বিরাট কোহলির সেই বহু কাঙ্ক্ষিত মহাকাব্যিক ইনিংসটি বোধহয় খুব বেশি দূরে নয়

একার হাতে জেতাতে ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতাকে মাপকাঠি করে খেলোয়াড়ের মান নির্ণয় করা উচিৎ নয়

 |  2-minute read |   09-08-2018
  • Total Shares

লারা, তেন্ডুলকর, মেসি রোনাল্ডো।

ফুটবল ও ক্রিকেটের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। দুই ভিন্নধর্মী খেলার প্রতিনিধি হয়েও এই চারজনের মধ্যে প্রভূত একটি মিল রয়েছে। তাঁদের দিনে তাঁরাই রাজা। কোনও খেলোয়াড় যদি একার হাতে দলকে জেতাতে ব্যর্থ হন তাহলে সেই ব্যর্থতাকে মাপকাঠি করে সেই খেলোয়াড়ের মান নির্ণয় করে ফেলাটা উচিৎ কাজ নয়। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে একজন খেলোয়াড় যত বেশি একার হাতে দলকে জেতাতে সফল হবেন ততই দ্রুত তিনি কিংবদন্তি হয়ে উঠতে পারবেন। এজবাস্টন টেস্টে সেই সুযোগটাই বিরাট কোহলি পেয়েছিলেন।

ইংল্যান্ডের সিম উইকেটে ভারতীয় ব্যাস্টম্যানরা দাঁড়াতেই পারেননি। দু'ইনিংস মিলিয়ে ভারত যা রান তুলেছে তার অর্ধেকেরও বেশি এসেছে বিরাটের ব্যাট থেকে। তাও এহেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। চতুর্থ ইনিংসে বিরাট যদি ভারতকে জিতিয়ে দিতে পারতেন তাহলে তাঁর ক্রিকেটীয় সত্ত্বা আজ এক অন্য মাত্রা পেয়ে যেত। পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা যাচ্ছে বিরাটের টেস্ট গড় এখনও সর্বকালের সেরা পনেরোর তালিকায় স্থান পায়নি। কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যে মহান তা তাঁর প্রতিভা এবং তাঁর অবিরাম জেতার ক্ষিদে দেখলেই অনুমান করে নেওয়া যায়।

body_080918122912.jpgএকজন খেলোয়াড় যত বেশি একার হাতে দলকে জেতাতে সফল হবেন ততই দ্রুত তিনি কিংবদন্তি হয়ে উঠতে পারবেন

৬৭টি টেস্ট খেলা ভারত অধিনায়কের বর্তমান টেস্ট গড় ৫৪। সমসাময়িকদের মধ্যে একমাত্র স্টিভ স্মিথ তাঁর থেকে এগিয়ে আছেন। ৬৪টি টেস্টে তাঁর টেস্ট গড় ৬১।

এর সঙ্গে অবশ্যই বিরাটের ম্যাচ জেতানো একদিনের ম্যাচগুলোকেও যোগ করতে হবে। তাই তো প্রবল বিতর্কের মাঝেও তিনি যে ক্রিকেটের সব ফরম্যাটেই মহান তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেটকেই ধরা হয়। আর, টেস্ট ক্রিকেট একজন ব্যাটসম্যান একা লড়াই করেও ম্যাচ জেতাতে ব্যর্থ হলে তাঁকে সেরার তালিকায় রাখা হবে কিনা এ নিয়ে দ্বন্ধ বহু দিনের। এই বিতর্ক চলতেও থাকবে। ১৯৯৯ সালে চেন্নাইতে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে। একার কাঁধে দেশের দায়িত্ব নিয়েও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সচিন। কিন্তু এখনও অনেকেই মনে করেন সেই ১৩৬ রানের ইনিংসটাই সচিনের জীবনের সেরা ইনিংস।

body1_080918122938.jpg৬৭টি টেস্ট খেলা ভারত অধিনায়কের বর্তমান টেস্ট গড় ৫৪

সেই ম্যাচে চির-প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ছিল ভারত। পিঠে চোট নিয়েও শুধু একা লড়াই করে যাচ্ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। কিন্তু জয়ের জন্য যখন আর মাত্র ১৬ রান প্রয়োজন তখন ই আউট হয়ে যান তিনি।

সচিন আউট হওয়ার কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই ভারতের ইনিংসও মুড়িয়ে যায়। আপামর ভারত সমর্থকদের বিহ্ব্ল করে জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে ওয়াসিম আক্রমের পাকিস্তান। সে দিনের ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে উঠে ছিলেন তেন্ডুলকর।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের শুরুর দিকে সচিন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় বেশ কিছু চোখ ধাঁধানো শতরান করেছেন। তাঁর ৫১টি টেস্ট শতরানের কয়েকটি দেখলে এখনও চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু ১৯৯৮ সালে শারজাহতে মরুঝড়ের মধ্যে তাঁর একদিনের ক্রিকেটের ম্যাচ জেতানো ইনিংসগুলোকেও বাদ দিলে চলবে না।একার হাতে ম্যাচ জেতানোর সুযোগ ব্রায়ান লারাও পেয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে ব্রিজটাউনে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ ইনিংসে ১৫৩ রানের ম্যাচ বাঁচনো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। আর, ২০০১ সালে কলকাতার ঐতিহাসিক টেস্টে ভিভিএস লক্ষ্মণের ২৮১ রানের ইনিংসটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বিদেশের মাটিতে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে বিরাট কোহলির সেই বহু কাঙ্খিত মহাকাব্যিক ম্যাচ জেতানোর ইনিংসটি খুব বেশি দূরে নয়।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RASESH MANDANI RASESH MANDANI @rkmrasesh

Broadcast journalist. A sports buff. Honest human being.

Comment