সবরীমালা মন্দির ঘিরে অচলাবস্থার অবসান আদৌ হবে তো?
বহু মহিলা রায়ের পক্ষে, আবার অনেকে চান ৫০ বছর বা রজোবন্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে
- Total Shares
সবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার পাওয়ার বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই খবরের শিরোনামে রয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে কোনও বয়েসের মহিলাই ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতের এই রায়ে ভক্তরা দ্বিধা বিভক্ত। কারণ, প্রথা অনুযায়ী, ১০ থেকে ৫০ বছর অবধি বয়স্কা মহিলাদের এই মন্দিরে প্রবেশাধিকার নিয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পন রাধাকৃষ্ণনও এই নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, "বহুকাল ধরে চলে আসা একটি প্রথাকে অসম্মান করে প্রতিবাদী হয়ে ওঠাটা কখনও কোনও কাজের কথা নয়।"
#SabarimalaShowdown#Sabarimala chief priest opposes women's entry. Listen in to what he said#ITVideoMore videos: https://t.co/Nounxo6IKQ pic.twitter.com/T1yhrOlKBW
— India Today (@IndiaToday) October 19, 2018
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন, "আয়াপ্পান ভগবান নিজে কোনও দিনও বলেননি যে এই মন্দিরে মহিলারা প্রবেশ করবেন না। কিন্তু প্রথা অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি বয়সের মহিলারা এই মন্দিরে পুজো দিতে পারেন না। তাই তাঁদের মন্দিরে প্রবেশও করতে দেওয়া হয় না। প্রতিটি আয়াপ্পা মন্দিরেই যে এই বিধিনিষেধ রয়েছে এমনটা নয়। এই বিধিনিষেধ শুধুমাত্র সবরীমালার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।"
কেরলের এই মন্দিরে শুধুমাত্র মালয়লম পঞ্জিকা মেনে বৃশ্চিক মাসেই ভক্ত সমাগম হয়। কারণ এই সময়তেই এক টানা ৬১টি দিনের জন্য মন্দিরটি খোলা থাকে। বছরের অন্যান্য মাসে শুধুমাত্র মাসের প্রথম ক'দিনের জন্য ভক্তদের মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়। বাকি দিনগুলোতে মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। এই মন্দিরে প্রবেশ করতে হলে ভক্তদের ৪৫ দিন ধরে নির্ধারিত বেশ কয়েকটি আচারবিচার বাধ্যতামূলক। এই সময়কালে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি জিনিসই আহার হিসাবে গ্রহণ করা করা যায় আর নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের পোশাক পরা যায়।
এই ৪৫ দিনের বিচারআচার মেন চলা মহিলাদের পক্ষে খুব কষ্টকর। তা ছাড়া এই মন্দিরে পৌঁছানোর রাস্তা বেশ দুর্গম যা মহিলাদের পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য। তাই এই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে।
সবরীমালা মন্দির নিয়ে চাপা উত্তেজনা রয়েছে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
বহু মহিলাই এই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকারের পক্ষে। আবার, এমনও বহু মহিলা রয়েছেন যাঁরা চান ৫০ বছর অবধি বা রজোবন্ধ পর্যন্ত অপেক্ষা করে এই মন্দিরে প্রবেশ করতে।
সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে রাজ্যজুড়ে কেমন যেন প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গিয়েছে।
গত দু'তিন দিন ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলছিল। কিন্তু হঠাৎই ভক্তকূল মারমুখী হয়ে উঠলেন। মহিলা সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ করতেও পিছপা হননি তাঁরা।
এদিকে, রাজ্য সরকার এই বিষয়টিকে নিয়ে অহেতুক রাজনীতি করার জন্য ও সাম্প্রদায়িক গোলযোগ সৃষ্টির জন্য বিজেপি ও আরএসএসকে দায়ী করেছে।
কেরলের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেতা এইচ রাজা আবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সাংবাদিকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আপনি (মহিলা) সাংবাদিক বলেই আপনি হুটহাট করে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না। এই সাংবাদিকদের দেখে মনে হচ্ছে তাঁরা যেন কোনও পিকনিক স্পট বা কোনও হোটেলে প্রবেশ করছেন।" বিজেপি নেতা বলেছেন যে এই প্রসঙ্গে বিজেপি ভক্তদের সঙ্গেই রয়েছে।
This tradition had been there for so long & was being followed. Those who filed petitions against it are not the one who will go to temple. A large section of women follow this practice. Their sentiments were not considered: RSS Chief Mohan Bhagwat on #SabarimalaTemple issue pic.twitter.com/lY0ig5yJu4
— ANI (@ANI) October 18, 2018
আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত তাঁর বিজয়াদশমীর বক্তৃতার সময় এই বিষয়টি উত্থাপন করে বলেছেন যে ভক্তগণ সর্বসম্মত ভাবে এই রীতিকে মেনে নিয়ে বহুকাল ধরে এই রীতি পালন করে চলেছেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আর প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না।
এদিকে, কেরল সরকারের সমালোচনার মুখে পড়েছে আরএসএস। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক দাবি করেছেন যে একটা সময় আরএসএসও এই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের বিষয়টিকে সমর্থন করত। কিন্তু যে মুহূর্তে আয়াপ্পার ভক্তবৃন্দ আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করল আরএসএসও নিজের অবস্থান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে তাঁদের সমর্থন শুরু করে দিল। সরকারের মতে আরএসএস এই বিষয়টির থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সিদ্ধহস্ত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শেষ পর্যন্ত কতটা জটিলতার সৃষ্টি হবে?
রাজনৈতিক দলগুলো কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চলে যাওয়ার আগেই এই পরিস্থিতির উপর রাশ টানবে। নাকি, দলগুলো রাজনৈতিক ফায়দার কথা ভেবে এই পরিস্থিতিকে জিইয়ে তাকবে? রাজনীতির কি আর কোনও শেষ আছে?
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে