দিল্লির থেকেও দূষণ মাত্রা বেশি কলকাতায়, এ তো ভবিতব্য ছিল
কলকাতার দূষণ মাত্রার উত্তরোত্তর বৃদ্ধির মূল কারণ সচতনতার অভাব
- Total Shares
শুনতে পাচ্ছি দিল্লির থেকেও দূষণের পরিমাণ নাকি আমার আপনার অতি প্রিয় কলকাতায় অনেক বেশি। খবরটা শুনে আমি বিন্দুমাত্র অবাক হয়নি। কারণ সেটাই ভবিতব্য ছিল।
কেন? প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে দেখেনি মূল কোন কোন কারণের জন্য এই শহরের পরিবেশ দূষিত হয়।
১) যানবাহন। কলকাতার যানবাহনের সংখ্যা নেহাত মন্দ নয়। তার উপর রাতের বেলায় শহরে বড় বড় লরির আনাগোনা বেড়ে যায়। এই বড় বড় লরি কিন্তু পরিবেশ দূষিত করতে সিদ্ধহস্ত।যানবাহন থেকে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ছড়াবার অন্যতম কারণ হচ্ছে পুরোনো বাসগুলো। আদালতের নির্দেশ রয়েছে যে ১৫ বছরের পুরোনো কমার্সিয়াল গাড়ি আর চালানো যাবে না। কিন্তু, বাস্তবে, সেই নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শহরের বুকে বেশ কয়েকটি পুরোনো বাস চলাচল করে থাকে।
চিৎপুর রেলওয়ে ইয়ার্ড ও কলকাতা রেলওয়ে ইয়ার্ড শহর দূষিত হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়ে থেকে। এই দুটি স্থানে প্রচুর মাল লোডিং-আনলোডিং হয়। এর ফলে সারাদিনই এই অঞ্চলগুলোতে লরির বাড়বাড়ন্ত থাকে। বিটি রোডে রবীন্দ্র ভারতীর ক্যাম্পাসের সামনে একটি স্বয়ংক্রিয় দূষণ মাপার যন্ত্র রয়েছে, উপরোক্ত দুটি কারণে এই যন্ত্রে দূষণের মাত্রা সবসময় বিপদসীমার উপরে থাকে।
২) দূষণ ছড়াচ্ছে নির্মাণ শিল্পের থেকে, মানে নির্মীয়মান বাড়িগুলোর থেকে। বাড়ি নির্মাণের সময় বেশ কয়েকটি কার্যপ্রণালী চিহ্নিত করা রয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইনে। কিন্তু কেউই তা মানেন না। শুধু বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সরকার ও পুরসভা এমনকি পঞ্চায়েতগুলোও রাস্তা বা কোনও প্রকল্প নির্মাণের সময়ে এই আইন মেনে কাজ করে না।
৩) পরিবেশ দূষণের জন্য আবর্জনার গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সঠিক পদ্ধতি মেনে আবর্জনা নির্মূল করা হয় না। উল্টে তা ডাম্প করে রেখে দেওয়া হয়। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসের দু'ধারে এমন করেই আবর্জনা ডাম্প করে চার চারটি পুর সংস্থা। এই এলাকার পরিবেশ দূষণ কিন্তু দুর্বিসহ।
৪) কলকাতার বস্তি অঞ্চলগুলোতে এখনও কয়লা ব্যবহার হয়ে থাকে। সেখানে গ্যাসের ব্যবস্থা না থাকায়। এছাড়া শহরে এমন প্রচুর রেস্তোরাঁ আছে যারা কয়লার আগুন ছাড়া রান্না করে না। কারণ এই রেস্তোরাঁগুলোতে যে খাবার তৈরি হয় তা নাকি কয়লার আগুন ছাড়া সুস্বাদু হয় না। কয়লা থেকেও পরিবেশ দূষিত হয়।
দিল্লির চেয়েও দূষণ বেশি কলকাতায় [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
৫) শহর জুড়ে ও শহরতলিতে বেআইনি গাড়ি সারাইয়ের দোকানের রমরমা ব্যবসা। আর এই দোকানগুলো থেকে যথেষ্ট পরিমাণে দূষণ ছড়ায়।
৬) শহরের জলাভূমিগুলো বেশিরভাগই বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাতাসের ধূলিকণা আর জলে পড়ছে না, রাস্তায় জমছে। মানে এই ধূলিকণা আবার বাতাসে মিশছে।
মূলত এই কারণগুলোর জন্য মহানগরীর পরিবেশ দূষিত হয়। দিল্লিতে দূষণ মাত্রার বৃদ্ধির পিছনেও এই কারণগুলো কিছুটা দায়ী। এ ছাড়াও দিল্লিতে অন্য কিছু কারণও রয়েছে যা কলকাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
কিন্তু দূষণ মাত্রায় এবার দিল্লিকে টেক্কা দিচ্ছে কলকাতা। কয়েকটি ক্ষেত্রে তো ছাপিয়েও গিয়েছে। এবং তা হওয়ারই ছিল।
দিল্লির দূষণ এখন বেশ চর্চিত একটি বিষয়। এ নিয়ে নানান ধরণের লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে সংবাদপত্র কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে। অর্থাৎ, কিছুটা হলেও সচেতনতা গড়ে উঠেছে। আমাদের এখানে এই সচেতনতার প্রচণ্ড অভাব রয়েছে।
আবার বলব শুধু সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, সরকারেরও দোষ রয়েছে। কিছুদিন আগে গ্রিন সিটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। নামেই 'গ্রিন' কিন্তু এর সঙ্গে পরিবেশের কোনও সম্পর্ক নেই।
সেই প্রকল্পে রাস্তা নির্মাণের কথা লেখা হয়েছে আলোক সজ্জার কথাও ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ দূষণ নিয়ে একটি লাইনও লেখা নেই।
সচেতনতার অভাব যে কতটা তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।