জেনে নিন কোন ভিটামিনে সৌন্দর্য্য বাড়ে ও শরীর সুস্থ থাকে
অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন তবে তেমন কদর পায় না
- Total Shares
ভিটামিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় যে তিনটি ভিটামিন সেগুলি হল - সি, ডি এবং এ, যেগুলো সম্বন্ধে আমাদের অনেক কিছুই জানা। তবে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হল ভিটামিন বি যেটা তেমন কদর পায় না। এই ভিটামিনটি সম্বন্ধে কিছু বোঝান বা এর উপকারিতাগুলো ঠিকঠাক বুঝতে পারা খুব একটা সহজ কাজ নয় বলেই হয়তো আমরা ভিটামিন বি-র গুণ সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সে আটটি জলে দ্রবণীয় ভিটামিন আছে — বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭, বি৯ ও বি১২। সবকটি ভিটামিন শরীরের কোষের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
শরীরের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠা ও শরীরকে সুস্থ রাখতে ভিটামিন বি-র একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে, তাই এই ভিটামিনটি সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জেনে রাখা উচিৎ। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন শরীরে সঠিক বিপাক করায় তেমন নতুন লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করে, মস্তিষ্কের সজীবতা, চোখের দৃষ্টি ভালো রাখা, শরীরে জিনের কাজ (জিন সুস্থ না থাকলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে) ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ বা ফ্রি রেডিক্যালের প্রভাবকে কম করে বলে চুল, ত্বক ও নখ ভালো থাকে।
ভবিষৎ ব্যবহারের জন্য শরীর ভিটামিন এ এবং ডি যেমন মজুত করে রাখে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শরীরে সঞ্চিত থাকে না। কিন্তু ভিটামিন বি১২ শরীরের সঞ্চিত থাকে। বাড়তি ভিটামিন বি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার প্রত্যেকদিন খাওয়া উচিৎ।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যে আটটি ভিটামিন দিয়ে তৈরি সেগুলো সম্পর্কে একটু জেনে নিন:
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন)
স্নায়ুতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, পেশির সুস্থতা এবং শরীরে কার্বোহাইড্রেডের সঠিক বিপাকের জন্য ডিএনএ ও আরএনএ-এর প্রয়োজন পড়ে। ভিটামিন বি ১ (থায়ামিন) শরীরে ডিএনএ ও আরএনএ তৈরি হতে সহায়তা করে ও তার পরিমাণ ঠিক রাখে। এই ভিটামিনটি মানসিক চাপ কম করে ও মন-মেজাজ ভালো রাখে তাই একে ইংরেজিতে "অ্যান্টি স্ট্রেস" ভিটামিন বলা হয়।
উৎস: মাছের মধ্যে ট্রাউট ও স্যালমনে এই ভিটামিনটি রয়েছে। আনাজের মধ্যে সূর্যমুখী ফুলের বীজে সব চেয়ে বেশি থায়ামিন থাকে।
ভিটামিন বি২ (রাইবোফ্লাবিন)
এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরে শক্তি যোগায় ও নতুন লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি করে।
উৎস: চিজ, কাজুবাদাম ও ম্যাকরল (এক ধরণের সামুদ্রিক খাবার)
ভিটামিন বি৩ (নায়াসিন)
পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে, ত্বক ও স্নায়ু ভালো রাখে। খাবারকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।
উৎস: মুরগি ও টার্কির মাংস এবং চিনাবাদাম।
ভিটামিন বি ৫ (পেন্টোথেনিক এসিড)
শরীর তেল জাতীয় খাবারকে বিপাক করতে সাহায্য করে ও শরীরকে শক্তি জোগায়। খাবার থেকে আমাদের শরীর যে কার্বোহাইড্রেড, তেল বা চর্বি ও প্রোটিন পায় সেগুলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ভিটামিন বি৫।
