যৌন হেনস্থা করেও বাঁচবেন কী ভাবে? বলিউডের নায়ক হয়ে যান

জনসমক্ষে তনুশ্রীকে হেনস্থা করেছিলেন নানা, কারণ তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন

 |  4-minute read |   04-10-2018
  • Total Shares

অনেকেই মনে করেন যে মহিলারা যৌন হেনস্থা নিয়ে মিথ্যা অভিযোগই করে থাকেন। লোকে যখন ধারণা করেই বসে থাকে যে একজন মহিলা এই ধরণের মিথ্যা অভিযোগ করছেন শুধুমাত্র অভিযুক্তকে অপদস্থ করবেন বলে বা তিনি নিজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবেন বলে তখন সত্যিই বেশ অবাক লাগে। তাঁদের এই ধারনাকে যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেওয়া হয়, তা হলেও এটা তো সত্যি যে সেই মহিলাকে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তুবই স্বাভাবিক যে যে অভিযোগ করা মানেই অস্বস্তিকর প্রশ্নের সামনে পড়াটাই ভবিতব্য।

অনেক সময় আবার এত প্রশ্নের পর অভিযোগকারিণীকে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে যে, পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য তিনি যেন মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করার পরামর্শও দেওয়া হয়ে থাকে যাতে সেই অভিযুক্তের সম্মানহানি না হয়।

এই ধরণের লোকেরা মনে করেন যে পুরুষরা তাদের এই ধরনের আচরণের জন্য শাস্তি ভোগ করতে পারে না। তারা এও মনে করে যে যদি ধর্ষণ না হয়ে থাকে তাহলে সেই অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও মানে হয় না। চিত্রতারকা বা ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের ক্ষেত্রে এই ধারণাগুলোকে আরও ফুলিয়েফাঁপিয়ে দেখান হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বিখ্যাত লোকেদের কার্যত পুজো করা হয়। তাই এই বিখ্যাত লোকেরা মনে করে থাকেন যে যা খুশি করেও তাঁরা পার পেয়ে যেতে পারেন।

যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে এই সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। শুধু মাত্র অভিযুক্তরা নন, তাঁর আশপাশের কলাকুশলীরাও বিশ্বাস করেন যে একজন বড় মাপের তারকা যৌন হেনস্থা করতেই পারেন।

সম্প্রতি অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত নতুন করে অভিযোগ করেছেন যে ২০০৮ সালে নানা পাটেকর নাকি তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। আর এই মামলাতেও এই বিষয়গুলো ফুটে উঠছে।

body_100418055741.jpgধর্ষণের অভিযোগ না হলে সেই অভিযোগ গুরুত্বহীন [সৌজন্য: ইন্ডিয়া টুডে]

এই ঘটনাটির সঙ্গে ওয়াকিবহাল অনেকেই মনে করছেন যে 'মাথা গরম' করে এই ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেছিলেন নানা। সুতরাং এই মামলায় নানার শাস্তি পাওয়া উচিত হবে না। সে বছর সিনে অ্যান্ড টিভি আর্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশনেও (সিনটা) অভিযোগ করেছিলেন তনুশ্রী দত্ত। কিন্তু সেখানেও অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়। ঘটনার ১০ বছর বাদে দুনিয়া জুড়ে মানুষ যখন আরও সচেতন হয়েছেন তখন ওই প্রতিষ্ঠানই অভিনেত্রীকে সাহায্য করতে উদ্যোগী হয়েছে।

প্রভাবশালী লোকেরা মনে করে থাকেন যে তাঁরা যা খুশি তাই করতে পারেন। কয়েক হাজার বছর আগে উপজাতিদের মধ্যে একটা প্রথা প্রচলিত ছিল -- উপজাতির সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেন বলে রাজাকে উপহার দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হত, তখনও এই ধরণের ধারণাও প্রচলিত ছিল। নারীদের উপর অত্যাচারের পরেও আমরা প্রভাবশালী লোকেদের ক্ষমা করে দিয়ে থাকি কারণ তাঁরা অন্য ভাবে সেই অন্যায়কে পুষিয়ে দেন।

তার মানে আমরা বলতে চাইছি যে একজন পুরুষ সিনেমার সেটে একজন মহিলার শ্লীলতাহানি করতেই পারেন কারণ তাঁর অধিকাংশ সিনেমাই হিট হয়। তনুশ্রী দত্ত এই মামলা করার এক দশক আগে অবধিও লোকে ভাবত একমাত্র ধর্ষণ ছাড়া মহিলাদের উপর আর কোনও রকম অত্যাচারই খারাপ নয়। এরও কয়েক বছর আগে ধর্ষিতারা তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেন।

দেশের সবচেয়ে বীভৎস (বহুচর্চিতও বটে) ধর্ষণের ঘটনাটি কাণ্ডটি ঘটেছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে, যা নির্ভয়া মামলা বলে পরিচিত।

এই ঘটনার পর বিচারপতি জে এস ভর্মার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত আইনকানুন আরও কঠোর করা হয়। পুলিশকর্মীরাই সর্বপ্রথম এই ধরণের অভিযোগের উপর সন্দেহ প্রকাশ করতেন। এই মামলার পর হাজার বছর ধরে চলতে থাকা দৃষ্টিভঙ্গির অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছিল।

প্রচুর মহিলা এখন নিজেদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা বলতে এগিয়ে আসছেন। #মিটু অভিযানের অধিকাংশটাই সদ্ব্যবহার করতে পারেনি আমাদের দেশ। খুব সম্ভবত, বিনোদন জগতের পুরুষতন্ত্র থেকে আমরা এখনও মুক্তি পায়নি বলেই এই অবস্থা। তনুশ্রী দত্ত স্বয়ং এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন: অস্কার জয়ী প্রযোজক হওয়া সত্ত্বেও এবং ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক প্রভাবশালী হওয়া সত্ত্বেও হার্ভে ওয়েইনস্টেনকেও জব্দ করতে পেরেছিল হলিউড।

body1_100418055923.jpgঅভিযুক্তের কিছু হয়নি, উল্টে পেশা ছাড়তে বাধ্য হলেন তনুশ্রী [সৌজন্য: ইন্ডিয়া টুডে]

২০০৮ সালে তনুশ্রী দত্ত সিনটা ও সিনেমার প্রযোজকদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু কেউই কিছু না করায় তনুশ্রী ইন্ডাস্ট্রিই ছেড়ে দেন। ১০ বছর বাদে তনুশ্রী এই ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমকে জানান এবং প্রত্যুত্তরে নানা পাটেকর তাঁকে আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনাটি গোপনে হয়নি। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী তনুশ্রীর অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছিলেন।

পাটেকর কতটা আত্মবিশ্বাসী থাকলে জনসমক্ষে এমন কাণ্ড ঘটানোর সাহস দেখতে পারেন? বিষয়টি ভাবতে অবাক লাগে। এর আগে তিনি আরও কতবার কতজনের সঙ্গে এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন?

আসলে এই ধরণের লোকেদের মানসিকতাই এরকম। তাঁরা জানেন তাঁদের কেউ কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারবে না আর তাই তাঁরা অবলীলাক্রমে এই কাণ্ডগুলো ঘটিয়ে যান।

তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছেন এই বিষয়টিতে নিশ্চয়ই আশ্চর্য হয়েছেন পাটেকরকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ঘটনার পরের দশ বছর তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু করা তো দূরে থাক, তাঁকে হয়তো এ নিয়ে কোনও প্রশ্নও শুনতে হয়নি। উল্টে সিনেমা জগৎ ছাড়তে হয়েছিল তনুশ্রীকে।

body2_100418060047.jpgএ কাজ নানা করতেই পারেন না, বলেছেন রিমি সেন [সৌজন্য: কালার্স টিভি]

এখন বলিউডের অনেকেই এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলছেন। অনেক অভিনেতাই তনুশ্রীর সমর্থনে কথা বলছেন। তাঁরা তনুশ্রীর সাহসিকতাকে বাহবাও দিয়েছেন। আবার অনেকেই আছেন যাঁরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন।

শক্তি কাপুর যেমন বলেছেন, ঘটনাটি ১০ বছর আগে হয়েছিল, আর সেই সময় তিনি 'নিতান্তই শিশু ছিলেন'। রিমি সেন নানাকে সমর্থন জানিয়েছেন কারণ নানা তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ কোনও দিনও করেননি। নানার সমর্থকরা বলেছেন নানার মাথা গরম হতে পারে, কিন্তু তা বলে তিনি কোনও মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণ করতে পারেন না। সুতরাং, নানার কোনও শাস্তি হতে পারে না। আমাদের দুর্ভাগ্য যে তাঁরা স্বীকার করে নিচ্ছেন যে নানার সমস্যা রয়েছে, কিন্তু এই সমস্যার জন্য তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUBUHI SAFVI SUBUHI SAFVI @subuhis

The author Subuhi works in the field of development and is passionate about gender issues.

Comment