বিশ্বকাপে বাঙালির প্রিয় পাঁচটি দল এখনও তাদের মর্যাদা অনুযায়ী খেলতে পারেনি
এইবারের বাঙালির সেরা পাঁচ বাজি: ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন এবং পর্তুগাল
- Total Shares
ফুটবল বিশ্বকাপের নেশায় মেতে উঠেছে গোটা দুনিয়া, বাদ নেই ভারতও। বিশেষ করে ফুটবল প্রেমী হিসেবেই যে জাতি সারা ভারত খ্যাত, সেই বাঙালির কাছে তো বিশ্বকাপ মানে আবেগের ঝড়। বিশ্বকাপ খেলা দেশগুলির থেকে খেলার মানে পিছিয়ে থাকলেও, আবেগ এবং ভালবাসায় যে বাঙালি কোনও অংশে কম নয় তা পেলে, মারাদোনা বা মেসিরা এদেশে এসে ভালোই টের পেয়েছেন।
বিশ্বকাপের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই তার আগমণীর সুর শোনা গিয়েছিল কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার ময়দান মার্কেটে। দোকানে দোকানে সাজানো নানা দেশের পতাকা, জার্সি থেকে এই বিশ্বকাপের জন্য নির্দিষ্ট বলও। খুদে থেকে প্রৌঢ় সবাই ভিড় জমাচ্ছে তাদের পছন্দের দেশের পতাকা বা জার্সি কিনতে। যদিও এই জার্সি বা পতাকার চাহিদা সীমিত থাকে ৩২টার মধ্যে ৫-৬টা দেশের ভিতরই। বাঙালি ফুটবল প্রেমী প্রতি ৪বছর অন্তর তাদের প্রিয় মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলকে ভুলে বিভক্ত হয় ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ড, ইতালি এবং পর্তুগালে।
সঞ্চিত ৬০,০০০ টাকা দিয়ে রাশিয়া যাওয়া অসম্ভব, জনৈক চা-বিক্রেতা যখন এই কথাটা বুঝতে পারলেন তখন সেই টাকায় তিনি তাঁর বাড়ি আর্জেন্টিনার নীল-সাদা রঙে করে ফেললেন [ছবি: পিটিআই]
যদিও দুঃখের বিষয় এই যে ইতালি এবং নেদারল্যান্ড ২০১৮ বিশ্বকাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তাই এইবারের বিশ্বকাপে বাঙালির সেরা পাঁচ বাজি হল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন এবং পর্তুগাল। বাংলায় যুদ্ধটা বেশির ভাগ ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু ইস্টবেঙ্গল সমর্থক আছেন যারা মনে করেন জার্মানির সাথে তাঁদের একটা মনের যোগ আছে তার একটা কারণ জার্মানির পতাকার লাল-হলুদ রংও হতে পারে।
আজও যেমন ফুটবল প্রেমিদের চিরকালীন তর্কের বিষয় ‘পেলে বনাম মারাদোনা’, সেরকম বেশ কিছু বছর ধরে আরও এক তর্কের সৃষ্টি হয়েছে ‘মেসি বনাম রোনাল্ড’। কিন্তু এই দুই তর্কের অনেক পার্থক্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান হল পেলে এবং মারাদোনা দুজন দুই সময়ের খেলোয়াড়। এদিকে মেসি আর রোনাল্ড দুজনেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই গত দুই, তিন বারের বিশ্বকাপের মতো এবারও সমর্থকদের মধ্যে এই নিয়ে শুরু হয়েগেছে যুক্তিতর্কের খেলা।
প্রতিবারের মত ২০১৮ সালেও বাঙালির নজরে আছে গত বারের বিজয়ী দল জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন এবং পর্তুগাল। কিন্তু বিশ্বকাপের শুরু তে এই সব দলের সমর্থকরা যে খুব খুশি হয়েছে এমনটা ঠিক বলা যায় না। সবারই ২০১৮ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলা শেষ। কিন্তু এই ৫ দলের মধ্যে কোনও দলই তাদের মর্যাদার সমান খেলাটা খেলে উঠতে পারেনি। বেশির ভাগ দল কোনও মতে ম্যাচ ড্র করেছে অথবা মিসের বন্যা বইয়ে জেতা ম্যাচ ড্র করে হাতছাড়া করেছে। আর গত বারের সেরার সেরা জার্মানি তো প্রথম ম্যাচেই হারের মুখ দেখেছে।
বাঙালির ফুটবল নায়করা কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁদের বাঙালি ভক্তদের হতাশ করেছেন [ছবি: রয়টার্স]
এই হতাশাজনক পারফর্মেন্স নিয়ে ফেসবুক থেকে ওয়াটস অ্যাপে উঠেছে ক্ষোভ থেকে বাঙ্গের ঝড়। আর এই মজা-মশকরা কিছু ক্ষেত্রে এমন আকার নিয়েছে যে বিশ্ব মানের খেলোয়াড়দের ছবি নানা ভাবে বিকৃত করে চলছে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা। ফেসবুক বা ওয়াটস অ্যাপে তর্কের জায়গা নিয়েছে বাগযুদ্ধ, যা মাঝে মধ্যেই ব্যাক্তিগত আক্রমণের আকার নিচ্ছে।
কিন্তু এ কেমন ধৈর্যহীন বাঙালি? নাকি এই কাজ এমন কিছু স্বল্প শিক্ষিত, নিম্ন রুচির লোকেদের যারা ফুটবল প্রেমী তো দূরের কথা প্রকৃত মানুষই নয়। যেখানে এক উপভোগ্য প্রতিযোগিতা গড়ে উঠেছে বিশ্বকাপের শুরুতে। বিশ্বের সেরা দলগুলিকে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে সুইজারল্যান্ড বা আইসল্যান্ডের মতো দলগুলির কাছে, সেখানে এক টানটান বিশ্বকাপের আশা করাই তো প্রকৃত ফুটবল প্রেমী বাঙালিসুলভ ব্যবহার।
একদিকে যেমন চোখ থাকবে বড় দলগুলির ঘুরে দাঁড়ানোর উপর, অন্যদিকে নিম্ন রুচির উস্কানিকে উপেক্ষা করে স্বাস্থ্যকর যুক্তিতর্কের আশাও থাকবে।