নিশ্চিত থাকুন, অন্তত পর্যটনের জন্যে এ রাজ্যে কেরল পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে না
বাংলার ভ্রমণ ব্যাণিজ্যিক ভাবে এতটা সফল নয় যে তা পরিবেশের উপর নির্মম প্রভাব ফেলবে
- Total Shares
সুশীল সমাজ নিশ্চুপ। বিদ্দজনের তর্ক সভার বিষয়টি খুব জোড়াল না বলে তারাও উদ্যমহীন। আসলে তাঁদেরই বা দোষ কী - কাউকে দোষ দিতে না পারলে তাঁদেরই বা সময় কাটবে কী করে? কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে তো দোষ দিতে হয় প্রকৃতিকে, সেটায় বুঝি তেমন একটা মজা নেই।
টানা আড়াই মাস ধরে ভারী বর্ষণে স্বয়ং দেবতার ঘরই ভেসে গেল। এতে স্বয়ং বিধাতা অথবা প্রকৃতিকে দোষ দেওয়া কি কম এলেমের কাজ? অবশ্য কেরলে প্রতি বছরই প্রচুর বৃষ্টি হয়, তবে এবছর যেন স্বয়ং বরুন দেবই ক্ষুব্ধ পুরো দেশের উপর। আড়াই মাসে কেরলে প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কোনও বাঁধই সেই জল ধরে রাখতে পারেনি, প্রায় ৩৫টি বাঁধের দরজা খুলতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কাটা ঘায়ে খানিকটা নুনের ছিটে দিয়েছে হড়কা বান। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও অবধি প্রায় ৩৫০র উপর মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এবং, আনুমানিক ১৯,৫০০ কোটি টাকার শস্য এবং সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেবভূমিতে মন্দির নির্মাণে তো সমস্যা নেই, হোটেল নির্মাণে আছে [ছবি: পিটিআই]
কেরলের জনজীবন এখন স্তব্ধ নয়, বিধ্বস্ত। মানুষ কার কাছে প্রার্থনা করবে যখন স্বয়ং ঈশ্বরই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কেবল যুক্তি-তক্ক-গপ্প আর মোমবাতি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোটা কতটা যুক্তিযুক্ত বুঝি না।
তবে এর মধ্যেই এক শ্রেণীর বিদ্দজন তাঁদের শান দেওয়া বুদ্ধি এবং ধারাল জিহ্বা নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন এই ভয়ঙ্কর ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে। যেহেতু প্রকৃতির ঘাড়ে দোষ চাপানোটা অত্যন্ত সোজা তাই তাঁরা ও পথ দিয়ে হাঁটেননি। তাঁদের মতানুযায়ী কয়েক দশক ধরে কেরলের ভ্রমণ যেমন ব্যাণিজ্যিক ভাবে সফলতা পেয়েছে তাতে দিনদিন গুণোত্তর প্রগতিতে বেড়ে উঠেছে সেখানকার হোটেল এবং রেস্তোরাঁ। মাত্রাহীন বাণ্যিজিক স্থাপত্যই নাকি এই দুর্যোগকে বেশি করে উস্কে দিয়েছে। যদিও যুক্তি দেখাতে তাঁরা নারাজ - সব কথার কি আর যুক্তি হয়?
দিঘা দার্জিলিং ছাড়াও যে বাংলার এত সম্পদ,তা বাংলার বাইরে কটা লোক জানে?
দেবভূমিতে মন্দির নির্মাণে তো সমস্যা নেই, হোটেল নির্মাণে আছে। তাতে ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স নষ্ট হয় কী না। তাঁরা আবার পশ্চিম বাংলাকে নিয়েও বেশ উদ্বিগ্ন। কপালে ভ্রুকুটি, দিনে পনেরো কাপ চা, দু'প্যাকেট সিগারেট উড়িয়ে দিয়ে দিনরাত কেবল সেই তর্কই চলছে - বাংলার এরম দুর্দিন এল বলে।
একটি কথা আমার জানতে ভারী ইচ্ছে হয় যে বাংলার ভ্রমণ ব্যাণিজ্যিক ভাবে কতটা সফল? সেই উদ্যোগই বা কোথায়? দিঘা দার্জিলিং ছাড়াও যে বাংলার এত সম্পদ,তা বাংলার বাইরে কটা লোকই বা জানে? তেমন কোনও বিজ্ঞাপন বা উদ্যোগ কোনওটাই নেই। বাংলার আনাচে কানাচে কোনও জায়গাতেই ভ্রমণকে তেমন উৎসাহিত করা হয় না, অথচ ভারতের সব থেকে বেশি পর্যটক এই রাজ্যে।
কথায় বলে গেয়ো যোগী ভিখ্ পায় না। তাই বিদ্দজনেরা অনায়াসে নিজেদের রক্তচাপ কমাতে পারেন। যত দিন এ রাজ্যের মানুষ নিজ রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে দাপাদাপি করছে, ততদিন আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও দরকার নেই।