এবারে অঘটনের বিশ্বকাপ, শেষ আটের আগেই জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন ও পর্তুগালের বিদায়

আজকের দিনে একা হাতে বিশ্বকাপ জেতা অসম্ভব, তা দলে মেসিই থাকুক বা রোনাল্দোই থাকুক

 |  4-minute read |   04-07-2018
  • Total Shares

১৯৯০ সালে জার্মানির কাছে সেমিফাইনালে ২-১ গোলে হেরে ইংল্যান্ড দলের অন্যতম সদস্য গ্যারি লিনেকার মন্তব্য করেছিলেন, "ফুটবল নব্বই মিনিটের খেলা এবং এই খেলার শেষে সবসময় জয়লাভ করে জার্মান দল।" ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে জার্মানির অপ্রত্যাশিত বিদায়ের পর তিনি আবার বলেন, "ফুটবল ৯০ মিনিটের খেলা কিন্তু জার্মানি সবসময় জয়লাভ করে না"।

ফুটবল বিশ্বকাপে সবসময় দু'একটা অঘটন ঘটে থাকে। ১৯৫০ সালে জো গ্যাতজেনসের গোলে ১-০ ব্যবধানে তারকা সমৃদ্ধ ব্রিটিশ দলকে হারায় আমেরিকা। এই বিশ্বকাপের শেষ খেলায় উরুগুয়ে আয়োজক দেশ ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে জুলে রিমে ট্রফি ছিনিয়ে নেয়। সেই হারের যন্ত্রনা আজও পীড়া দেয় ব্রাজিল সমর্থককূলকে। মৃত্যুর আগে সেদিনকার মোয়াকির বার্বসা বলেছিলেন, "ব্রাজিলের সর্বাধিক দন্ড তিরিশ বছর কারাবাস।আমাকে কেন বিনা দোষে আজীবন নির্বাসন দেওয়া হল?"

body_070418123441.jpg১৯৫০ বিশ্বকাপের ব্রাজিলের গোলরক্ষক মোয়াকির বার্বসা বলেছিলেন, "ব্রাজিলের সর্বাধিক দন্ড তিরিশ বছর কারাবাস।আমাকে কেন বিনা দোষে আজীবন নির্বাসন দেওয়া হল?"

১৯৬৬ সালে ইতালিকে হারিয়ে উত্তর কোরিয়া কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি পৌঁছেছিল। পর্তুগালের বিরুদ্ধে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পরও ইউসোবিওর কাছে আত্মসমর্পণ করে কোরিয়া দল। ৯০ সালে বিশ্বকাপে সব চেয়ে বড় অঘটন ঘটায় ক্যামারুন। প্রথম ম্যাচে বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চমকে দেয় গোটা পৃথিবীকে। শুধু তাই নয়, রজার মিল্লার নেতৃত্বে কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি পৌঁছেছিল ক্যামারুন।

২০০২ সালেও আমরা দেখেছি দক্ষিণ কোরিয়া একের পর এক স্পেন, পর্তুগাল ইতালিকে হারিয়ে নিজেদের দেশে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। সেনেগালের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল তারকাখচিত ফ্রান্সের দল।

এবারের বিশ্বকাপকে চিহ্নিত করা হচ্ছে অঘটনের বিশ্বকাপ বলে। শেষ আটের আগেই বিদায় নিয়েছে জার্মানি, আর্জেন্টিনা, স্পেন ও পর্তুগাল। ইতালি, নেদারল্যান্ডস তো যোগ্যতা অর্জন পর্বেই ব্যর্থ। একই সঙ্গে উঠে এসেছে ক্রোয়েশিয়া, মেক্সিকো, জাপান এমনকি আইসল্যান্ডের মতো নতুন দল।

body1_070418123505.jpg

body2_070418123517.jpgআজকের দিনে একা হাতে বিশ্বকাপ জেতা অসম্ভব, তা দলে মেসি থাকুক কিংবা রোনাল্দো।

বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার বলে তুলে ধরা হয়েছিল জার্মান দলকে। ১০ বছর ধরে জোয়াকিম লোর নিজে হাতে গড়া জার্মান দল বিশ্ব ফুটবল শাসন করেছে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, গতবারের কনফেডারেশন কাপে বিজয়ী এবং বর্তমানে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থান তাদের দখলে। তবে এ সকল সাফল্যের পিছনে ঢাকা পড়েছিল সাম্প্রতিক ব্যর্থতা। বিশ্বকাপের আগের পাঁচ ম্যাচের মধ্যে জার্মানি একটা ম্যাচেই জয়লাভ করেছে। অভিজ্ঞ লাম, সোয়াইনস্টাইগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা অবসর নিয়েছিল। ওজিল খেদিরার বয়স বেড়ে গিয়েছিল, বহুদিন পরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফেরত আসছিল গোলরক্ষক নোয়ার। অবাক করেছিল লোর স্ট্রাটেজিও। প্রতিশ্রুতিমান লেরোয় সনেকে দেশে ফেলে এসেছিলেন। কোরিয়ার বিরুদ্ধে দোলে এনেছিলেন পাঁচ পরিবর্তন। চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসে ভর করে জার্মানি গ্রূপে চতুর্থ হয়ে বিদায় নিল প্রথম রাউন্ডে। ১৯৩৪ সালের পর এই প্রথমবার।

আর্জেন্টিনা কষ্টার্জিত ভাবে বিশ্বকাপের মূলপর্বে সুযোগ পেয়েছিল। তবুও লোকে ভেবেছিল বড় মঞ্চে আর্জেন্টিনা জ্বলে উঠবে। আবেগ দিয়ে তো আর কঠিন সত্যিটা ঢাকা যায় না। লোকেরা দেখল একটা অত্যন্ত মধ্যমানের আর্জেন্টিনা দল, যেখানে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব।

ক্রোয়েশিয়া ফ্রান্স চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল এক ঝাঁক বুড়োদের নিয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন কতটা বিরল। তার উপর গড়পরতা ডিফেন্স ও সাম্পাওলির নিত্য নতুন ট্যাক্টিক্স যার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা।

লোকেরা বুঝল আজকের দিনে একা হাতে বিশ্বকাপ জেতা অসম্ভব, তা দলে মেসি থাকুক কিংবা রোনাল্দো।

body3_070418123549.jpg

body4_070418123602.jpgকোনও মহানায়ক না থাকায় ছোট দলগুলোর একত্মা বেশি

স্পেন হয়ত বিদায় নিয়েছে নিষ্ঠুর পেনাল্টি শুট আউটের ম্যাধ্যমে। তবে এটা পরিষ্কার যে ভিয়া টরেসের পর স্পেনে নতুন স্ট্রাইকার উঠে আসেনি। জাভির অবসরের পর ওদের মিডফিল্ডও অপেক্ষাকৃতভাবে দুর্বল।

বড় দলগুলো যখন একের পর এক বিদায় নিচ্ছে তখন নিজেদের সেরাটা মেলে ধরছে 'ছোট দলগুলো। আজকাল সব দেশের ফুটবলাররা ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে খেলে। সুতারং, খেলোয়াড়দের মান মোটামুটি সমান। ক্রোয়েশিয়ার মদ্রিচ, রাকিটিচরা রিয়াল মাদ্রিদ বার্সেলোনার মতো দলে খেলে। তাছাড়া জাপানের জে-লিগে, কোরিয়ার কে-লিগে উচ্চস্তরের খেলা হয়। সেখানে কোচিং করিয়েছেন জিকোর মতো প্রাক্তন বিশ্বকাপার।

কোনও মহানায়ক না থাকায় ছোট দলগুলোর একত্মা বেশি। আইসল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়ার ডিফেন্স আটকেছে একের পর এক আর্জেন্টাইন বা জার্মান প্ৰয়াস। দুর্বল রাশিয়াও বদ্ধপরিকর নিজেদের দেশের বিশ্বকাপে ছাপ রেখে যেতে। এছাড়া লম্বা ক্লাব মরশুমের পর চোট ক্লান্তি গ্রাস করে তারকা খেলোয়াড়দের। অন্যদিকে, ছোট দলের খেলোয়াড়রা উদ্বুদ্ধ থাকে নিজেদের সেরাটা মেলে ধরে বড় ক্লাবের নজর কাড়তে।

১৪ তারিখে কে বিশ্বকাপে জয়লাভ করবে তা সময়ই বলবে। ব্রাজিল, ফ্রান্স না বেলজিয়াম ক্রোয়েশিয়ার মতো নুতুন দল। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার পরের বার আর কেউ সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বাছতে বসবে না। বিশ্বকাপের মঞ্চে সকল দলই নিজেদের সেরাটা দেয়। শ্রেষ্টত্বের শিরোপা লাভ করতে। সুতারং, খাতায় কলমে হিসেবে খুব কম সময়ই মেলে।

 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

UPAMANYU SENGUPTA UPAMANYU SENGUPTA

Sports crazy. Student.

Comment