উৎস: সূর্যমুখী ফুলের বীজ, আভাকাডো, স্যালমন মাছ।
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন)
শরীরে খাবার বিপাক হতে সহায়তা করে। লোহিত রক্ত কণিকায় যে হিমোগ্লোবিন থাকে সেই হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। শরীরে রক্তশর্করার মাত্রা ঠিক রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়াও ভিটামিনটি যকৃৎকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে যার ফলে যকৃৎ সুস্থ থাকে।
উৎস: টুনা মাছ। শাক-সবজির মধ্যে ছোলা ও পালংশাকে ভিটামিনটি থাকে সব চেয়ে বেশি পরিমাণে।
ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন)
পেটে উৎসেচক তৈরি করতে সহায়তা করে। এই ভিটামিনটিকে অনেক ক্ষেত্রে ভিটামিন এইচ-ও বলা হয়, কারণ এই ভিটামিনটি চুল ও নখ ভালো রাখে।
উৎস:ডালিয়া, ভুট্টা, কাজু বাদাম, ডিম ও দুধ থেকে জাত বিভিন্ন দ্রব্য।
ভিটামিন বি৯ (ফোলেট)
এই ভিটামিনটি স্নায়ুতন্ত্র ও কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম ভালো রাখে ।
উৎস- বিভিন্ন রকমের ডাল, বিশেষ করে লবিয়া (একধরণের কালো রঙের ডাল), মুগ ডাল, পালংশাক ও অ্যাস্পারাগাস।
ভিটামিন বি ১২ (কোবালামিন)
একদম শেষে এই ভিটামিনটির সম্বন্ধে আমাদের সবার জেনে নেওয়া উচিৎ। এ যুগে আমরা অনেকেই এই ভিটামিনটির অভাবে ভুগি। ভিটামিনটি শরীরে রক্তাল্পতা দূর করে, ক্লান্তি ঘোচায়, দুর্বলতা দূর করে এবং আমাদের স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে।
উৎস: খোল সমেত মাছ ও ম্যাকরল। এ ছাড়া শাকসব্জির মধ্যে টফু ও মাশরুম।
পরিমাণে বেশি খান
এই প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলো সম্পর্কে আরও কয়েকটা কথা জেনে রাখুন:
যে সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৫ ও ভিটামিন বি৯ থাকে সে সব খাবারদাবার আমরা যখন কাঁচা কিংবা রান্না করে খাই তখন হার্ট সেগুলোকে ভেঙে ফেলে যাতে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ভিটামিনগুলো পেতে পারে।
মদ্যপান করলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে বি ভিটামিন পায় না। বিশেষ করে তখন শরীরে বি১ ,বি৩ ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব দেখা দেয়। তাই যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন তাঁদের নিজেদের পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে হবে কারণ বেশি মদ্যপানের ফলে পাকস্থলীর ভেতরের আবরণটির ক্ষতি করে ও পাকস্থলী থেকে যে রস বেরিয়ে আমাদের খাবার হজম করতে সাহায্য করে সেগুলো ঠিকঠাক বেরোতে পারে না। এছাড়াও শরীরে ভিটামিন বি-র অভাব দেখা দেয়।
ওষুধ বুঝেশুনে খান। কারণ কয়েকটি ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন, বিটা ব্লকারস, অম্বলের ওষুধ, কোথাও ফুলে গেলে তার ওষুধ, পেটে আলসার হলে তার ওষুধ ও বহুমূত্ররোগের জন্য ওষুধ কিংবা এছাড়া পলিসিস্টিক ওভারির জন্য মহিলারা যে ওষুধগুলো খেয়ে থাকেন, এইসব ওষুধ থেকে শরীরের ভিটামিন বি১২-এর অভাব দেখা দিতে পারে।
কয়েক ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক অথবা বুক জ্বালার ওষুধ খেলে অন্ত্রের ভেতরে যে স্বাভাবিক উদ্ভিদ থাকে সেগুলো মরে যায় যার ফলে শরীরে এই ভিটামিনটির অভাব দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধ খেলে শরীরে ফলিক অ্যাসিড, বি১২ ও বি৬ ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুুন