আমরা কেন তাঁকে অপছন্দও করি আবার ভালোওবাসি

তাঁর চেয়ে অনেক অর্থবান আছেন, কিন্তু তাঁর জীবনযাত্রার ধারাটাই যে অন্যরকম!

 |  5-minute read |   08-02-2019
  • Total Shares

"আচ্ছে দিন" আবার ফিরে আসতে চলেছে। এর জন্য জনৈক সাজিদকে ধন্যবাদ। হাটে হাঁড়ি ভাঙার জন্য, থুড়ি, প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত দস্তাবেজে তাঁর অতি মূল্যবান সিলমোহরটি মারার জন্য। এ দেশে কিং অফ গুড টাইমসের হিন্দি সংস্করণকে (আচ্ছে দিন) হাতিয়ার করে নির্বাচন যুদ্ধ জয় করা যায়। কিন্তু সত্যিকারের কিং অফ গুড টাইমসকে তো এবার নিজের জন্য একগুচ্ছ আইনজীবী খুঁজে বের করতে হবে!

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মতোই আমাদের এখন ভালো সময়ের প্রত্যাশায় বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাঁর কাছে এখনও বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, অন্তত তিনি নিজে তো সেই দাবিই করে থাকেন। তিনি তাঁর ঋণের আসল টাকা ফেরত দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যার অঙ্ক নয় নয় করে ৯০০০ কোটি টাকা। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। কিন্তু তা বলে তিনি অবশ্য আসলের সঙ্গে সুদটা গুণবেন না। তাই তাঁর ভালো সময় শুরু হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলো মোটেই তাঁকে ভালোভাবে স্বাগত জানাবে না।

সুদ থেকে উপার্জিত অর্থই ব্যাঙ্কগুলোর প্রাণভোমরা। আর সুদ না পাওয়া মানেই অনাদায়ী ঋণের বোঝা বৃদ্ধি। তাও অবশ্য ব্যাঙ্কগুলো কেন ঋণ খেলাফিদের কাছ থেকে যা পাওয়ায় যায় সেটুকুই নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। এর জন্যও কি আমাদের টেলিভিশনের পর্দায় গলা ফাটানো উচিত নয়?

কিন্তু বিজয়রথের প্রত্যাবর্তনের সময়ে আমরা আর কী আশা করতে পারি?

নিঃসন্দেহে একটি বিলাসবহুল পার্টির আয়োজন করা হবে। তাঁর ব্যক্তিগত একটি নৌকা থাকতে পারে যার গায়ে লেখা থাকবে - 'ফেরারি ফিরে এসেছে'। আর, এর পরেই আরব সাগর জুড়ে পানীয়ের ফোয়ারা ছুটবে। কিংফিশারের সেই বিখ্যাত জিঙ্গল এখনও মাঝে মাঝে টেলিভিশনের পর্দায় শোনা যায় আর আমাদের নিমেষে সেই সব স্বপ্নের রাতগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় -- যে রাতগুলোতে ভারতের মধ্যবিত্তরা ঠিক অভ্যস্ত নন।

তাঁর ক্ষমতা তাঁর নতুন মুখ তুলে আনার প্রচেষ্টা এবং এই নতুন মুখকে দ্রুত জনপ্রিয় করে দেওয়া কিংবা ক্রিকেট ম্যাচে সেলিব্রিটিদের মাঝে ঘেরাও হয়ে থাকা - তিনিই কিন্তু আমাদের আকাশে চুম্বন করতে শিখিয়েছেন এবং বেশ ভালোভাবেই শিখিয়েছেন। তুড়ি মেরে সৌন্দর্য জগতের যাঁকেই তিনি ডেকেছেন তিনিই তাঁর ডাকে তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়েছেন। সেলিব্রিটিদের তো তাঁর তুতো ভাই বোন বলে মনে হত!

body_020819050339.jpgকোনও রকম সংকোচ ছাড়াই বিলাসবহুল জীপনযাপন করতেন তিনি [ছবি: রয়টার্স]

আমরা সকলেই জানি যে পয়সাওয়ালারা নিজেদের চারপাশে একটি বৃত্ত তৈরি করে রাখেন আর সেই বৃত্তের ভিতরে কী হচ্ছে তা জানতে আমরা সদা উৎসুক হয়ে থাকি। কিন্তু বিজয় মালিয়া নিজের চারপাশ থেকে সেই রুপালি পর্দাটা এক ধাক্কায় সরিয়ে ফেলেছিলেন এবং আমাদের দেখিয়েছিলেন যে বড়লোক হওয়ার সঠিক মানেটা কী। মাঝে মাঝে আমি ভাবতে বসি, তাঁর আদর্শ হয়তো কোনও এক ইউরোপীয় প্লেবয় হয়ে থাকবেন। অনেকেই রিচার্ড ব্রানসনের কথা বলেন। কিন্তু তা তো লাল রঙা কিংফিশার এয়ারলায়েন্স ও যৌনতায় ভরপুর ইয়ানা গুপ্তার জন্য!

তাঁর কাছে নগদ অর্থ কোনও ব্যাপারই নয় এবং তিনি কোনও রকম সংকোচ ছাড়াই বিলাসবহুল জীপনযাপন বেছে নেন। তা সে ঘোড়দৌড়ই হোক কিংবা সেলিব্রিটিদের সঙ্গে ফোটো সেশন -- সবকিছুতেই তিনি বেপরোয়া।

একজন পলাতক ব্যবসায়ীর আখ্যা পাওয়ার আগে তিনি বিলাসবহুল পার্টিগুলোকে একটি অন্য মাত্রা দিয়েছিলেন - একথা এখন কোনও ভাবেই ভুলে গেলে চলবে না। অর্ধনগ্ন রমণীরা সুইমস্যুট পরে তাঁর ইয়াচ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন - এ দৃশ্যও যে সহজে ভোলার নয়। তাঁর ক্রিকেট দল ম্যাচ হারলেও তিনি যে ভাবে পার্টি ডেকে আমন্ত্রিতদের অভ্যর্থনা জানাতেন তার থেকে একটা বিষয়ে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল - তিনি সিংহহৃদয়ের অধিকারী।

তাঁর সিংহহৃদয় আরও একটি জিনিস নিশ্চিত করত। নতুনদের কেরিয়ার গড়ে দেওয়া - তা তিনি মডেলই হোন কিংবা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। তাঁর যত দোষই খুঁজে চলি না কেন একটা বিষয়ে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই - তাঁকে 'সস্তায়' পাওয়া যায় না। এছাড়াও তিনি অনেক অদ্ভুতুড়ে কাজ করেছেন। যেমন কিংফিশার ক্যালেন্ডার। ভাবতে পারেন, শুধুমাত্র ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেও খবরের শিরোনামে থাকা যায়? ক্যালেন্ডারের থিম থেকে শুরু করে লোকেশন, চুলের স্টাইল থেকে শুরু করে মেকআপ এমনকি জলের রং নিয়েও খবর করা হত।

তিনি সুন্দরের পূজারী এবং নিজেকে রসজ্ঞ বলে সম্বোধন করতেন। তাঁকে আর কে খামোকা দোষ দিতে যাবে? লক্ষ লক্ষ বিয়ারের বোতল বেচে যে রোজগার হত তা কী আর সহজে শেষ হয়? তাই তো তিনি রাজকীয় খরচ করতেন। তিনি স্পোর্টস কার কিনে চড়ে বেড়াতেন এবং তা দেখে কোনও ছোট শহরের কোনও এক ছোট ছেলে একদিন এই ধরণের একটি গাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখত। তাঁর পছন্দের মহিলারা ভালো ভালো কাজ পেতেন আর এক অনামী মফস্বলের মেয়ে একদিন মুম্বাইয়ে এসে ভাগ্য অন্বেষণের স্বপ্ন দেখতেন।

body1_020819050445.jpgএমন বিলাসবহুল জীবনের জন্যেই তিনি অনেকের হিংসার কারণ হয়ে উঠেছিলেন [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

মালিয়া নিজের জীবনযাপনটাকেই 'সেক্সি' করে তুলেছিলেন।

আপনার কাছে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে কোনও রকম অনুশোচনা না করে তা দেখাতে থাকুন। খরচ করতে পারলে তার জীবন অনন্য। বিশ্বের তাবড় তাবড় ক্রিকেটাররা কিংফিশারের ধ্বনিতে তাল মেলান। মহাতারকাদের দিয়ে কয়েক দিন ব্যাপী ফটোশুট করতে পারেন আর রীতিমতো একটি ডিম্বাকৃতি হিরে পরে ঘুরে বেড়াতে পারেন।

পয়সা সহজে হার মানে না। তিনি একজন সাংসদ ছিলেন। অর্থাৎ ভিআইপি পাসপোর্টের অধিকারী। কিন্তু এর পরেই চেকগুলো হঠাৎ বাউন্স করতে শুরু করল। তিনিও এক ব্রিটেনের প্রাসাদোপম বাড়িতে আশ্রয় নিলেন এবং জীবনটিকে কিউবার সিগারের মতো সীমাবদ্ধ করে রখলেন।

তাহলেও মালিয়ার এই আরবান জীবনযাপনের জন্যে আমরা তাঁকে মনে রেখেছি?

body2_020819050553.jpgব্রিটেনের প্রাসাদোপম বাড়িতে তাঁর জীবন কিউবার সিগারের মতো সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল [ছবি: এপি]

তাঁর চেযে অনেক বেশি অর্থবান লোকের অভাব নেই। কিন্তু তিনি লোকের মনে যে পরিমাণ অসূয়ার সঞ্চার করতে পেরেছেন তা আর কেউই পারেননি। আর তার মূল্যই এখন তাঁকে দিতে হচ্ছে। তাঁর পয়সায যাঁরা এতদিন পান করেছেন তাঁরা এখন তাঁকে পরিত্যাগ করেছেন। আইনি মামলায় তিনি জয়ী হলে আবার তাঁরা ফিরে আসবেন।

আর একটা কথা, মন্দির ভ্রমণের জন্যেও তাঁর সুনাম রয়েছে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ANJOO MOHUN ANJOO MOHUN @anjoomohun

Addicted to sports and is indebted to the inventor of the flat screen TV.

Comment