পুলওয়ামা জঙ্গিহানা: লড়াই শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, ঘরোয়া লড়াইও রয়েছে
ঠান্ডা ঘরে থাকা যুদ্ধপিপাসী, সুযোগসন্ধানী জাতীয়তাবাদী, দেশদ্রোহী - এই ছোট ছোট যুদ্ধও জিততে হবে
- Total Shares
দেশকে আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়ার সময়ে এসেছে।
ব্রিটিশদের এই দেশ থেকে তাড়াতে কোনও যুদ্ধের প্রয়োজন পড়েনি। ভঙ্গুর পাকিস্তানের থেকে ব্রিটিশরা আরও শক্তিশালী ও সাহসী হওয়া সত্ত্বেও।
কোনও বোমাবাজি না করেই সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়া পাকিস্তানকে মাথা নত করাবার মতো ক্ষমতা রয়েছে এই দেশের। তাই এই মুহূর্তে যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ করার কথা ভাবা উচিত - কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে। যা দিয়ে শত্রুর শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া সম্ভব। কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ ইতিমধ্যেই বাড়তে শুরু করে দিয়েছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও আমাদের আরও আক্রমণাত্মক হতে হবে।
শুরুতেই, আমাদের বিশ্বকে খুশি রাখার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।
পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু ঘরোয়া সমস্যাগুলো আগে মেটাতে হবে [ছবি: রয়টার্স]
এক হয় আপনি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা খুঁজে বেড়ান, নয়তো খারাপ কে খারাপ বলার সাহস দেখান।
সেনাবাহিনীর অভিযানের সময়ে সাধারণ মানুষ জওয়ানদের লক্ষ করে ঢিল ছুড়ছে - তা কখনই গণতন্ত্র হতে পারে না। তা জঙ্গিদমনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা ভিন্ন আর কিছুই নয়। যারা পাথর ছুড়ছে তাদের যদি মানবাধিকার থেকে থাকে তাহলে সেনাবাহিনীরও আছে - যাঁরা দিনের পর দিন নিজেদের পরিবার ছেড়ে আমাদের সীমান্ত পাহারা দিয়ে চলেছেন। তাঁদের কনভয়ের জন্য যদি রাস্তা প্রয়োজন হয় তা হলে সেই রাস্তা আমাদের ছেড়ে দেওয়াই উচিত।
হাজার হোক, দিল্লি এমনকি উপত্যকাতেও আমরা রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের ভিআইপি মুভমেন্টের জন্য রাস্তা ছেড়ে দিয়ে থাকি!
আর কাশ্মীরি তরুণরা যে জৈশ-ই-মহম্মদের কর্মী দেশদ্রোহী আদিল আহমেদ দারের ছবি সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তা দেশের স্বার্থে ইতিমধ্যেই বন্ধ করতে হবে। স্থানীয়রা ছেলের কীর্তির জন্য দারের বাবাকে সম্বর্ধনা জানালে তা সন্ত্রাসবাদের অংশ হিসেবেই ধরে নিতে হবে।
এটা কোনও মতেই ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা গণতন্ত্র হতে পারে না, একে বলে 'দেশদ্রোহিতা'।
যাঁরা ঠান্ডা ঘরে বসে যুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন তাঁদের জন্য আমার একটি অনুরোধ রয়েছে। যদি আপনার পুত্র, কন্যা কিংবা নিকট আত্মীয়ের কেউই সীমান্তে কর্মরত না হন তাহলে যুদ্ধের ডাক দেওয়ার আগে আপনার নৈতিকতাকে আরও একবার ঘষেমেজে নিন। স্টুডিও কিংবা বাড়ির বৈঠকখানা থেকে যুদ্ধের ডাক দেওয়া বন্ধ করুন যদি না আপনার প্রিয় কারুর জীবন বিপন্ন হয়ে থাকে। ঠান্ডা ঘরে বসে শুধু মাত্র যুদ্ধের ডাক দিয়েই জাতীয়তাবাদী চরিত্র প্রমাণ করা যায় না।
শুধুমাত্র যুদ্ধের ডাক দিয়ে নিজেকে জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠা করা যায় না [ছবি: রয়টার্স]
দয়া করে এ জিনিস বন্ধ করুন।
এর পরে, সুযোগসন্ধানী জাতীয়তাবাদীদের থামানোর চেষ্টা করুন। চল্লিশজন জওয়ানের মৃত্যু, যাঁরা লড়াই করার সুযোগটুকুও পায়নি, আপনার দেশাত্মবোধ জাগাতে পারে না -- দেশাত্মবোধের অনভূতি হঠাৎ জাগে না। দেশাত্মবোধ দেশের জিনের মধ্যেই থাকে, তা শুধু অচলাবস্থার সময়তেই নয়, শান্তির সময়তেও বিরাজ করে।
পরিশেষে, কেউ যদি পুলওয়ামা জঙ্গিহামলাকে হাতিয়ার করে প্রতিবেশী কাশ্মীরিদের হয়রান করে, তাহলে তাকে জেলবন্দি করা উচিত। যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা তাদের ছোট মনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করছে এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা সত্যিকারের ভারতীয় হয়ে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করছেন, ততক্ষণ তাঁদেরকে দিনের আলো দেখতে দেওয়া উচিত নয়।
আসুন, বড় যুদ্ধ জয় করতে আগে আমরা এই ছোট ছোট ঘরোয়া যুদ্ধগুলো জয় করি।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে