ক্যাথলিক গির্জায় যৌন নিগ্রহ সম্পর্কিত প্রতিবেদন, এবার দোষ স্বীকারের সময় এসছে
যে সন্ন্যাসিনীরা সাহস করে অভিযোগ করেছিলেন, তাদের একঘরে বা বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে
- Total Shares
ক্যাথলিক গির্জার পক্ষ থেকে এখন অনেক কিছুই স্বীকার করে নিতে হবে।
শুধু স্বীকার নয়, ক্ষমাও চাইতে হবে। সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন, একটি সমাধান সূত্রও খুঁজে বের করতে হবে।
বছরের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ভারতে ক্ষমতাশালী পাদ্রীদের হাতে ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনীরা কী প্রকার যৌন লাঞ্ছনার শিকার হন এবং কী ভাবে একটি নির্দয় ব্যবস্থা অভিযুক্তদের রক্ষা করে চলেছে তার একটি নির্মম ছবি ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
এই রিপোর্টে কিছু গৃহ্যত্যাগী পরিবার থেকে বিচ্ছিন্না মহিলাদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে এই মহিলারা ক্ষমতাবান ধর্মীয় 'গুরুদের' অত্যাচারে জর্জরিত হলেও তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকেই তারা খুঁজে পায়ে না।
কেরলের কনভেন্ট যেখানে অভিযুক্ত বিশপ থাকতেন [ছবি: এপি]
পাদ্রীরা খ্রিষ্টান সন্ন্যাসীনিদের চুম্বন করেছে, জড়িয়ে ধরেছে, ধর্ষণ করেছে - এমন অনেক গল্পের কথা শোনা গিয়েছে। প্রত্যুত্তরে, ওই মহিলারা কী করতে পেরেছে? কিছুই নয়।
কয়েকজন লাঞ্চিতা অবশ্য উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ জানিয়েছে। কিন্তু অভিযোগের পরে শুধুমাত্র তাদের কে অভিযুক্তদের সান্নিধ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই গল্পগুলো যথেষ্ট স্পর্শকাতর। আর, এই গল্পগুলোর সঙ্গে ধর্মশাস্ত্র, ধর্মবাণী বা নৈতিকতার সঙ্গে কোনও যোগ নেই।
এপির রিপোর্টে প্রকাশিত কিছু গল্প তো সেই নব্বইয়ের দশকের। অভিযুক্তরা কিন্তু দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
কতজন সন্ন্যাসিনী যে তাদের শিকার হয়েছে তা আমরা শুধু অনুমানই করতে পারি।
আন্দোলনরত খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনীরা [ছবি: পিটিআই]
লজ্জা, ঘৃণা ও ভয়কে সঙ্গী করেই এই মহিলাদের জীবন কাটাতে হচ্ছে।
হাজার হোক, পাদ্রীরা যীশু খ্রিস্টের প্রতিনিধি আর তাই সন্ন্যাসিনীদের সর্বদাই তাদের উচিত সম্মান করা উচিত। ভুললে চলবে না, একজন সন্ন্যাসিনীর কাজ, পদ, কর্মক্ষেত্র ও অনুদান সবকিছুই কিন্তু পাদ্রী ঠিক করে দেয়।
এরপর হুমকি বা অন্য রকমের 'বদলা' নেওয়ার রেওয়াজ তো রয়েছে। এপির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সন্ন্যাসীরা দাবি করেছে যে তাদের মধ্যে যারা সাহস করে অভিযোগ জানিয়েছে তাদের অনেককেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এক ঘরে করে রেখে দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কৃত করার নিদর্শনও রয়েছে।
প্রচুর খ্রিস্টান মহিলা সন্ন্যাসিনী হওয়াটা তাদের জীবনের কর্তব্য বলে মনে করে। আর এই ব্যবস্থায় থাকা মানে তাদের কোনও ক্ষমতাবান শত্রু থাকা উচিত নয়। কনভেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার সিধান্তটা কিন্তু সহজ নয়। জীবনের অনেক কিছুর সঙ্গেই সম্পর্ক ছেদ করে সন্ন্যাসিনী হতে হয়। সন্ন্যাসিনীর জীবনে একাত্বিত থাকবেই।
গির্জার তরফ থেকে শিকার করে নেওয়া উচিত যে কয়েকজন ক্ষমতাবান পুরুষের শিকার এই সন্ন্যাসিনীরা হয় না। বরঞ্চ, এই সন্ন্যাসিনীরা ব্যবস্থার শিকার হয়।
গত বছরই কেরলের এক সন্ন্যাসিনী সাহস করে এক ক্ষমতাবান পাদ্রী - বিশপ এফ মুলাক্কলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। ওই সন্ন্যাসিনীকে 'বেশ্যা'আখ্যা দিয়ে একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সেই বিশপকে পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণও করে নেওয়া হয়েছিল।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পুষ্পস্তবক দেওয়া হয় বিশপ মুলাক্করকে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
ক্যাথলিক গির্জায় এই ধরণের অত্যাচার বছরের পর বছর হয়ে চলেছে আর প্রতিষ্ঠান কিছুই জানে না - এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব।
আসলে ক্ষমতাবান লোকেরা নিজেদের স্বার্থে অন্য এক ক্ষমতাবান লোককে সমর্থন করে চলেছে। তা সে যতই তারা ঈশ্বরের সেবায় ব্রত থাকুক না কেন।
এই অত্যাচার বন্ধ করা কিছু কোনও শক্ত কাজ নয়।
গির্জার উচিত, অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি গড়ে তুলে অভিযোগ জানানো ও তদন্ত প্রক্রিয়া ঠিক করে ফেলা।
সন্ন্যাসিনীদের কাছে এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের কর্মক্ষেত্র। সে ক্ষেত্রে বিশাখার মতো দেশের আইনগুলো তাদেদর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না কেন?
এই ব্যাপারে ক্যাথলিক গির্জা কিন্তু এখনও কোনও সুষ্ঠ পদক্ষেপ দেখায়নি। এ বছরের জুলাই মাসে #মিটু আন্দোলন ভ্যাটিকানেও পৌছিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি।
এবার, এই রিপোর্টার পরে, ক্যাথলিক গির্জার উচিত নিজেদের দশ স্বীকার করে ফেলা। যারা এই ব্যবস্থা জারি রেখেছে তাদের ঈশ্বর ক্ষমা করবেন কিনা সে প্রসঙ্গ অবশ্য আলাদা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে