গ্রীষ্মকালে জল কম খেলে মহিলাদের মূত্রনালীতে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে

৪০% মহিলা সারাজীবনে কোনও না কোনও সময় মূত্রনালীর সংক্রমণে ভোগেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে ১২%

 |  4-minute read |   10-06-2018
  • Total Shares

খ্রিস্ট জন্মের অন্তত ১৫৫০ বছর আগে মিশরের মানুষ নিজেদের চিকিৎসা পদ্ধতি যে বাকলে লিপিবদ্ধ করেছেন তাকে ইবার প্যাপিরাস বলা হয়। এত পুরোনো এই ইবার প্যাপিরাসে মহিলাদের মূত্রনালীর সংক্রমণের কথা উল্লেখ করা আছে।

দেশবিদেশের বিভিন্ন গবেষণা বলছে ৪০ শতাংশ মহিলা তাঁদের জীবনে কোনও না কোনও সময় মূত্রনালীর সংক্রমণে ভোগেন, পাশাপাশি পুরুষদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা মোটে ১২ শতাংশ। আর যে মহিলারা মূত্রনালীর সংক্রমণে একবার ভুগেছেন তাঁদের প্রায় ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রেই সংক্রমণ পুনরায় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

body6_061018072712.jpgগর্ভবতী মহিলার এই সংক্রমণ হলে সেটা বেশ চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়

এটি একটি জীবাণুবাহিত রোগ, সংক্রমণটি কিডনি, মূত্রথলি কিংবা মূত্রনালীতে ছড়াতে পারে। তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে ঠিক যেখানে সংক্রমনটি বাসা বাঁধে, লক্ষণগুলোও সেই অনুযায়ী হয়। অর্থাৎ কারও যদি কিডনিতে সংক্রমণ হয় তাহলে তাঁর পিঠের নিচের দিকে অসহ্য ব্যথা হয়।

কারণ

গবেষণা বলছে, পুরুষের তুলনায় নারীরা মূত্রনালীর সংক্রমণে বেশি আক্রান্ত হন। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে।

গরমকালে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এ ছাড়াও নোংরা জায়গায় প্রস্রাব করলে সেখান থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। গরমকালে শরীরকে তাই সব সময় সম্পৃক্ত রাখতে হবে। জলের অভাবে শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর জীবাণু ও পদার্থ বেরিয়ে যেতে পারে না তাই এই জীবাণুর ফলে সংক্রমণ হতে পারে।

পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য ছোট, মাত্র চার সেন্টিমিটার বলে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। এ ছাড়া মূত্রপথ ও মলদ্বার কাছাকাছি অবস্থিত বলে মহিলাদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। 

দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে থাকা ও প্রতিবার যৌনমিলনের পর নিজেকে পরিষ্কার না রাখাও এই সংক্রমণের অন্যতম কারণ।

অনেক মহিলা গর্ভনিরোধক ব্যবহার করেন যেমন ডায়াফ্রাম। এটি ঠিক মতো ব্যবহার না করলে এর থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। জল কম খেলেও প্রস্রাবে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।

body1_061018072747.jpgক্যাথেটার ব্যবহারের জন্যেও অনেক সময় এই সমস্যাটা হতে পারে

সাধারণত যে জীবাণুটির সংক্রমণের ফলে এই রোগটি হয় তার নাম এস্কেরিচিয়া কোলাই বা ই-কোলাই (Escherichia coli)।

মূত্রনালীতে কোনও ধরণের অস্বাভাবিকতার থেকেও বারবার সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। যদি কারও বহুমূত্র রোগ থাকে তাহলে তাঁর ক্ষেত্রে এই সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। 

গর্ভবতী মহিলার এই সংক্রমণ হলে সেটা বেশ চিন্ত্ৰার বিষয়ে হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এই সময় যদি কেউ এই সংক্রমণে আক্রান্ত হন তা হলে সেটা সহজে সারতে চায় না। গর্ভাবস্থায় সংক্রমণটি হলে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে কিংবা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রসব হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তার ফলে সদ্যোজাতর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে প্রায় ৩ থেকে ২৪ শতাংশ।

ক্যাথেটার ব্যবহারের জন্যেও অনেক সময় এই সমস্যাটা হতে পারে। দেখা গেছে যাঁরা ভীষণ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন তাঁদের এই সংক্রমণ হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। কারও যদি কিডনিতে পাথর থাকে তাহলে তাঁর ক্ষেত্রে এই সংক্রমনটি বারবার হওয়া আশঙ্কা থাকে।

ঋতুস্রাবের সময় পরিছন্নতা বজায় না রাখলে সমস্যা হতে পারে। স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পুন ব্যবহার করলে নির্ধারিত সময় সেটিকে বদলাতে হবে নাহলে তার থেকে সংক্রমণ হতে পারে।

মূত্রনালীর সংক্রমণের কারণে শরীরে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ

১.বারবার প্রস্রাব হওয়া ও আরও প্রস্রাব হবে এমন মনে হওয়া

২.কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা 

৩.প্রস্রাবের সময় মূত্রনালীতে জ্বালাপোড়া অনুভব করা

৪.তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করা

৫.প্রস্রাবের রং কাঁচা হলুদ বা ঘোলাটে হলুদ হওয়া

body2_061018072536.jpgতলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করা

৬.মাছ ধুলে ঠিক যেমন গন্ধ হয় প্রস্রাবে ঠিক তেমন একটা দুর্গন্ধ হওয়া

৭.প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোনো

৮.দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়া

৯. অল্প অল্প করে বারবার প্রস্রাব হওয়া

body3_061018072330.jpgক্র্যানবেরি জ্যুস মূত্রনালীর সমস্যা দূর করে

প্রতিকার

বড়-ছোট সকলেরই মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে পারে তাই সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। 

১.প্রতিদিন অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার লিটার জল খেতে হবে

২.প্রস্রাব চেপে না রাখা

৩.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে

body5_061018072630.jpgপ্রতিদিন অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার লিটার জল খেতে হবে

৪.যৌনমিলনের আগে ও পরে প্রস্রাব করা ও নিজেকে পরিষ্কার করা

৫.পরিষ্কার জায়গায় প্রস্রাব করা

৬.ব্যক্তিগত পরিছন্নতা বজায় রাখা

body4_061018072443.jpgশসা জাতীয় ফল প্রচুর পরিমাণে খান

৭.সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করা

৮. সময় মতো ন্যাপকিন বদল করা

৯.সঠিক পদ্ধতিতে গর্ভনিরোধক যেমন ডায়াফ্রাম ব্যবহার করা

১০.বাজারে যে সব ভালো ব্র্যান্ডের ক্র্যানবেরি জুস পাওয়া যায় সেগুলো খাওয়া যেতে পারে

১১. এমন ধরণের শাকসবজি ও ফল খান যাতে প্রচুর পরিমাণে জল আছে যেমন শসা বা তরমুজ

সংক্রমণ হলে মূত্রের নমুনা সংগ্রহকরণ করে কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে যেমন মূত্রের কালচার ও সেনটিটিভিটি টেস্ট। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে।

সময় মতো সংক্রমণের চিকিৎসা না হলে দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি বারবার এই সংক্রমণ হলে সেপসিস হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

DR. ABINASH RAY DR. ABINASH RAY

GYNECOLOGIST

Comment