ভাজাভুজি খাওয়া খারাপ নয়, তবে তা যেন স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে খাওয়া হয়
ভাজাভুজি খেতে ভালোবাসেন কিন্তু ওজন বাড়ার ভয় খেতে পারেন না?
- Total Shares
জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে বা শরীরের ওজন কম করার জন্য যাঁরা আমার কাছে আসেন তাঁদের মনেই একটা দ্বন্ধ থাকে -ভাজাভুজি খাওয়া উচিত না উচিত নয়?
আমি ভাজাভুজি খাওয়ার পক্ষে, তাই আমি যখন তাঁদের হ্যাঁ বলি তাঁরাও খুশি হন। এর পর স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্নটা ওঠে সেটা হল - ঠিক কোন ভাজাভুজিগুলো খাওয়া উচিত?
উত্তরটা দিতে হলে যেমন একটু বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে, তেমনই বিষয়টা নিয়ে কিছুটা পড়াশোনারও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের কয়েকটা অভ্যাসও পাল্টাতে হবে।
ধরুন এখন বিকেল চারটে বাজে আর আপনি আবার ছটফট করছেন। খিদেতে হয়তো আপনার পেটে আওয়াজ হচ্ছে কিন্তু আসলে ওটা আপনার মনের খিদে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ড্রয়ারে যে নোনতার প্যাকেটটা রয়েছে সেটা বার করেই কিছু না ভেবেই খেতে শুরু করে দিলেন।
যখন প্যাকেটটা প্রায় অর্ধেক শেষ করে ফেলেছেন তখন হটাৎ করেই আপনার মনে হল যে সারাদিনে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে গত ১০ মিনিটে বেশ কিছুটা অবাঞ্চিত ক্যালোরিও আপনার শরীরে প্রবেশ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে একটা অপরাধ বোধ গ্রাস করল যার ফলে আপনার মেজাজটাও বেশ খারাপ হয়ে গেল। তাই মন-মেজাজ ভালো করতে আপনি প্যাকেটের অবশিষ্টটুকুও খেয়ে ফেললেন।
পরিস্থিতিটি বেশ পরিচিত, তাই না?
তবে আপনি একা নন? নিয়েলসেন গ্লোবাল সার্ভে অফ স্যাকিং-২০১৪ অনুসারে প্রায় ৬৭ শতাংশ ভারতীয় দুপুরের বা রাতের খাবারের থেকে ভাজাভাজি বেশি পছন্দ করেন এবং প্রায় ৫৬ শতাংশ রাতের এবং দুপুরের খাবার না খেয়ে ভাজাভাজি বেশি খেয়ে থাকেন।
ভাজাভুজি খাবারদাবার নিয়ে এই বাড়াবাড়ির ফলে কী আমাদের শরীরের উপর প্রভাব পড়তে পারে?
একটা জরুরি কথা মাথায় রাখতে হবে সেটা হল ভাজাভুজি খেলে কেউ মোটা হয়ে যায় না, তবে ক্যালোরি যুক্ত ভাজাভুজি খেলে বা শরীরের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর ভাজাভুজি খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। তাই ভাজাভুজিকে বদনাম না করে বা দোষ না দিয়ে আমার উদ্দেশ্য হল সবাইকে শেখান যে এই ধরণের কোন খাবারগুলো আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো। সাধারণ মানুষকে এই বিষয় সচেতন করাটা আমার কর্মসূচির একটা বড় অংশ। মানুষকে যদি ঠিকঠাক ও স্বাস্থ্যকর ভাজাভুজি সম্পর্কে আমি বোঝাতে পারি তাহলেই যুদ্ধের অর্ধেকটা আমি জিতে যাব।
সমস্তটাই সঠিক প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভর করে।
সব সময় যে বাড়ীতে প্রস্তুত করে ভাজাভুজি খাওয়া সম্ভব নয় সেটা আমি এখন বেশ বুঝি, তাই নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে আমাদের হাতের কাছে যাযা ভাজা খাবারদাবার রয়েছে তার মধ্য থেকে আমরা সঠিক খাবারগুলোই বেছে নিতে পারি। এই ধরণের কয়েকটি মুচমুচে ভাজাভুজির কথাই এখানে আলোচনা করব, যেগুলো আমি নিজেও খাই।
কী খাচ্ছেন সেটা জানুন
খাবার আগে খাবারের প্যাকেটের পেছনের দিকে যা লেখা থাকে সেটা পড়ে দেখুন। খাবারটি ঠিক কী পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে বা সেই খাবারটির পুষ্টিগুণ কী এবং কোন উপাদান ব্যবহার করে খাবারটি বানান হয়েছে। দেখে নিন খাবারটিকে সেঁকা (বেকড) হয়েছে না ভাজা হয়েছে? খাবারটিতে কী ট্রান্স ফ্যাট রয়েছে? খাবারটি যতটা খাচ্ছেন তাতে ঠিক কতখানি ক্যালোরি রয়েছে তাও দেখে নিতে হবে। এই জাতীয় ফ্যাটি অ্যাসিড বা স্নেহ পদার্থ আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
তাই স্বাস্থ্যকর ভাজাভুজি খাওয়ার দিকে নজর রাখতে হবে। যেসব খাবারের প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে যে খাবারটিতে বেশি তেল বা ক্যালোরি নেই এবং খাবারটি শরীরের পক্ষে ভালো -কথাগুলো খুব সহজেই বিশ্বাস করবেন না। বরং খাবারটি কী ভাবে বানান হয়েছে কিংবা তাতে ক্যালোরির পরিমাণ ঠিক কতটা সেটা দেখে নিয়ে খান। খাবারটি বিক্রি করার জন্য খাবারের গায়ে যা লেখা থাকে তার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না বা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবেন না।
এটা বুঝতে খুব একটা বুদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না যে সেঁকা বা সেদ্ধ করা খাবারে ভাজা খাবারের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর, কারণ এই পদ্ধতিতে রান্না হলে তাতে স্নেহ পদার্থ অনেক কম থাকে বিশেষ করে ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক কম থাকে। সাধারণত, ভাজা খাবারের থেকে সেঁকা খাবারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম স্নেহ পদার্থ থাকে। তাই খাওয়ার আগে খাবারের প্যাকেটের গায়ে তার গুনাগুন সম্পর্কে পড়তে ভুলবেন না।
পাশাপাশি সেঁকা খাবার বলতে ঠিক কী বোঝায় সেটাও বুঝতে হবে। সাধারণত এই ধরণের খাবারকে দীর্ঘক্ষণ আগুনের আঁচে বা ওভেনের তাপে সেঁকা হয়। যখন কোনও খাবারকে এই পদ্ধতিতে রান্না করা হয় তখন যে তাপ বা আঁচ ব্যবহার করা হয় সেটা ধীরে ধীরে খাবারে ছড়িয়ে পড়ে এবং খাবারের ভেতরে পৌঁছয়ে তার ফলে খাবারের উপর দিকটা যেমন মুচমুচে থাকে তেমনই ভেতরটা সুসিদ্ধ হয়, ফলে খাবারের স্বাদও বজায় থাকে। তাই ভাজা খাবারের থেকে সেঁকা খাবার খেতেও যেমন অনেক
বেশি সুস্বাদু তেমনই সেঁকা খাবারে তেলের ব্যবহার হয় না বলে তা খাবার পর আঙুলে তেলতেলে ভাবও থাকে না। প্রয়োজনে খাবারটা হাত দিয়ে খেয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
তাই ভাজাভুজি খাওয়ার সময় সঠিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবারগুলো বেছে নিয়ে তা নির্দ্বিধায় খান।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন