আর কে স্টুডিওর বিক্রির সঙ্গে একটি যুগের অবসান ঘটতে চলেছে

আলফ্রেড হিচককের 'সাইকো'-তে ব্যবহৃত বাড়ি চোখের সামনে দেখলে শিহরণ জাগতে বাধ্য

 |  3-minute read |   05-09-2018
  • Total Shares

১৯৪৮ সালে রাজ কাপুর যে আর কে স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা বেচতে চলেছে কাপুর পরিবার - এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই খবরে বিন্দুমাত্র অবাক হওয়া মতো কিছু নেই। বেশ কয়েকদিন ধরেই লোকসানে চলছিল এই স্টুডিও। সিনেমার প্রযোজকদের কাছে গোরেগাঁওর ফিল্মসিটি বা আন্ধেরির শহরতলিতে অবস্থিত বেশ কয়েকটি স্টুডিও এখন বেশি পছন্দের। তাই তো কাপুর পরিবারের চেম্বুরে অবস্থিত আর কে স্টুডিওর বিক্রির সিদ্ধান্ত শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল।

ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

আর কে স্টুডিওর লোকসানের মুখ দেখার অন্যতম কারণ এই স্টুডিওর কতৃপক্ষ কোনও দিনও স্টুডিওর অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা যুগোপযোগী করে তোলেনি। রাজ কাপুরের তিন ছেলে রণধীর, ঋষি ও রাজীব আঁচও করতে পারেননি যে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি অগ্নিকান্ড এই স্টুডিওকে বন্ধ করে দেবে।

বলা ভালো, যে ওই অগ্নিকাণ্ডের থেকেই এই স্টুডিও বিক্রির প্রক্রিয়ার কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই অগ্নিকান্ডে শুধুমাত্র স্টুডিওর সম্পত্তি নষ্ট হয়নি, এই ঐতিহাসিক স্টুডিওর বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য অংশও ছারখার হয়ে গিয়েছিল। স্টুডিওর বেশ কিছু স্মারক যেমন নার্গিস থেকে ঐশর্য্য রাইয়ের বিভিন্ন সিনেমায় ব্যবহার করা পোশাক বা 'মেরে ন্যাম হ্যায় জোকার'-এর সঙের মুখোশ কিংবা 'আওয়ারা', 'সঙ্গম' ও 'ববি' সিনেমায় ব্যবহৃত স্টুডিওর সেই বিখ্যাত পিয়ানো - সবকিছুই পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছিল।

body_090518041809.jpgবিক্রি হতে চলেছে ঐতিহাসিক আর কে স্টুডিও [ছবি: পিটিআই]

সেই সময়কার অন্যান্য স্টুডিগুলো থেকে একটা বিষয় আর কে স্টুডিও একেবারেই অন্যরকম ছিল। এই স্টুডিও নিয়মিতভাবে সেখানে শুটিং হওয়া সিনেমাগুলোর বিভিন্ন স্মারক রেখে দিত। সিনেমার ইতিহাস নিয়ে যারা চর্চা করে থাকেন বা সিনেমার ছাত্রদের মনে তাই আর কে স্টুডিওর একটি অন্য স্থান ছিল। মূলত আর কে স্টুডিওর জন্যেই পুরোনো স্টুডিওগুলো হটাৎ করে হারিয়ে যায়নি। দশক প্রাচীন স্টুইডিওগুলোর ঐতিহ্য অনেকদিন ধরেই রক্ষা করে আসছিল আর কে স্টুডিও।

মুম্বাইয়ের সিনেমা জগতের অনেকেই একটি সিনেমার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে মাথা ঘামান না। আর তাই অনেক সময়তেই অনেক ইতিহাস মুছে যায়। আর কে স্টুডিও ভিতরে ইতিহাসের অভাব ছিল না। কিন্তু কোনওদিনও টিকিট কেটে জনসাধারণের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি এই স্টুডিওর ভিতরে। যেমনটা হলিউডের ইউনিভার্সাল স্টুডিও করেছে। অনেকেই মনে করতে পারেন যে ধরণের পর্যটনের ধারণা তো মাত্র কয়বছর হল আমদানি হয়েছে। কিন্তু ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে তো এই ব্যবস্থা সেই ১৯১৫ সাল থেকে বলবৎ রয়েছে। সেই সময় ২৫ সেন্ট খরচ করে এই স্টুডিওর ভিতরে প্রবেশ করা যেত।

ভাবুন তো, ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া আলফ্রেড হিচককের 'সাইকো'-তে ব্যবহৃত বাড়িটি চোখের সামনে দেখতে কেমন শিহরণ জাগে। একই সঙ্গে যদি 'ডেসপারেট হাউসওয়াইফ'-এর সেই উইস্টেরিয়া লেনে কয়েক কদম পায়চারি করে নেওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। এবার ভাবুন আপনি 'আওয়ারা'-র রাজ্ কাপুর ও নার্গিসের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিংবা 'সরগম'-এর রাজ কাপুর, বৈজন্তীমালা বা রাজেন্দ্র কুমারকে চাক্ষুষ করছেন।

ইতিহাস বিনষ্ট

আর কে স্টুডিওর বিক্রি খবর শুনেই অনেক তারকাই স্মৃতিরোমন্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। অনেকেই এখন বলতে শুরু করেছেন প্রযোজক দেব আনন্দ তাঁর প্রতিটি ছবির জন্যে একটি করে সাউন্ড স্টেজ বুক করে রাখতেন। অনেকের স্মৃতিতে আবার স্টুডিওর ক্যান্টিনের বিখ্যাত আদা চা ও ওমলেট স্যান্ডউইচ।

body1_090518041915.jpgআওয়ারা সিনেমার একটি দৃশ্য [সৌজন্যে: স্ক্রিন গ্র্যাব]

যেভাবে এরকম একটি জলজ্যান্ত ইতিহাসের মৃত্যু হতে চলেছে তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অনেকেই সিনেমা জগতের আর্থিক সমস্যার জন্যে সরকারি করের উপর দোষ চাপায়। কিন্তু সিনেমা জগতের লোকেরা নিজেদের বিপদ কিছুটা হলেও নিজেরাই ডেকে এনেছেন। ভারতীয় রেলকে দেখুন। বিহারের সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসে ব্যবহৃত কামড়াগুলোতে কী ভাবে মধুবনী পেন্টিং আঁকা হয়েছে। এই ভাবেই তো নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে হয়।

হলিউড উদাহরণ

ছোটবেলায় একজন বাড়ীতে আমি রাজ কাপুরের সেই জোকার পুতুলটাকে দেখতে পেয়েছিলাম। এই পুতুল আমাকে এতটাই আকৃষ্ট করেছিল যে আগামী কয়েদিন ধরে আমি প্রতিটি খেলনার দোকানে তার খোঁজ করে বেড়িয়েছি। এই ধরণের পুতুল তো দুরস্ত, অনেকেই তো সিনেমার অরিজিনাল প্রিন্টতা কেও সংরক্ষিত করার কোনও ব্যবস্থা করেনি।

যাই হোক, আর কে স্টুডিওর শেষ মানে একটি যুগের অবসান। যে যুগ আর কোনও দিন ফিরে আসবে না। ইতিহাস ফিরে না আসুক স্মৃতি রোমন্থনে বাধা কোথায়। অনতিবিলম্বে আমাদের স্মৃতি সংরক্ষণে মন দেওয়া উচিৎ।

(সৌজন্যে: মেল টুডে)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

GAUTAM CHINTAMANI GAUTAM CHINTAMANI @gchintamani

Cinephile, observer of society and technology and author of the of Dark Star: The Loneliness of Being Rajesh Khanna.

Comment