নরম মনের দর্শকদের জন্য নয় সুশান্ত সিং রাজপুত ও ভূমি পেড়নেকর অভিনীত 'সোনচিড়িয়া'

১৯৭৫ সালের প্রেক্ষাপটে তৈরি হলেও এই ছবি ২০১৯ সালের সমাজের প্রতিবিম্ব

 |  3-minute read |   04-03-2019
  • Total Shares

পয়লা মার্চ দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল - সোনচিড়িয়া ও লুকাচুপ্পি।এর মধ্যে দ্বিতীয় ছায়াছবিটি প্রথম দিন থেকেই হাউসফুল। অন্যদিকে প্রথম ছায়াছবিটির অধিকাংশ আসনই ফাঁকা ছিল। শুধুমাত্র সিনেমা হলে পা তুলে এসি উপভোগ করতে হাতেগোনা কয়েকজন প্রবীণ দর্শক গিয়েছিলেন। দেশের মানসিকতা এখন যা, তাতে দর্শকরা আর এখন রক্তপাত বা আতঙ্কে ভরা বাস্তবধর্মী সিনেমা দেখতে ইচ্ছুক নন।

সুশান্ত সিং রাজপুত, মনোজ বাজপেয়ী, রণবীর শোরে, আশুতোষ রানা ও ভূমি পেড়নেকর অভিনীত এই সিনেমাটি কেমন হবে তা এই সিনেমার ট্রেলার দেখেই আভাস পাওয়া গিয়েছিল।

চম্বলের ডাকাত-রাজদের নিয়ে এই সিনেমা, যে প্লটের উপর সিনেমা দেখতে দেখতে আমাদের প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে। আমরা ফুলন দেবীর জীবনের উপর সিনেমা দেখেছি আবার গব্বর সিংয়ের মতো সত্যিকারের ডাকাতকে অবলম্বন করেও সিনেমা নির্মিত হয়েছে।

সোনচিড়িয়া সিনেমায় একটি ডাকাত দলের গল্প বলা হয়েছে। 'ঠাকুর' মান সিং নামে একজন এই ডাকাত দলের নেতা।

সিনেমার কয়েকটি দৃশ্যে বুলেটের শব্দ, রক্তপাত, সারি সারি মৃতদেহ ও শুকনো বালি উড়ে যাওয়ার দৃশ্য আপনার মনকে বিষণ্ণ করে তুলতে বাধ্য। কফি মগে চুমুক দিয়ে এই অনুভূতি মন থেকে সরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া তখন আপনার কাছে আর কোনও উপায় থাকবে না।

আর এরপর সিনেমার সামান্য কয়েকটি আবেগঘন দৃশ্য ওষুধ হিসেবে কাজ করবে।

body_030419041553.jpgসোনচিড়িয়া সিনেমার কিছু দৃশ্য [সৌজন্যে: ইউটিউব]

এখানেই অভিষেক চৌবের প্রশংসা প্রাপ্য। এই সিনেমায় তিনি শুধু নির্মমতা কিংবা আবেগের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেননি, চরিত্রগুলোকে এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যাতে অভিনেতা অভিনেত্রী ও দর্শকরা চরিত্রগুলোর থেকে দূরে সরে যেতে না পারেন। সিনেমায় ব্যবহৃত বুন্দেলখণ্ডি ভাষা এই লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করেছে।

মনোজ, কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত একজন দলনেতা, এক কথায় অনবদ্য।

এই সিনেমায় রণবীর বিপথে চলা একজন অনুভূতিপ্রবণ ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। দেখলে মনে হবে বুঝি, এক থাপ্পড়ে তাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনা উচিত। কিন্তু শেষ অবধি তিনি যখন তাঁর ভুল বুঝতে পারবেন তখন আপনিই তাঁর চোখের জল মুছে দিতে চাইবেন। তাঁর ব্যক্তিগত রাগের কারণ আপনি বুঝতে পারবেন। কিন্তু এর পরেও আপনার মনে হবে এতটা আবেগে চলা উচিত নয়। এই সিনেমার নায়ক সুশান্ত। কিন্তু তাঁর চরিত্র নিয়ে আমার কিছু বক্তব্য রয়েছে।

এর পর আবার অভিষেক রয়েছেন। যিনি একদিকে তারকা হতে চান। আবার পরমুহূর্তে লজেঞ্চুস চুষতে থাকা পাশের বাড়ির লক্ষ্মণ। সিনেমার অধিকাংশ সময়েই তাঁকে দেখে লক্ষ্মণ বলে মনে হবে। কিন্তু মাঝে মাঝেই তিনি জনা দশেক শত্রু নিধন করে দেমাকি চালিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে পালিয়ে যান। তাঁর হিরোগিরিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারত। বলা ভালো, নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল।

কিন্তু, হিরোগিরি নিয়ন্ত্রণ করে কি কোনও হিন্দি সিনেমা তৈরি করা সম্ভব?

নৈতিকতার প্রতিমূর্তি ভূমিও অসাধারণ। এই সিনেমায় তিনি একজন 'বাঘী' - অর্থাৎ বাকি ডাকাতদের মতো তিনিও একজন বিদ্রোহী। বাকি ডাকাতদের মতো তিনিও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। বাকি ডাকাতদের মতোই তাঁর 'ধর্ম' তাঁর 'কর্মকে' নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন ডাকাত বা বিদ্রোহীর 'ধর্ম' কী রূপ হতে পারে? এই প্রশ্নটাই এই সিনেমায় বারংবার করা হয়েছে।

ঠাকুর সম্প্রদায়, গুজ্জর সম্প্রদায় ও মলহার সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীদের চম্বল দেখেছে। এরা প্রত্যেকেই প্রশাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করত। এর মানে কি এই তিনটে সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীদের একটিমাত্র শত্রু রয়েছে, মানে তারা কি এক হয়ে গিয়েছে? মলহার ফুলন দেবী ও ঠাকুর ইন্দুমতী তোমরের (ভূমির চরিত্র) মধ্যে একটি সংলাপ এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে যখন ফুলন দেবী বলছেন, জাতপাত পুরুষদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। মহিলারদের অবশ্য জাত-পাতের কোনও বালাই নেই, তারা তো এসব কিছুর নীচেই রয়ে যায়।

আর, তাই, ১৯৭৫ প্রেক্ষাপটে তৈরি এই সিনেমা ২০১৯ সালের সমাজেরও প্রতিবিম্ব।

আমি এই সিনেমাকে পাঁচের মধ্যে সাড়ে তিন দেব। কিন্তু বিধিসম্মত সতর্কীকরণ সহ - এ সিনেমা দুর্বল হৃদয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment