জানেন কী এক টানা মোবাইল দেখলে ফোনের নীল আলো চোখের কতখানি ক্ষতি করতে পারে?
অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে
- Total Shares
মোবাইল ফোন যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে খুব সহজ করে দিয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই মোবাইল ফোনের উপরে আমরা ভীষণ ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। অনেক ক্ষেত্রে অজান্তেই আমরা নিজেদের বিপদ ডেকে আনছি। ধরুন রাতের বেলায় ঘুমাতে গেছেন কিন্তু ঘুম আসছে না। তাই ভাবলেন যতক্ষণ ঘুম না আসে ততক্ষণ মোবাইল ফোনে কয়েকটা দরকারি কাজ এগিয়ে রাখি কিংবা স্মার্টফোনে একটা গোটা গল্পের বই ডাউনলোড করে পড়তে থাকি। তারপর আস্তে আস্তে ঘুম এসে যাবে। তারপর দীর্ঘক্ষণ পরে দেখলেন, মোবাইলে খুটখাট করতে করতে সময় গড়িয়ে গেল কিন্তু ঘুম আর এলো না। রাত কেটে ভোর হয় গেল কিন্তু ঘুমের দেখা নেই।
আপনিও কী ঘুম না আসার সমস্যায় ভুগছেন? কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছেন না কেন ঘুম আসছে না। ঘুম আসবে বলে রাতে শুয়ে অন্ধকারে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করছেন বলেই হয়ত ঘুম আসতে চাইছে না। অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করলে যেমন অনিদ্রা হতে পারে তেমনই চোখের বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে যেমন দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হয় তেমনই অন্ধকারে স্মার্টফোনের ব্যবহারে চোখের মারাত্মক সব সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে চোখ ছাড়াও শরীরের অন্য জায়গাতেও নানা সমস্যা হতে পারে।
চিন্তার কথা হল, বাচ্চাদের মধ্যেও মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। তাদের স্কুলের বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে শুরু করে মাঠে না গিয়ে মোবাইল ফোনেই ফুটবল বা ক্রিকেট খেলছে তারা।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে স্মার্টফোনের নীল আলো বেশিক্ষণ চোখে পড়তে থাকলে চোখের ক্ষতি হয়।
ঘুমে ব্যাঘাত: অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে। রাতে শুতে গিয়ে অন্ধকারে মোবাইল দেখলে দীর্ঘ অনিদ্রা দেখা দেয়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় ইনসোমনিয়া বলা হয়। ঘুমের একটা নিজস্ব নিয়ম বা ধারা রয়েছে তার ব্যাঘাত ঘটলে, যেটা ঘুমের নির্ধারিত সময়, সেই আর ঘুম আসতে চায় না। এর থেকে মানসিক বিকারও ঘটতে পারে। শরীরে একটা ক্লান্তি ভাব থাকে ও ঝিমুনি ভাব থাকে। আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের শরীর যেমন বিশ্রাম পায় ঠিক তেমন ভাবেই মাথাও বিশ্রাম পায়। ঘুম মাথার ভেতরে বহু হরমোনের গতি নিয়ন্ত্রণ করে। বড়দের মধ্যে এর ফলে অবসাদ দেখা দিতে পারে। এর ফলে মানুষের সম্পর্কগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত এবং একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়। খিদে পায় না। মনোযোগের অভাব হয়। রাতে ঘুম না হওয়ার জন্য চোখের চারপাশে কালো দাগ বা ছোপ পড়তে পারে।
চোখে চাপ: অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে বা অনেক্ষণ এক টানা মোবাইল দেখলে চোখে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। চোখ লাল হয়ে থাকে ও চোখ জ্বালা করে। অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করলে অন্ধত্ব না হলেও স্থায়ী ভাবে কেউ টেরা হয়ে যেতে পারেন। আর যদি এটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হয়ে তা হলে ভবিষ্যতে তার দৃষ্টিশক্তি চলেও যেতে পারে। চোখের জল কাটে না কিংবা ড্ৰাই আই-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্ধকারে মোবাইল একনাগাড়ে দেখে গেলে চোখের পেশিতে (মিডিয়াল রেক্টার ও সিলিয়েই মাসেল) দিয়ে আমরা দেখি তার উপরে চাপ সৃষ্টি হয়। আলোতে এই পেশিগুলো যতটা সহজে কাছের ছোট হরফে লেখা দেখতে পারে অন্ধকারে ছোট লেখা তারা তত সহজে দেখতে পারে না। এই পেশীগুলোর উপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং এর ফলে অকুলার অস্থেনোপিয়া হতে পারে। অকুলার অস্থেনোপিয়া হল চোখের ক্লান্তি। এর ফলে মাথা ব্যথা হতে পারে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই অকুলার অস্থেনোপিয়ার জন্য টেরা ভাব আসতে পারে।
বাচ্চাদের কী সমস্যা হতে পারে: বাচ্চাদের ক্ষতির আশঙ্কা অনেক বেশি। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে বাচ্চাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধকতাও দেখা দিতে পারে। তারা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। পড়াশোনায় প্রচুর ভুল হতে শুরু করে। তারা পড়া মনে রাখতে পারে না। তার ব্যক্তিত্বও বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেবে। বাচ্চারা যখন বই পরে কিংবা স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ড-এ কিছু দেখে তখন বাক্যগুলো এদিক-ওদিক হয়ে যাওয়া আশঙ্কা থাকে। এর ফলে এদের হাতের লেখাও খারাপ হয়ে যায় কিংবা বেঁকে যায়। এবং এর থেকে চোখের পাওয়ার হওয়ার প্রবণতা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি একেবারে কমে গিয়ে অন্ধত্বের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
তাই একদম শেষে বলব, মোবাইল ফোন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস যা ছাড়া এখন আমরা কেউ আমাদের জীবন ভাবতেই পারি না। কিন্তু সব কিছুর মতোই এরও ভালো দিক আর খারাপ দিকও রয়েছে। কয়েকটা সাধারণ নিয়ম মেনে চলেই অনেক সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। শুতে যাওয়ার আগে মোবাইল ব্যবহার করবেন না। অনেকক্ষণ একটানা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে না থেকে মাঝে মধ্যে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকান। অন্ধকার কোনও জায়গায় মোবাইলের ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে ফোনটির ব্রাইটনেস বা আলোটা একটু বাড়িয়ে রাখুন। মোবাইলের হরফের মাপটাও একটু বাড়িয়ে রাখুন। খুব দরকার ছাড়া মোবাইলে বই পড়া অভ্যাস করবেন না।
বাচ্চাদেরও অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করতে দেবেন না।