হাইওয়েতে নিয়ন্ত্রিত হোক গাড়ির গতি, চান দু’পাশে বসবাসকারী মানুষজন
জাতীয় সড়ক কোনও রকম প্রতিযোগিতার জায়গা নয়, প্রশাসন পদক্ষেপ করুক
- Total Shares
সাঁতরাগাছি থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের টোলট্যাক্স বরাবর বিভিন্ন বাসস্টপে যাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, প্রায়ই তাঁরা দেখেন, দামি দামি সব গাড়ি তীব্র গতিতে যাচ্ছে কলকাতার দিকে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বরাবরও এমন দৃশ্য নিয়মিত। শুক্র-শনিবার রাতের দিকে এ সব আবার বেশি দেখা যায়। কোথাও দামি বিদেশি স্পোর্টস কার, কোথাও আবার দামি বিদেশি মোটরবাইক। কলকাতায় এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভার এবং বালিগঞ্জের দিকেও এমন দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন।
জনসাধারণের স্বার্থে এই সব রাস্তায় (এখনও যদি না থাকে) ক্যামেরা লাগানো উচিৎ
দ্রুত গতি অনেক সময়ই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। কলকাতায় লেক মলের কাছে সেই দুর্ঘটনা, যাতে নাম জড়ায় অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের, সেখানেও পুলিশ জানিয়েছিল দ্রুত গতির কথা। হুগলির গুড়াপের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পরেও গাড়ির গতির তত্ত্বই উঠে এসেছিল। রবিবার সকালে দামি ফেরারি গাড়ি দুর্ঘটনায় ব্যবসায়ী শিবাজি রায়ের মৃত্যুর পরেও উঠে এসেছে সেই তীব্র গতির তত্ত্ব। বছর কয়েক আগে এক দামি ধাক্কায় মৃত্যু হয় ফোর্ট উইলিয়ামে কর্মরত এক জওয়ানের, ২৬ জানুয়ারির আগে আগেই।
তীব্র গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে পথ-দুঘর্টনা, মৃত্যু। এক-দু’দিন খবর। তবে যাঁরা ওই সব রাস্তার কাছাকাছি বসবাস করেন, বিভিন্ন কারণে ওই সব রাস্তায় হালকা মোটরবাইক-স্কুটার নিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁরা আতঙ্কে। তাঁদের আতঙ্কের কারণ, কারও গতির নেশা যদি প্রাণ কেড়ে নেয় কোনও নিকটজনের, বা যদি কোনও দুর্ঘটনা সারা জীবনের মতো পঙ্গু করে দেয় তাঁদের!
ওই সব এলাকার লোকজনের বক্তব্য, হলই বা হাইওয়ে বা জাতীয় সড়ক, গতির তো একটা সীমা থাকা উচিৎ! যাঁরা এই গতির খেলায় মাতেন, তাঁরা কেউ এর পরিণাম কী হবে জানেন না এমন নয়। এ এমন এক ধরনের নেশা, একটু এদিক-ওদিক হলেই যার ফল দুর্ঘটনা। তাই যাঁরা এই খেলায় মেতেছেন, তাঁদের নিয়ে নয়, বরং নিজেদের নিয়েই চিন্তিত তাঁরা।
একাধিক গাড়িকে পরপর তীব্র গতিতে যেতে দেখা যায়, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত মামলা করা
হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়িয়ে দিল্লি রোড ও বম্বে রোড ধরে তীব্র গতিতে চলে এই সব দামি-দ্রুত গতির গাড়ি। বেশি রাতে হাওড়ার বালি হয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দিকে গেলেও চোখে পড়বে দামি স্পোর্টস কার, পোর্শে, ল্যাম্বরগিনি, ফেরারি, মার্সেডিজ প্রভৃতির বিভিন্ন মডেল, সেগুলির বেশ কয়েকটি আবার টু-সিটার। চলে দামি-দ্রুত গতির বাইকের রেসও। এলাকার লোকজনরে বক্তব্য, যাঁরা এই সব গাড়ির মালিক, তাঁরা এতটাই প্রভাবশালী যে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আদৌ কতটা সুবিধা হবে বলা মুশকিল।
জাতীয় সড়কে স্পিড-ব্রেকার বসানো যাবে না। বড় দুর্ঘটনার দু-চার দিন পরে গণমাধ্যম চোখ সরানোর পরে তদন্তে কী হয়, তাও সাধারণ লোকজনের অজানা থেকে যায়। তাই প্রশ্ন হল, এর উপায় কী?
শহরের রাস্তা গাড়ি চলার জন্য, গতির প্রতিযোগিতা করার জন্য নয়
উপায় আছে। জনসাধারণের স্বার্থে এই সব রাস্তায় (এখনও যদি না থাকে) ক্যামেরা লাগানো এবং যে সব গাড়ি দ্রুত গতিতে চলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। জাতীয় সড়ক কোনও রকম প্রতিযোগিতার জায়গা নয়, যদি একাধিক গাড়িকে পরপর তীব্র গতিতে যেত দেখা যায়, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত মামলা করা। তবে প্রশ্ন হল, বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে! এই সব গাড়ির মালিকরা এতটাই প্রভাবশালী যে পুলিশও মামলা করার আগে দু’বার ভাববে। তা হলে এই উপদ্রব কি চলতেই থাকবে!
শহরের রাস্তা গাড়ি চলার জন্য, গতির প্রতিযোগিতা করার জন্য নয়। এই বোধ থাকা উচিৎ গতির নেশায় যাঁরা মশগুল, তাঁদের। চাইলে তাঁরা পেশাদার সার্কিটে তো নামতে পারেন। শখও মিটল, আবার পথদুর্ঘটনাও ঘটল না!