ভারতের এয়ার স্ট্রাইকে নয়, পাকিস্তানের মিথ্যেতে বীতিশ্রদ্ধ হয়ে কাকের মৃত্যু হয়েছে বালাকোটে
জঙ্গিহামলায় ১৫০জন স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুর পরে জঙ্গিরা সক্রিয় পাকিস্তানে, সে দেশে কাকের জীবন মূল্যহীন
- Total Shares
পাকিস্তানের বালাকোটের উপর ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইক এখনও খবরের শিরোনামে রয়েছে। এই এয়ার স্ট্রাইক এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে এই এয়ার স্ট্রাইকের কথা পাকিস্তান পর্যন্ত অস্বীকার করতে পারেনি।
এই এয়ার স্ট্রাইকে কতজনের প্রাণহানি ঘটেছে - শুধুমাত্র সেই তথ্যটি অস্বীকার করেছিল পাকিস্তান।
কেন্দ্রীয় সরকার বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকে প্রাণহানির সংখ্যা সরকারিভাবে ঘোষণা না করায় ভারত জুড়ে শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপির) সঙ্গে বিরোধীদের বিবাদ চরমে পৌঁছায়।
কিছু বিজেপি নেতা নিজেদের মতো করে প্রাণহানির সংখ্যা ঘোষণা করতে শুরু করে দিয়েছিল, যা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। আর, এই পরিস্থিতিতে সরকার চুপ থাকায় এই এয়ার স্ট্রাইকের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল।
বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে মিথ্যের আশ্রয় নিচ্ছে পাকিস্তান [ছবি: রয়টার্স]
দুর্ভাগ্যবশত, ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে এই তর্ক-বিতর্ক কিন্তু পাকিস্তানকে সুবিধা করে দিয়েছিল। ভারতীয়রা তো নিজেরাইও এই এয়ার স্ট্রাইকের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে - এই কথা বলে পাকিস্তান খুব সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছিল।
সত্যিটা হল, পুলওয়ামা জঙ্গিহামলার পর দুই প্রতিবেশি রাষ্ট্রের মধ্যে যে অচলাবস্থা চলছে তাতে আগাগোড়া মিথ্যে কথা বলে চলেছে পাকিস্তান। আর, একটি 'গরুর রচনা' থেকে এই মিথ্যের সূত্রপাত। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম সর্বপ্রথম এই 'গড়ুর রচনাটি' লিখেছিল।
গরুর রচনা না বলে কাকের রচনা বললে বোধহয় উপযুক্ত হবে। পাকিস্তানের প্রশাসনের মতে, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকে শুধুমাত্র একটি কাকের জীবনহানি ঘটেছিল।
এই ঘটনার একদিন বাদে, পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর খাইবার পাখতুনখাওয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একটি মৃত্য কাকের ছবির তুলে সেই ছবিটি টুইটারে পোস্ট করেছিলেন।
এই প্রতিবেদনটির ভিডিও ক্লিপিং ভাইরাল হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সকলেই এই বিষয়টি নিয়ে মস্করা শুরু করে দিয়েছিল।
I visited mountain area of Jabba 25 km away from Balakot today in KPK where Indian Air Force dropped bombs yesterday I found one dead body at the spot and it was a crow pic.twitter.com/FmiMQZ60DK
— Hamid Mir (@HamidMirPAK) February 27, 2019
এখন এই মস্করাগুলোকে বাদ দেওয়া যাক। কারণ, পাকিস্তানকে এখন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
প্রথম প্রশ্ন, পুলওয়ামা জঙ্গিহামলা ও তার পরবর্তি ঘটনাগুলোর পরে পাকিস্তান নিজেদের অবস্থান কী ভাবে বদল করবে?
বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের পরে, পাকিস্তান বায়ুসেনা ভারতীয় সীমান্তের এপারে জম্মু অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল। তবে ভারতীয় বায়ুসেনা সজাগ ছিল বলে সেদিন তাদের ভারতের আকাশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
এই লড়াই চলাকালীন ভারতীয় বায়ুসেনার একটি যুদ্ধবিমানে আঘাত লাগে। বিমানটির পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান ইজেক্ট করতে বাধ্য হন। শেষ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের মাটিতে অবতরণ করে পাকিস্তানের হাতে বন্দি হন।
সেদিন পাকিস্তান দু'জন ভারতীয় পাইলটকে বন্দি হয়েছে বলে দাবি করেছিল। মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইটারে এই মিথ্যে তথ্যটি প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আরও এক ধাপ এগিয়ে জানিয়েছিলেন, দু'জন ভারতীয় পাইলটের মধ্যে একজন আহত হয়েছেন এবং তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল - যাকে হাসপাতালে পাঠানো হল, সেই দ্বিতীয় পাইলটটি কে ছিল?
পাকিস্তানের যে এফ-১৬ বিমান ভারতের আকাশে প্রবেশ করার পর ভেঙে পড়েছিল, তিনি কি সেই বিমানটির পাইলট? তাঁকে কি ভারতীয় পাইলট বলে ভুল করে তাঁর দেশের বাসিন্দারাই গণধোলাই দিয়েছিলেন?
নাকি, দেশের সেনাপ্রধান ইচ্ছে করেই প্রধানমন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন যাতে গোটা বিশ্বের কাছে ভুল তথ্য পৌঁছায়?
কেন পাকিস্তান সরকার এই ধরণের মিথ্যে তথ্য প্রকাশ করেছিল? দেশের সাংসদরা কিংবা সাংবাদিক হামিদ মীর কি সরকারের কাছে এই প্রশ্নটি করার সাহস দেখতে পারবে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও অবধি পাওয়া যায়নি। এদিকে, এর পরেও, ইমরানে খান একের পর মিথ্যে তথ্য সরবারহ করে গিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও দুই পাইলটের বন্দির খবর ঘোষণা করেছিলেন [ছবি: এপি]
৮ মার্চ ইমরান খান বলেছিলেন, কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে বিদেশে (বিশেষ করে ভারতে) হামলা করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
পাকিস্তানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যে গোষ্ঠীগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেই গোষ্ঠীগুলো দ্বারা চালিত অন্তত ১৮২টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ১২০জন লোককে আটক করা হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, পুলওয়ামা আক্রমণের পর পাকিস্তান তো এই ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছিল, তাহলে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন?
যে সংগঠনগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল তারা কী ভাবে পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় ছিল?
ইতিহাস বলছে, পাকিস্তান কোনও দিনও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি, শুধুমাত্র লোক দেখানোর মতো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। ২০০২ সালে যখন পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী ভারতের সংসদ ভবনে আক্রমণ করেছিল তখনও পাকিস্তান এ ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু, এর পরেও, পাকিস্তানের জঙ্গিরা মুম্বাই, পাঠানকোট কিংবা পুলওয়ামার মতো বহু জায়গায় হামলা চালিয়েছে।
ভারতে হওয়া প্রতিটি জঙ্গিহামলার পর পাকিস্তান এমন লোক দেখানো ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
আবার, কিছুদিনের জঙ্গি সংগঠনগুলো পুরোদমে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
তাই, এবারেও পাকিস্তানের দাবিকে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে? বিশেষ করে, যেখানে, কতজন পাইলট তাদের দেশে অবতরণ করেছিল সেই বিষয়েও দেশের সেনাবাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত নয়।
পাকিস্তানের সেই 'গরুর রচনা' বা 'কাকের রচনা'-ই প্রমান করে যে তারা সন্ত্রাসবাদকে ঠিক কতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
ভারতীয়দের কাছে মৃত কাকের গল্প শুনিয়ে কোনও লাভ হবে না। ভারতীয় সমাজে কাককে অন্যরূপে দেখা হয়। হিন্দিতে একটা প্রবাদ আছে, 'ঝুট বোলে, কাউয়া কাটে।'
পাকিস্তানে অবশ্য একটি কাকের জীবনের কোনও দাম দেনি।
পেশোয়ার জঙ্গিহামলায় ১৫০জন স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুর পরেও যে দেশে সন্ত্রাসবাদীরা নিশ্চিন্তে সক্রিয় থাকতে পারেম সে দেশে একটি কাকের জীবনের আর কীই বা মূল্য থাকতে পারে?
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে