বলিউডে বায়োপিক ব্যর্থ হয় কেন?

হিন্দি সিনেমা বাস্তব থেকে কতটা দূরে থাকে তারা সেরা নিদর্শন 'সঞ্জু'

 |  3-minute read |   23-07-2018
  • Total Shares

সিনেমায় বাস্তব ঘটনা তুলে ধরলে তার পরিণাম আন্দাজ করা অনেক সময়তেই সম্ভব হয় না। সিনেমায় যে বাস্তব ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছে তা যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, পর্দায় তা হুবুহু তুলে ধরা কখনই সম্ভব নয়।

সিনেমায় যেভাবে বাস্তবকে তুলে ধরা হয় তা এখন আর কাউকে অবাক করে না। বরঞ্চ, মাঝে মাঝে বাস্তবকে যেভাবে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরা হয় তা দেখে অনেকেই বিরক্তিতে মাথা চুলকাতে বাধ্য হন।

এই কারনেই বোধহয় সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সী (সিআইএ) তাদের ‘রিল ভারসাস রিয়াল’ উদ্যগে ড্যানিয়েল ক্রেগকে আমন্ত্রণ জানাতে বাধ্য হয়েছিল। টিভির পর্দার জেমস বন্ডকে দেকে গোয়েন্দারা বোঝাতে ছেয়েছিলেন যে হলিউডের গোয়েন্দা আর বাস্তবের গোয়েন্দার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।

এই প্রসঙ্গে হলিউড এবং আমাদের দেশের ব্যানিজিক হিন্দি সিনেমা কিন্তু নিজেদের হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে একটা কথাই বলবে – তাদের সত্যকে এমনভাবে তুলে ধরতে হয় যাতে সেই সত্য বাস্তব সম্মত হয়, আবার একই সঙ্গে সেই সত্য যেন দর্শকদের বিনোদনঅ দিতে পারে। কিন্তু বাস্তব তুলে ধরতে গিয়ে যখনই কোনও লেখক, সাংবাদিক বা চলছিত্র ব্যাক্তিত্বের জীবনী তুলে ধরতে হয় তখনই সব কিছু কেন এলমেলো হয়ে যায়।

সম্প্রতি, সঞ্জয় দত্তের বায়পিক সঞ্জু মুক্তি পেয়েছে আর এই জনপ্রয়ি সিনেমায় যা ছিত্রায়ন করা হয়েছে তার থেকে বাস্তবের অনেকটাই তফাত রয়েছে। সিনেমার একটি দৃশ্যে দেখা গিয়েছে যে মহাতারকা দত্ত (রনবির কাপুর অভিনিত) ১৯৯৩ সালের মুম্বাইয়ের ধারাবাহিক বিস্ফোরণ মামলায় দোষী সব্যস্ত হওয়ার পর কারারুদ্ধ হওয়ার আগে তাঁর মতো করে নিজের আত্মকথা প্রকাশ করতে ছেয়েছিলেন দত্ত। তাঁর এক বন্ধুকে তিনি বই থেকে একটি অনুচ্ছেদ পড়ে শোনাতে বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পছন্দসই না হওয়ার জন্য তিনি বইটিকে পুড়িয়ে দিলেন।

body_072318080526.jpg

এর পরে দত্ত একজন লেখিকার (অনুশকা শর্মা) সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আত্মজীবনী লিখতে রাজি করান। যতই বাস্তবসম্মত বলে দাবি করা হোক না কেন নির্দেশক রাজকুমার হিরানি খুব ভালো করেই জানেন যে এইভাবে আত্মজীবনী লেখা সম্ভব নয়।

হিরানি ও তাঁর সহকারি লেখক এই ধরণের চিত্রনাট্য লিখে আবার হিন্দি সিনেমা সম্পর্কে সেই পুরনো শ্রুতিকথাটাই প্রতিষ্ঠা করলেন যা সচরাচর কোনও লেখক, সাংবাদিক কিংবা সংবাদবাপত্রের সম্পাদক সম্পর্ক সম্পর্কে চিত্রনাট্য লিখলে প্রতিষ্ঠা পেয়ে থাকে। খুব সম্ভবত, এই চিত্রনাট্য লেখার সময় হিরানি ভাগবান (২০০৩) এবং শব্দের (২০০৫) মতো সিনেমার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

বাস্তব জীবনে সিনেমার প্রভাব কিন্তু অপরিসীম। মানুষ সিনেমা দেখে কোনও কিছু সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সিনেমা অনেক সময়তেই আমাদের উপর ভুল প্রভাব ফেলে এই গল্পগুলোকেও বাস্তব ও সত্য বলে বিশ্বাস করে নিতে বাধ্য করে। আমরা যে ভাবে সিনেমা দেখে সাংবাদিকদের সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে ফেলছি বা যে ভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করে দিয়েছি যে আইনজীবীরা সত্যি সত্যি বিচারকদের উপর চড়াও হন, সেইভাবেই সঞ্জু সম্পর্কেও আমাদের একটা ধারণা সৃষ্টি হতে পারে যা আদৌ বাস্তবে হয়নি।

এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ, এই ধারণা শুধুমাত্র আত্মজীবনী লেখার দৃশ্যে অবধি সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা সত্যি যে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মুম্বাই বিস্ফোরণের সঙ্গে সঞ্জয় দত্তের জড়িত থাকার খবরটা প্রকাশ পায়ে তাই দর্শকদের এই সিনেমাটিকে খুব বেশি বাস্তবসম্মত বলেই মনে হতে পারে।

সত্যতার সংজ্ঞাটা বেশ পরিষ্কার। আপনি যা বলতে চাইছেন তাঁর উপর আপনার যেন পূর্ন দখল থাকে। কিন্তু সঞ্জু ও তাঁর আত্মজীবনীর (যা আগামী বছর প্রকাশিত হবে) মধ্যে বাস্তবের অনেকটাই দূরত্ব রেখে দিলেন দত্ত।

মার্কিন দার্শনিক নেলসন গুডম্যান মনে করেন কোনও খাঁটি জিনিষ ও কোনও জাল জিনিষের মধ্যে পার্থক্য একটাই: আমরা কী ভাবে বিষয়টি গ্রহণ করব। এ ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। সরকারিভাবে যাকে বায়োপিক বলে ঘোষণা করা হচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তবের এত ফারাক থাকলে আমরা কি একে বায়োপিক হিসেবে মেনে নেব?

আসলে, দিনের শেষে, সঞ্জু যত বেশি না বায়োপিক তার চাইতে বেশি পণ্য। তাই তো যাঁরা টিকিট কেটে দেখবেন তাঁদের কথা ভাবেই তৈরি করা।

(সৌজন্যে: মেল টুডে)

 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

GAUTAM CHINTAMANI GAUTAM CHINTAMANI @gchintamani

Cinephile, observer of society and technology and author of the of Dark Star: The Loneliness of Being Rajesh Khanna.

Comment