নিউইয়র্ক টাইমসকে: পুলওয়ামা শুধুমাত্র 'বিস্ফোরণ' নয়, যেমন ৯/১১ শুধুমাত্র 'বিমান দুর্ঘটনা' ছিল না
পাকিস্তান মদতপুষ্ঠ জৈশ এই হামলার দায়ে স্বীকার করেছে, এনওয়াইটি-র সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্যটি কি নেই?
- Total Shares
১১ সেপ্টেম্বর, ২০১১ - যুক্তরাষ্ট্রের উপর এত বড় হামলা হয়েছিল, যে মাত্র কয়ে ঘণ্টার মধ্যেই ৩,০০০জন লোক নিহত হয়েছিল।
এই হামলা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লু বুশ জানিয়েছিলেন, এই হামলা আদতে আমেরিকার জীবনধারা উপরেও আক্রমণ। যে দেশগুলো সন্ত্রাসবাদীদের চোখ রাঙানি সহ্য করেছিল তারা সকলেই এক হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল।
দ্য নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) ৯/১১ হামলার পরে আফগানিস্তান ও ইরাকে অবস্থিত জঙ্গিঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিল। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ন্যাটোর সংজ্ঞা ছিল:
"রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নীতিগত লক্ষ পূরণের জন্য সরকার বা সমাজকে আতঙ্কিত করে তুলতে বেআইনিভাবে ব্যক্তি বিশেষের উপর কিংবা সম্পত্তির উপর বলপ্রদর্শন করা কিংবা হিংসা ছড়ানো।"
৯/১১ একটু জঙ্গিহামলা ছিল, বিমান দুর্ঘটনা নয় [ছবি: রয়টার্স]
খুবই দুর্ভাগ্যজনক, আজ একটি মার্কিন সংবাদপত্র গোটা বিশ্বের কাছে সন্ত্রাসবাদের এই সংজ্ঞাকে বদলে দিতে চাইছে।
একটি আত্মঘাতী হামলাকে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস শুধুমাত্র 'একটি বিস্ফোরণ' বলে দাবি করেছে। পুলওয়ামাতে ১৮ ফেব্রুয়ারী হওয়া এই 'একটি বিস্ফোরণে' ৪০জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের কোনও মাথা ব্যাথা নেই। এই ধরণের হামলায় যে বছরের পর বছর কয়েক হাজার ভারতীয়র মৃত্যু হচ্ছে তা নিয়েও নিউইয়র্ক টাইমসের কোনও মাথা ব্যাথা নেই। পাকিস্তান যে আত্মঘাতী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতীয়দের হত্যা করতে তাদের ভারতে পাঠাচ্ছে তা নিয়েও নিউইয়র্ক টাইমসের কোনও মাথা ব্যাথা নেই।
মুম্বাই জঙ্গিহামলায় ছ'জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছিলেন [ছবি: পিটিআই]
প্রশ্ন জাগে, ২৬/১১ মুম্বাই হামলা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিক্রিয়া ঠিক কী? এই হামলায় তো ছ'জন মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল।
গণত্রান্ত্রিক বিশ্ব এক হয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে, এই ধরণের ধর্মীয় চরমপন্থার কোনও মানে হয় না এবং চরমপন্থীরা তাদের শিকারে কোনও রকম ভেদাভেদ রাখে না। কিন্তু, নিউইয়র্ক টাইমসকে দেখে মনে হচ্ছে তারা তাদের গণতান্ত্রিক নীতিগুলোকে ভুলতে বসেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে (যা পরে সংবাদপত্রটির টুইটার হ্যান্ডেলেও পোস্ট করা হয়েছিল) পুলওয়ামা জঙ্গিহামলাকে 'একটি বিস্ফোরণ' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এই প্রতিবেদনটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
Troubling that @nytimes chooses to describe a terrorist suicide attack as ‘an explosion.’ What’s next? Describing a beheading as ‘loss of a human head?’ @gettleman @nytimesworld https://t.co/1qolfH4KAy
— Husain Haqqani (@husainhaqqani) March 12, 2019
এর পরেই এই প্রতিবেদনের টুইটটি মুছে ফেলা হয়।
কিন্তু এই প্রতিবেদনটি নিয়ে কোনও জবাবদিহি করা হয়নি।
এটা কিন্তু কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। নিউইয়র্ক টাইমস কিন্তু বারংবার এই হামলাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা বলার থেকে বিরত থেকেছে এবং এই হামলার প্রভাব আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কতটা পড়তে পারে সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন ছেপেছে। সংবাদপত্রটির বিশ্লেষণে এমনও বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে, "মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীর পৃথিবীর অনত্যম প্রত্যন্ত অঞ্চল। তাই এই রাজ্য জুড়েই ভারত বিরোধী মনোভাব লক্ষ করা যায়।"
দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরণের একপেশে মন্তব্য কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস একা করছে না। রয়টার্সের মতো সংস্থাগুলোও, পুলওয়ামা জঙ্গিহামলায় পাকিস্তান যে দায়ী নয় তা প্রমান করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, পুলওয়ামা হামলার আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল আহমদ দর শুধুমাত্র উপত্যকার তরুণদের মধ্যে জমে থাকা অসন্তোষের প্রতিবাদ করতে এই হামলা করেছে।এই ধরনের একটি প্রতিবেদন মাত্র দিন দু'য়েক আগেই রয়টার্সে প্রকাশিত হয়েছে।
অসন্তোষের দোহাই দিয়ে, তা যতই সত্যি হোক না কেন, পুলওমার মত একটি হামলাকে সমর্থন করা যায় না। সে ক্ষেত্রে, আমরা কি তাহলে ৯/১১ হামলাকে শুধুমাত্র একটি 'বিমান দুর্ঘটনা' বলে উল্লেখ করব?
নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্স ভারতকে সমর্থন করবে কী পাকিস্তানকে সমর্থন করবে তা ঠিক করার দায়িত্ব সংস্থা দুটির কতৃপক্ষের। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা সব সময়েই কাম্য। কিন্তু এই দুটি সংস্থাই যেভাবে সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞাই পাল্টে ফেলছে তা সত্যিই বিশ্বজুড়ে যারা সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে তাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।
শুধুমাত্র বিস্ফোরণ নয়, পুলওয়ামাতে ৪০জন শহীদ নিহত হয়েছিল [ছবি: রয়টার্স]
কাশ্মীর নিয়ে যদি কোনও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয় তাহলে তা শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের সরকারের মধ্যেই হবে। ভারত পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত পাকিস্তান জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ করছে ততক্ষন তারা পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করতে রাজি নয়।
ভারত পুলওয়ামা জঙ্গিহামলা নিয়ে কোনও কথা বলার আগেই পাকিস্তানের মদতপুষ্ঠ জঙ্গিসংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ এই হামলার দায়ে স্বীকার করে নিয়েছিল।
কেন এই তথ্যটি নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্সে কর্মরত সাংবাদিকদের কাছে নেই?
মার্কিন নাগরিক, আফ্রিকান নাগরিক, অস্ট্রেলীয় নাগরিক কিংবা ইউরোপীয় নাগরিকদের মতোই ভারতীয় নাগরিকদের জীবনও কিন্তু মূল্যবান।
সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এইধরনের বাছবিচার সত্যিই লজ্জাজনক। এবং, অসমর্থিত।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে