একাশি ছুঁলেন ওয়াহিদা রহমান: এখনও তিনি পূর্ণিমার চাঁদ চেয়েও বেশি সুন্দর
শুধু মুখ্য চরিত্রগুলোতে নয়, মা-ঠাকুমার পার্শ্ব চরিত্রেও তিনি দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন
- Total Shares
ওয়াহিদা রহমানের জীবনের কথা পড়লেই মনে হয় তাঁর জীবন নিয়ে অবিলম্বে একটি বায়োপিক তৈরি করা উচিত।
তবে সেই সিনেমায় তাঁর চরিত্রে যে অভিনেত্রী অভিনয় করবেন তাঁকে খুঁজে বের করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। তিনি নিজে অবশ্য তাব্বু, দীপিকা পাড়ুকন ও বিদ্যা বালানকে বেশ পছন্দ করেন। এঁদের মধ্যে একজনকে হয়তো তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যেতে পারে। তা সত্ত্বেও একটা বিষয় নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে -এই অভিনেত্রীর মতো আর কোনও অভিনেত্রীকে খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। সেই ১৯৫৬ সাল থেকে বলিউডে কাজ করে চলেছেন তিনি, যখন কিংবদন্তি গুরু দত্ত সিআইডি সিনেমায় তাঁকে একটি ভ্যাম্পায়ারের চরিত্র দিয়েছিলেন।
ওয়াহিদাকে দেখে অবশ্য একবারের জন্যও ভ্যাম্পায়ার বলে মনে হয়নি। তাই দত্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে পরবর্তী সিনেমাগুলোতে তিনি ওয়াহিদাকে শুধুমাত্র মুখ্য চরিত্রগুলোতে ব্যবহার করবেন। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া 'প্যায়াসা' সিনেমায় গুলাব নামের একটি সিংহহৃদয়ের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করে ওয়াহিদা সকলকে ছাপিয়ে যান। এর পর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এই প্রজন্মের কেউই তাঁর মতো হতে পারবে না [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]
'কাগজ কা ফুল'এর মতো গুরু দত্তের কয়েকটি সিনেমা খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি কারণ সমকালের চেয়ে এই সব সিনেমাগুলি অনেকটাই এগিয়ে ছিল। কিন্তু তা বলে এর প্রভাব ওয়াহিদার অভিনয় জীবনে পড়েনি। তিনি একের পর এক হিট সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে গিয়েছেন।
তাঁর সাধারণ জীবনযাপন দেখে তাঁকে 'বিনয়ী[' বলেই মনে করা হত যা কিন্তু আজকালকার দিনের অভিনেত্রীদের মধ্যে পাওয়া বেশ দুষ্কর। তিনি বরাবরই সৌন্দর্য্যের বা সুন্দরের প্রতিমূর্তি ছিলেন।
উর্দু কবিতায় আজও আমরা 'চৌধবি কা চাঁদ' মানে পূর্ণিমার চাঁদের সৌন্দর্য্যের বর্ণনা পেয়ে থাকি। ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া 'চৌধবি কা চাঁদ' সিনেমার জামিলা হিসেবে একই রকম সুন্দর ছিলেন ওয়াহিদা। সেই সিনেমায় তাঁকে যেন একজন স্বপ্নের নারী বলে মনে হচ্ছিল।
তিনি পূর্ণিমার চাঁদের মতোই সুন্দর [স্ক্রিনগ্র্যাব]
এক প্রসিদ্ধ আমলার কন্যা ওয়াহিদা ছোটবেলা থেকেই ভারতনাট্যমের তালিম নিয়েছিলেন। তাঁর এই নৃত্য প্রতিভার জন্যই তিনি গুরু দত্তের নজরে আসেন। আর বিভিন্ন সিনেমায় তাঁর এই নৃত্য প্রতিভা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। 'গাইড' (১৯৬৫) সিনেমায় তিনি রোজি নামের একজন ডান্সারের চরিত্রে অভিনয় করেন। সেই অভিনয় দর্শকদের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আরকে নারায়ণের লেখা 'গাইড' উপন্যাসটির থেকে তৈরি বিজয় আনন্দের নির্দেশিত এই সিনেমার রোজি চরিত্রটির সঙ্গে তিনি যেন নিজেকে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। ওয়াহিদা রহমান নিজেও মনে করেন যে এই সিনেমায় তিনি তাঁর জীবনের সেরা অভিনয়টা করতে পেরেছিলেন। এবং তিনি হয়তো ঠিকই মনে করেন।
গাইড সিনেমায় তিনি ছিলেন অনবদ্য [স্ক্রিনগ্র্যাব]
সে সময়ে অনেকেই বলেছিলেন তিনি যেন রোজির মতো একজন আধুনিক মেয়ের চরিত্রে অভিনয় না করেন। ষাটের দশকে এই সিনেমাটিকে বেশ 'আধুনিক' বলে করা হয়েছিল। কারণ এই সিনেমার মুখ্য চরিত্র রোজি নিজের স্বামীকে পরিত্যাগ করে রাজু বলে একজন গাইডের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। রাজুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দেব আনন্দ। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত রোজির চরিত্রে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি সফলও হয়েছিলেন। গাইড অবশ্য ওয়াহিদা রেহমান ও দেবানন্দের অভিনয় জীবনের ধারাটাই বদলে দিয়েছিল। এই দু'জন ও পরিচালক বিজয় আনন্দের নিষ্ঠার জেরে 'গাইড' বলিউড ক্লাসিকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল।
ওয়াহিদা রহমান বেশ কিছু পার্শ্বচরিত্রে মা কিংবা ঠাকুমার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এবং পঞ্চাশ ষাট কিংবা সত্তরের দশকে অভিনীত চরিত্রগুলি যতটা জনপ্রিয় হয়েছিল পার্শ্বচরিত্রেও ঠিক ততটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন ওয়াহিদা। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন (ফাগুন ১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল)। এর পর থেকে তিনি একের পর এক সিনেমায় মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে 'কভি কভি' সিনেমায় অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী হওয়ার মাত্র বছর কয়েকের মধ্যেই ত্রিশূল ছবিতে ওয়াহিদাকে অমিতাভের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়।
যে কোনও চরিত্রেই অসাধারণ ছিলেন তিনি [স্ক্রিনগ্র্যাব]
তবে তাঁর প্রতিটি চরিত্রে তাঁর অভিনয় ছিল অসাধারণ। সব চরিত্রেই তিনি দর্শকদের মন জয় করে গিয়েছেন। তাঁর আকর্ষণ যেন চিরকালীন যা সকল হৃদয়কেই জয় করে যায়।
৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ৮১ ছুঁলেন তিনি। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এই বয়সেও তিনি পূর্ণিমার চাঁদ থেকে বেশি সুন্দর।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে