রাহুল গান্ধীর পুরুষালী উপদেশ: পুরুষ যদি হতেই হয় হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো হন
পারিবারিক আভিজাত্য না থাকলেও নির্মলা সীতারমণ রাহুল গান্ধীর চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য
- Total Shares
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন যে রাফাল চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখে কুলুপ এঁটেছেন এবং তিনিও চান এই বিষয়ে একমাত্র নরেন্দ্র মোদীই কথা বলুন। কারণ, নরেন্দ্র মোদী একজন পুরুষ মানুষ।
সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ প্রায় ঘণ্টা দু'য়েক ধরে এই বিষয়ে কথা বলেছেন এবং বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও সন্তুষ্ট নন রাহুল গান্ধী। কারণ সীতারমণ একজন মহিলা, পুরুষ নন।
রাহুল গান্ধীর থেকে অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন নির্মলা সীতারমন [ছবি: পিটিআই]
সীতারমণ অর্থনীতিতে এমফিল করে থাকতেই পারেন, তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ডে চাকরিও করে থাকতে পারেন, তিনি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীও হয়ে থাকতে পারেন এবং বর্তমানে তিনি সাফল্যের সঙ্গে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করতে পারেন - তা সত্ত্বেও রাহুল গান্ধীর কাছে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কোনও গুরুত্বই নেই। কারণ দিনের শেষে তিনি একজন মহিলা।
রাহুল গান্ধীর নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা অবশ্য পরিবারতন্ত্রের উর্ধ্ব নয়। রুপোর চামচ মুখে দিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাসী একটি দলের সভাপতি তিনি হয়েছেন তিনি। কারণ তিনি সেই পরিবারের একজন পুরুষ সদস্য।
সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ডিয়া আমাদের জানিয়েছেন যে পুরুষরা মহিলাদের কথা শুনতে পছন্দ করেন না। মহিলাদের নামেও পুরুষদের কিছু যায় আসে না।
"তারা (পুরুষরা) শুধুই মহিলাদের চালচলন ও শরীরে বিশ্বাসী।"
যদি কেউ মনে করে থাকেন যে পাণ্ডিয়ার ঘটনাটি ব্যতিক্রম এবং মাত্র ২৫ বছর বয়েসে এহেন সাফল্যে তাঁর মাথা ঘুরে গেছে বলে তিনি এ ধরণের কথা বলেছেন, তা হলে তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে। কংগ্রেস সভাপতিও তো ঠিক একই কথা বলে চলেছেন।
With all due respect Modi Ji, in our culture respect for women begins at home. Stop shaking. Be a man and answer my question: Did the Air Force and Defence Ministry object when you bypassed the original Rafale deal?Yes? Or No? #RafaleScam
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) January 9, 2019
রাহুলও বলেছেন মোদী যেন 'মহিলাদের পিছনে নিজেকে লুকিয়ে না রাখেন'। পাণ্ডিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর বক্তব্যের খুব একটা ফারাক কিন্তু নেই।
রাহুল গান্ধীও মনে করেন যে মোদী একজন মহিলা মন্ত্রীকে রাফাল চুক্তি নিয়ে কথা বলার জন্য এগিয়ে দিয়েছেন কারণ মোদী ঠিক পুরুষালী নন বলে।
"মেয়েদের মতো কাঁদবে না", "পুরুষের মতো ব্যবহার কর" কিংবা "মহিলাদের মতো হাতে চুড়ি পরে বসে থেকো না" - প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্যবার আমরা এ ধরণের কথাশুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এই বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে আদতে সহানুভূতির উপর কর্তৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। সমবেদনার চেয়ে বেশি মাত্রায় শারীরিক শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। উদারতার চেয়ে বেশি মাত্রায় হিংস্রতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।
কিংবা, পাণ্ডিয়ার মতো -- ভালোবাসার চেয়ে বেশি মাত্রায় যৌনতাকে।
'পুরুষ' হওয়া মানেই মহিলাদের সঙ্গে এমন ভাবে আচরণ করতে হবে যেন তাঁদের কোনও অস্তিত্বই নেই। কিংবা, পাণ্ডিয়া আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন, শুধুমাত্র পুরুষদের শারীরিক ক্ষিদে মেটাতে মহিলাদের অস্তিত্ব রয়েছে।
রাহুল গান্ধী পুরুষদের পছন্দ করেন তাই তিনি মহিলাদের থেকে পুরুষদের সঙ্গে কথা বলতে পছন্দ করেন। একজন মহিলা, যিনি রাহুলের থেকেও বেশি অভিজ্ঞ, বেশি শিক্ষিত এবং বয়ঃজ্যেষ্ঠ, তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না কংগ্রেস সভাপতি।
কফি উইথ করণের সেটে হার্দিক পাণ্ডিয়া
আশা করা যায় পাণ্ডিয়াও পাবে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করেন না। হাজার হোক তাঁরা আর কতটুকুই বা খেলা বোঝেন! তার চেয়ে পাণ্ডিয়া করণ জোহরের কাছে যান ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করতে।
জয়পুরে একটি কৃষক সভায় রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন যে রাফাল বিতর্কে মোদী সীতারমণের পিছনে নিজেকে আড়াল করে রাখছেন। তিনি জানিয়েছেন, "মোদী সীতারমণকে রক্ষাকবচ করেছেন কারণ তিনি নিজে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন না।"
রাহুল জানান, "একজন মহিলা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সংসদে বক্তব্যে পেশ করলেন" কিন্তু কংগ্রেসের একটি সাধারণ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন।
পাণ্ডিয়া আর রাহুল গান্ধী যে পৌরুষে বিশ্বাস করেন সেই পৌরুষ অনুযায়ী -- মহিলারা যুক্তিসঙ্গত কথা বললেও সেই কথা পাত্তা না দেওয়ার পরমার্শ দিয়ে থাকে।
একটি জাতীয় দলের প্রধান হওয়ার পর রাহুলের উচিত মহিলাদের ক্ষমতায়ন, মহিলাদের উন্নয়ন কিংবা মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত বিলগুলো নিয়ে কথা বলা। কিন্তু তা কি আর বাস্তবে হচ্ছে?
মুখে মহিলাদের ক্ষমতায়নের কথা বলেন রাহুল, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না [ছবি: পিটিআই]
নির্বাচনের পর রাহুল গান্ধী মহিলা প্রার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলে থাকেন। কিন্তু তালিকা ঘোষণার সময় তার কোনও প্রতিফলন চোখে পড়ে না কারণ রাহুল আর পাণ্ডিয়ারা যোগ্য মহিলাদের খুঁজে পান না। মহিলাদের যোগ্যতা নেই বলে নয়, তাঁরা মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না বলে।
পাণ্ডিয়ার বক্তব্য না হয় 'বোকা বোকা' বলে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু রাহুল গান্ধীর এই পুরুষতান্ত্রিক কথাবার্তা মহিলাদের জন্যে সাংঘাতিক। ভাবতে অবাক লাগে, যে পরিবার থেকে দেশের প্রথম মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমনকি দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উঠে এসেছিলেন, সেই পরিবারের এক সদস্য এমন কথা বলে চলেছেন। তিনি নিজেও তো এই পরিবারের সদস্য বলে জোর গলায় দাবি করে থাকেন।
মোদ্দা কথা, একটি জাতীয় দলের প্রধান হয়েও রাহুল গান্ধী দেশের মহিলাদের গুরুত্ব দেন না। তাঁর ভাবধারার সঙ্গে একজন তরুণ ক্রিকেটারের ভাবধারার আদর্শগত কোনও পার্থক্য নেই।
পাল্টা প্রশ্ন, এই ধরণের নেতাকে কি গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে