সুসংবাদ: গত দশ বছরে দেশের দারিদ্র্যের সংখ্যা অর্ধেক হয়েছে
২০০৫-০৬ সালের পর থেকে ২৭১ মিলিয়ন ভারতীয় দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে
- Total Shares
ডলারের তুলনায় ভারতীয় মুদ্রার দাম ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। উল্টোদিকে, উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্বালানির দাম। সব মিলিয়ে, ভারতীয় অর্থনীতিরহাল খুব করুন। এরই মাঝে একটি সুখবর রয়েছে যা নিয়ে উল্লাস করা যেতেই পারে। রাষ্ট্রপুঞ্জ উন্নয়ন প্রকল্পের মাল্টিডাইমেনশন্যাল পভার্টি ইনডেক্স (এমপিআই) ও অক্সফোর্ড পভার্টি এন্ড হিউমান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (ওপিএইচআই) রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৫-০৬ সাল থেকে পরের এক দশকে দেশের প্রায় ২৭১ মিলিয়ন নাগরিক দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, শেষ ১০ বছরে দেশের দারিদ্র্যের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
ওপিএইচআই-র নির্দেশক সাবিনা আলকিরের মতে, "এমপিআই-এর সাহায্যে গোটা বিশ্বে দারিদ্র্যের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা সম্ভব। এর সাহায্যে আমরা জানতে পারি বিভিন্ন দেশগুলো সে দেশে দরিদ্র্য দূর করতে কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এছাড়া কারা দরিদ্র্য সে বিষয় আমাদের একটা সম্যক ধারণা হয়। দরিদ্র্যরা কোথায় থাকে এবং তাদের অভিজ্ঞতার কথাও এর মাধ্যমে জানা যায়।
বিশ্বের ১০৪টি দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ লোক, অর্থাৎ প্রায় ১.৩ বিলিয়ন লোক, দারিদ্র্য সীমায় বসবাস করে আর এদের নিয়েই ২০১৮ সালের এমপিআই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এর রিপোর্টে বলা হচ্ছে বিশ্বের দরিদ্র্যদের ৪৬ শতাংশ চরম দারিদ্র্যে বসবাস করেন যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। উল্টোদিকে, এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে গত ১০ বছরে ভারতের দরিদ্র্য সংখ্যা ৫৫ শতাংশ থেকে কমে ২৮ শতাংশ হয়েছে।
আলকিরের মতে, এই তথ্য নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক কারণ অনেকটা চিনের মতোই গত কয়েক দশকে এ দেশেও দারিদ্র্যের সংখ্যা কমছে।
ডাচ ওয়েলকে দেওয়ায় এক সাখ্যাৎকারে আলকিরে বলেছেন, "এই পরিবর্তন নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও দেশের দরিদ্র্যদের সংখ্যা ৬৩৫ মিলিয়ন থেকে ক্রমে ৩৬৪ মিলিয়ন হয়েছে। তার মানে ২৭১ মিলিয়ন লোক দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। সংখ্যাটা সত্যিই বড়।"
গোটা বিশ্বে ১.৩ বিলিয়ন দরিদ্র মানুষ রয়েছে [ছবি: রয়টার্স]
এই রিপোর্টে আরও অনেক কিছুই রয়েছে যা নিয়ে সত্যিই খুশি হওয়া যায়।
শুরুতেই বলে নেওয়া যাক যে রিপোর্ট অনুযায়ী শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, "২০১৫-১৬ সালে ৩৬৪ মিলিয়ন লোক দরিদ্র্য ছিল। এদের মধ্যে ১৫৬ মিলিয়ন (৩৪.৬ শতাংশ) শিশু। অর্থাৎ, দেশের প্রতি চারজন দরিদ্র্যর মধ্যে একজনের সামান্য বেশি দরিদ্র্যর (২৭.১ শতাংশ) বয়স দশ পেরোয়নি। এবার সুখবরটা দেওয়া যাক। ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত কমেছে।"
কিন্তু তার মানে সবকিছুই ভালো হচ্ছে এটা ভেবে বসার কিছুই নেই।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের নির্দেশক বিদিশা পিল্লাই ডিডাব্লিউকে বলেছেন যে দরিদ্র্য কমে যাওয়া মানে এই নয় যে শিশুদের আধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না বা শিশুদের জীবনধারার উন্নতি ঘটেছে।তিনি জানিয়েছেন, "অনেকেই দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু তার মানে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া শিশুদের সমস্যাগুলো যে সমাধান হয়েছে তা নয়।"
রিপোর্টে আরও কিছু রয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সাল অবধি দেশের প্রথাগত প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো - যেমন গ্রামাঞ্চলের লোকেরা, নিম্নবর্ণের জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায় এবং মুসলমান সবচেয়ে বেশি দরিদ্র্য ছিল।
শিশুদের দারিদ্র্য খুব দ্রুত কমছে [ছবি: রয়টার্স]
রিপোর্ট অনুযায়ী সে সময় দেশের দরিদ্র্যের অর্ধেকও বেশি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ উচ্চবর্ণের লোক গরিব ছিল। রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মুসলমান ও ছ'জনের মধ্যে একজন খ্রিস্টান দরিদ্র্য।
আলকিরে জানাচ্ছেন, "এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যারা সবচেয়ে বেশি গরিব তাদের জীবনধারার কোনও পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু ২০১৫-১৬ থেকে যে ইতিবাচক ধারার সূত্রপাত হয়েছে তা মানুষের দুঃখ দুর্দশা কমাবে বলে আমরা আশাবাদী।"
রাষ্ট্রপুঞ্জ উন্নয়ন প্রকল্পের হিউমান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স-এর (এইচডিআই) রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত ১৩০ নম্বরে রয়েছে। অবশ্য, গত বছর ভারত ১২৯ নম্বরে ছিল। অর্থাৎ, এক ধাপ পিছিয়েছে।
এর মানে ভালো খবরের পাশাপাশি খারাপ খবরও রয়েছে।
তবে এই রিপোর্টটির সময়কাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামনেই নির্বাচন। শাসক দল বিজেপি খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। ঠিক এই সময় এই ধরণের এই রিপোর্ট বিজেপির কাছে আশীর্বাদ হিসেবেই দেখা দেবে। উল্টোদিকে, এই দশ বছরের রিপোর্টার মাত্র ২টি বছর বিজেপির শাসন ছিল। বাকি বছরগুলোতে দেশে কংগ্রেস শাসন করত। সে ক্ষেত্রে, বিরোধী শিবিরও যে এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করবে তা বলাইবাহুল্য।
কিন্তু নির্বাচনের পর শাসক দলের কাজটা কঠিন হয়ে পড়বে। পরের পাঁচ বছর যেই দেশের শাসনের ক্ষমতা যে দলের হাতে থাকবে সেই দলকে নিচিত করতে হবে যে দারিদ্র্য দূরীকরণের এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে।