পোল্লাচি ধর্ষণকাণ্ড: শুধু অভিযুক্ত নয়, পুলিশকর্মীদেরও সাজার প্রয়োজন
এসপির মতো একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক কী ভাবে ধর্ষিতা মহিলার পরিচয় প্রকাশ করে দিলেন?
- Total Shares
যেদিন থেকে পোল্লাচি ধর্ষণ কাণ্ড খবরের শিরোনামে চলে এসেছে সেদিন থেকেই তামিলনাড়ু পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
শুক্রুবার নির্যাতিতা এক মহিলা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে এই ভয়াবহ যৌন হেনস্থা কাণ্ডটি প্রকাশ্যে আসে।
কিছু সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে প্রায় দু'শোর বেশি মহিলা এই কান্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারে।
কিছু সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে প্রায় দু'শোর বেশি মহিলা এই কান্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারেন [সৌজন্যে: রয়টার্স]
তামিলনাড়ু পুলিশ অবশ্য দাবি করে আসছে, এই ঘটনার সঙ্গে মাত্র চারজনই যুক্ত ছিল এবং মাত্র চারজন মহিলাই এই ঘটনার শিকার হয়েছে।
পুলিশ শুধুমাত্র একটি তথ্যের উপর নির্ভর করে এই দাবি করছে -এই ঘটনার তদন্ত করতে নেমে প্রধান অভিযুক্তের কাছ থেকে পুলিশ যে মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে, সেই ফোনে মাত্র চারটি ভিডিও রয়েছে। কিন্তু ঘটনার আর এক অভিযুক্ত নিজের মুখে স্বীকার করেছে যে এই কাণ্ডে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে এবং আরও অনেক মহিলাই এই কান্ডের শিকার হয়েছে।
এই কাণ্ডে, মহিলাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তাদের ধর্ষণ করা হত আর সেই ধর্ষণের মুহূর্ত ভিডিওবন্দি করে রেখে দেওয়া হত। পরে, সেই ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে মহিলাদের উপর যৌন অত্যাচার করা হত এবং তাদের কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করা হত।
এই ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিক পান্ডিয়ারঞ্জন জানিয়েছেন, "আমরা পর্যাপ্ত তথ্য পেয়েছি। ... অভিযুক্তদের প্রাথমিক জেরা চলাকালীন তারা আমাদের প্রচুর তথ্য দিয়েছে। প্রয়োজন পড়লে আমরা তাদের পুলিশি হেফাজত চাইব।"
অভিযুক্ত নিজের মুখে যা দাবি করেছে পুলিশ এখন সেই দাবি ঢাকতে চাইছে - এই পরিস্থিতি সচারচর দেখা যায় না।
এই ঘটনা নিয়ে সরকারও যে ভাবে মৌনব্রত অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সত্যিই লজ্জাজনক। নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের হাতে রয়েছে তারাই যদি অভিযুক্তদের হয়ে কথা বলতে শুরু করে দেন তাহলে তামিলনাড়ুর মহিলারা সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়বে।
অগণিত মহিলারা যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার পরও চুপ থাকে কারণ পুরুষরা তাদের সঙ্গে ব্ল্যাকমেল করে। তারা মুখ খুলতে ভয় পায় কারণ আইন ব্যবস্থার উপর তাদের আস্থা নেই।
এই বিশ্বাস যাতে আরও কমে সেই ব্যবস্থাই এখন তামিলনাড়ুর পুলিশ করছে।
সরকার এখন মামলাটি সিবিআই -এর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কিন্তু তাই বলে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট প্রশ্ন থেকেই যাবে।
উদ্ধার হওয়া মোবাইটির থেকে ভিডিও তো মুছে ফেলাও হতে পারে - তদন্তকারী আধিকারিককে যখন এই প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি জানান, "ভিডিও ডিলিট করা হলে আমরা তা পুনরায় উদ্ধার করতে পারব। ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য মোবাইলটিকে পাঠানো হয়েছে।"
সে ক্ষেত্রে, পুলিশ কেন দাবি করে চলেছে যে মাত্র চারটি ঘটনাই ঘটেছে?
মুখ্যমন্ত্রী ই পালানিস্বামী ও উপমুখ্যমন্ত্রী ও পন্নিরসেলভম অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে একটিও বিবৃতি দেননি।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী ও পন্নিরসেলভম অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে একটিও বিবৃতি দেননি [ছবি: পিটিআই]
পয়লা মার্চ, কোয়েম্বাটোরের এসপি আর পান্ডিয়ারঞ্জন এক সাংবাদিক সম্মেলনে লাঞ্চিত মহিলার নাম ঘোষণা করা দিয়েছিলেন। ধর্ষিতা মহিলাদের নাম প্রকাশ করা আইনবিরুদ্ধ - তামিলনাড়ু পুলিশের একজন সিনিয়র আধিকারিক এই সামান্য নিয়মটাও জানেন না।
এর পর, ৬ মার্চ, পুলিশের তরফ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতেও আইনবিরুদ্ধে ভাবে ধর্ষিতার নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বাড়ির ঠিকনা সব কিছুই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন যে ইচ্ছাকৃত ভাবে পুলিশ এই কাজটি করেছে যাতে অন্যান্য ধর্ষিতারা আর প্রকাশ্যে মুখ না খোলে।
অভিযুক্তদের রাজনৈতিক যোগাযোগ বেশ ভালো। তাই, খুব সম্ভবত, পুলিশ এই ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। এই ঘটনায় কতজন শিকার হয়েছেন তাও হয়ত আর কোনও দিনও জানা যাবে না কারণ পুলিশ তাদের প্রাথমিক কর্তব্যটুকুও ঠিকঠাক করছে না।
অভিযুক্তরা যাতে পালিয়ে যেতে পারে এবং তথ্যপ্রমাণ যাতে নষ্ঠ করা যায় তার জন্য পুলিশের তরফ থেকে সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তা দেখলে ধর্ষিতা মহিলারা ভয় পেতে বাধ্য।
মাত্র কয়েকজনকে সাজা দিয়ে এই মামলার সুবিচার পাওয়া যাবে না। যে সব পুলিশকর্মীরা কর্তব্য পালন করেনি এবং যে সব পুলিশকর্মীরা ধর্ষিতাদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে তাদেরও সাজা দিতে হবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে