, ২৫, ৫০, ৬০, ৭৫, ১০০, ১২৫, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩৫০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার স্মারক মুদ্রা প্রকাশিত হয়েছে বা হতে চলেছে। ২৫০ ও ৩৫০ টাকার মুদ্রা এখন প্রকাশিত হয়নি। প্রথম ৭৫ টাকার মুদ্রাটি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৭৫ বছরে ও প্রথম ৬০ টাকার মুদ্রাটি নতুন কলকাতা টাঁকশালের ৬০ বছর উপলক্ষে প্রকাশিত হয়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চিহ্ন দেওয়া স্মারক মুদ্রা
এ বার আসল কথায় আসা যাক। এই মুদ্রা কী ভাবে সংগ্রহ করা যায়। যেগুলি ইতিমধ্যেই প্রকাশিত সেগুলি সংগ্রহ করতে কোনও ডিলারের থেকে যাঁরা এই ধরনের মুদ্রা কেনা-বেচা করেন আর যদি নতুন মুদ্রা কিনতে চান তা হলে যোগাযোগ করতে হবে এসপিএমসিআইএলে। এ জন্য এসপিএমসিআইএল-এর সাইটে যেতে হবে।
একটি পাঁচ টাকার কয়েনের দাম হতে পারে তিনশো টাকার বেশি। কোন কয়েনের কী দাম সেটি আপনি সংশ্লিষ্ট ওয়েব সাইটেই দেখতে পাবেন।
একটা কথা মনে রাখবেন, বাজারে ১টি আসল মুদ্রা পেলে ৯৯টি নকল পাবেন, এগুলি চিনা মুদ্রা নামে পরিচিত। তাই পুরোনো মুদ্রা কেনার আগে যাচাই করে নিন। বিভিন্ন ওয়েব সাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে যেগুলি বিক্রি হয় সেগুলির বড় অংশই ভুয়ো।
কলকাতা টাঁকশালের স্মারক মুদ্রা
এসপিএমসিআইএল নামে প্রতিষ্ঠানটির অধীন চারটি টাঁকশালও রয়েছে, এই সব টাঁকশালের সাইটে ঢুকে প্রোডাক্ট বুকিং অংশে গি্য়ে কয়েন কেনা যায়। কোনও কয়েন বাড়তি থেকে থাকে তা হলে কাউন্টার থেকেও সেগুলি সংগ্রহ করা যায়। কোন কোন কয়েন কাউন্টারে রয়েছে সেগুলি সাইটেই দেওয়া থাকে।
আবেদনপত্রের নমুনা
এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি কয়েনের বুকিং চলছে কলকাতা ও মুম্বই টাঁকশালে। ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন সংশ্লিষ্ট টাঁকশাল থেকে, আবার সরাসরি বুক করতে পারেন ওয়েবসাইটে গিয়েও। তার আগে প্রতিটি টাঁকসালের জন্য আলাদা ভাবে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। ফোটো-আইডেন্টিটি কার্ড আপলোড করতে হতে পারে, তাই সেটি সঙ্গে রাখুন, মোবাইল ফোনে ছবিও তুলে রাখুন।
কয়েন বুকিংয়ের পরে অবশ্য বেশ কিছুদিন, মানে মাস ছয়েক অপেক্ষা করতে হবে সেটি পাওয়ার জন্য। নির্দিষ্ট সময় পরে বিমাকৃত ডাকে সেই কয়েন আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেবে টাঁকশাল। ঠিকানা বদল হলে তা পরিবর্তন করা সম্ভব, তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা হল ফোন করে কাউকে পাওয়া মুশকিল, তাই এমন ঠিকানা দিন যেটি ৬-৮ মাস থাকবে।
ডাক-পিয়োনের থেকে সই করে এটি সংগ্রহ করতে হবে। তিনি আপনাকে না চিনলে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখতে চাইতে পারেন। বাদজপেয়ীর কয়েনের বুকিং শুরু হলেও আন্দামানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলনের মুদ্রা বুকিংয়ের বিজ্ঞপ্তি এখনও (এই লেখাটি সম্পূর্ণ করা পর্যন্ত) প্রকাশিত হয়নি।