রাজনৈতিক বিষয়ে একগুচ্ছ ছবি মুক্তির অপেক্ষায়, এর প্রভাব কি ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পড়বে?

ঘটনার উপরে ভিত্তি করে তৈরি ছবি কি রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে?

 |  3-minute read |   10-01-2019
  • Total Shares

মেলোড্রামা না থাক, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই বলিউডের সিনেমাগুলো আরও মশলাদার হয়ে উঠবে। আর নির্বাচনী মরসুমে এ ধরণের ঘটনা কোনও মতেই 'আকস্মিক' নয়।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বায়োপিক 'দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার' মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত। একই ভাবে বড়পর্দায় আসতে চলেছে 'উরি - দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক'। নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের উপর এই সিনেমাটির চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে।

খুব শীঘ্রই শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের দ্বিভাষিক বায়োপিক 'ঠাকরে'ও মুক্তি পেতে চলেছে। মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে, যেখানে শিবসেনার মুখপত্র আঞ্চলিক ধর্মীয় আবেগের উপর প্রায়শই প্রভাব ফেলে থাকে, সেখানে এই বায়োপিক যে শিবসেনার ভাবমূর্তি অনেকটাই উজ্জ্বল করবে তা বলাইবাহুল্য।

body_011019033513.jpgদ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার কি ইচ্ছাকৃত নাটকের সৃষ্টি করছে [স্ক্রিনগ্র্যাব]

কিন্তু এ বছর আরও বড় মাপের বিনোদন যে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে - আরও একটি বায়োপিক যার নাম 'নরেন্দ্র মোদী'।

মেরি কোম ও সর্বজিতের উপর অতীতে বায়োপিক তৈরি করেছিলেন পরিচালক উমাং কুমার। এবার তিনি মোদীকে নিয়ে বায়োপিক তৈরি করতে চলেছেন। এই সিনেমাটির লোকসভা নির্বাচনের আগে মুক্তি পাওয়ার কথা আছে।

এই অভাবনীয় উত্থান ও ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার জন্য মোদীর উপর একটি বায়োপিক তৈরি হওয়া উচিতই ছিল। একজন চা-ওয়ালার বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠার ঘটনা নিঃসন্দেহে সকলকে অনুপ্রাণিত করবে।

স্বাধীন ভারতের এমন হাতেগোনা কয়েকজন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন যাঁদের ব্যক্তিগত প্রভাব দলের থেকেও বড় ছিল। তা যদি না হত তা হলে ২০১৪ সালে লোকে 'বিজেপি সরকারের' কথা বলত, 'মোদী সরকারের' কথা নয়।

কিন্তু মুক্তির সময়কাল দেখলে মনে হচ্ছে এই সিনেমাগুলো শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে নয়, ভোট টানতেও তৈরি করা হয়েছে।

তবে এটি আসলে কোনও নতুন ধারা নয়।

২০১৭ সালেও এ রকম দু'টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল - 'টয়লেট: এক প্রেম কথা' ও 'ইন্দু সরকার'।

'টয়লেট' সিনেমাটি স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অনুপ্রেরণায় তৈরি করা হয়েছিল। 'ইন্দু সরকার' সিনেমাটির নেপথ্যে ছিল ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালে কংগ্রেসের আমলের জরুরি অবস্থার গল্প। এই দু'টি বছর ইন্দিরা গান্ধীর ১৪ বছর রাজত্বকালের কালো অধ্যায় বলে পরিচিত।

একটা কথা বলতেই হচ্ছে এই সিনেমার প্রভাব বাস্তবেও সত্যি সত্যিই পড়ে।

'দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার'এর ট্রেলার ও মুখ্য অভিনেতা অনুপম খেরের দু'টি সাক্ষাৎকার ইতিমধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই সিনেমাকে কংগ্রেস বিরোধী এবং বিজেপির পক্ষে বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদি সমালোচকদের কথা সত্যি হয়ে থাকে তা হলে মানতেই হচ্ছে যে দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলো রাজনীতির নতুন মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে।

body1_011019033613.jpgনরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বায়োপিক তৈরি উচিতই ছিল [স্ক্রিনগ্র্যাব]

এবং সবশেষে কংগ্রেস সভাপতি তো রয়েছেনই। তাঁর উপর তৈরি সিনেমার নাম 'রাহুল, নাম তো শুনা হোগা'।

এমনিতেই লোকে রাহুল গান্ধীর পদক্ষেপগুলোকে 'নাটকীয়' বলে সম্বোধন করে থাকেন - বিশেষ করে তিনি যখন সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীকে চোখ মেরে এবং জড়িয়ে ধরে একটি কাণ্ড (ইচ্ছাকৃতও হতে পারে) বাধিয়েছিলেন।

এই সিনেমাগুলো যদি কংগ্রেসকে সমস্যায় ফেলে দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে রাহুল গান্ধী আরও হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন।

উনি হয়তো বেশ কয়েকটি নতুন নামের সিমেনা তৈরির উপদেশ দেবেন - 'বিকাশ - দ্য ডেভেলপমেন্ট', 'লগান - দ্য জিএসটি', 'নোটবন্দি - দ্য ডিমনিটাইজেশন'।

কিন্তু পর্দার বাস্তবায়ন কি সত্যি সত্যিই বাস্তব জীবনের রাজনীতির উপর প্রভাব ফেলে?

body2_011019033713.jpgবাস্তব জীবনেও কংগ্রেস সভাপতি বেশ নাটুকে [স্ক্রিনগ্র্যাব]

লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদীর উপর একটি বায়োপিক বাস্তবে মোদীর ভাবমূর্তি নায়োকচিত করে তুলতে পারে। সলমন খানের 'সুলতান' সিনেমার সংলাপটা মনে পড়ে, একটু বদলে বলতে হয় - "মোদী কো সির্ফ একহি আদমি হারা স্যাকে হ্যায়, ওহ হ্যায় মোদী খুদ'।

সিনেমা হোক কী না হোক, ২০১৯ সালে মোদীর এই অপরাজেয় ভাবমুর্তির পরীক্ষা হতে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী কি তাঁর ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারবেন?

উত্তর জানতে হলে আরও কিছুদিন ধৈর্য্য ধরতে হবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MAJID HYDERI MAJID HYDERI @majid_hyderi

The writer is a journalist based in Kashmir.

Comment