সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীরা প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করছে, তাদেরকে নিরাশ করা উচিত হবে না
নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বসবাসকারীরা বিশ্বাস করে এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতি থেকে মোদীই তাদের উদ্ধার করতে পারেন
- Total Shares
চল্লিশজন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর পর আসমুদ্রহিমাচল যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বদলার দাবি করে আসছে, তখন নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে চাপানউতোরের শিকার হচ্ছেন নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।
অতর্কিত বোমাবর্ষণ ও গুলি বিনিময়ের আশঙ্কার মাঝেই তাদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের রক্ষা করাটাই তাদের কাছে বড় দায় হয়ে পড়েছে।
কিন্তু গ্রামবাসীরা, তাদের এই সঙ্কটজনক মুহূর্তে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই তাদের রক্ষাকর্তা হিসেবে মনে করছেন। তাদের ধারণা একমাত্র মোদীই তাদের জীবনের উদ্বেগকে বরাবরের জন্য নির্মূল করতে পারে। তিনিই একমাত্র পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিতে পারেন।
সীমান্তবর্তী এলাকার একটি বাড়ি, বোমাবর্ষণের পর [ছবি: রয়টার্স]
এখানে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে মোদী কি যথোপুযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পেরেছেন?
সম্প্রতি, আমি নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জম্মুর রাজৌরি জেলা এবং ভারতীয় সীমান্ত বরাবর রণবীর সিং পোরায় অবস্থিত গ্রামগুলোতে গিয়েছিলাম। পরবর্তী গুলিটা কোথায় এসে পড়বে কিংবা পরের বোমাবর্ষণ কোথায় হবে - এই সব আতঙ্কের মাঝেও এই অঞ্চলের গ্রামবাসীরা নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন কর চলেছেন। প্রায় প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, "আমরা সরকারের পক্ষে রয়েছি। ফৌজিদের উপর আমাদের পূর্ন আস্থা রয়েছে!"
নরেন্দ্র মোদীর উপর পূর্ন আস্থা রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজনের [ছবি: পিটিআই]
বাস্তবে অবশ্য মনে হচ্ছে, এই গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
বাঙ্কারের প্রয়োজন
নৌশেরা একটি বিরাট অঞ্চল যেখানে ৫২টির বেশি গ্রাম রয়েছে। ২০১৮ সালে সরকার এখানে ১০২টি বাঙ্কার প্রস্তুত করেছিল, যদিও ১২৭টি বাঙ্কারের প্রয়োজন ছিল। এক একটি বাঙ্কারের জন্য ২.৪০ লক্ষ টাকা খরচ পড়ে। আর, এই কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও অবধি ১.৪২ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বাড়ির ভিতরেই এই বাঙ্কারগুলো তৈরি করা হয়েছে। ভারী বোমাবর্ষণের সময়ে গোটা পরিবারই একটি বাঙ্কারে এক সঙ্গে আশ্রয় নিতে পারে।
এর মধ্যে একটি বাড়িতে প্রবেশ করে আমি দেখে এসেছি কী ভাবে ১৪ ফিট বাই ১৬ ফিট মাপের একটি বাঙ্কারে পরিবারের দশজনই এঁটে যেতে পারে। একটি গ্রামে গিয়ে দেখতে পেলাম কী ভাবে গ্রামবাসীরা অন্তত তিনটি বাঙ্কার থেকে বৃষ্টির জল পাম্প করে বের করছে। স্বভাবতই, ব্যাঙ্কার তৈরির সময়ে বৃষ্টির জল জমার ব্যাপারটা মাথায় রাখা হয়নি।
সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত সরকারের [ছবি:রয়টার্স]
দুর্ভাগ্যবশত, কমিউনিটি বাঙ্কারগুলো এখনও অর্ধনির্মিত রয়েছে। এগুলো নির্মাণের জন্য বরাদ্দ অর্থ এখনও অবধি অনুমোদন করা হয়নি।
তিনটে কমিউনিটি বাঙ্কার নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, অর্থাভাব, রাজমিস্ত্রির অভাব এবং ক্রমাগত বোমাবর্ষণের ফলে এই কাজ শেষ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
আর্থিক ক্ষতিপূরণ
আরএস পোরা অঞ্চলের কয়েকজন গ্রামবাসী দাবি করেছে, স্প্লিনটার আঘাতের জন্য যে আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা তারা এখনও পায়নি। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের দিক থেকে যখন আক্রমণ করা হয়েছিল তখন বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হয়েছিলেন। বিনোদ নামের এক গ্রামবাসী ২০১৮ সালে মে মাসে চোখে ছোট পেয়েছিলেন। তাঁর বাবার শরীরেও স্প্লিন্টার প্রবেশ করেছিল। দু'জনেই এখনও অবধি চিকিৎসার জন্য সরকারি সাহায্য পাননি।
সরকার জানাচ্ছে, চোট পেলে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য আর নিহত হলে নিকটাত্মীয়কে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রকল্প রয়েছে। সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে এই ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রক্রিয়া স্থানীয় স্তরে বেশ বিলম্বিত হচ্ছে। তবে, প্রশাসনের নজরে এলে এই অভিযোগগুলোর উপর নজর দেওয়া হয়ে থাকে।
গোলাগুলিতে আক্রান্ত প্রতিটি ব্যক্তি বা পরিবারের আর্থিক সাহায্য নিশ্চিত করা উচিত সরকারের।
রাজ্যের বিপর্যয়ে মোকাবিলা তহবিল কিন্তু ক্রস-বর্ডার ফায়ারিংয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্যেও প্রযোজ্য।
শান্তি প্রক্রিয়া
হাজারও দুঃখ দুর্দশার মাঝে সীমান্তে বসবাসকারী গ্রামবাসীদের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের প্রতি আনুগত্য দেখে আমি যারপরনাই আহ্লাদিত।
প্রায় প্রতিটি গ্রামবাসীই জানিয়েছে যে প্রশাসনের উপর তাদের পূর্ন আস্থা রয়েছে।
উত্তেজনা হ্রাস করতে কেন্দ্রীয় সরকার কী কি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে?
আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা উচিত [সৌজন্যে: টুইটার]
ভারতীয় সেনাবাহিনী শুধু একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যেখানে পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলা হয়েছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ভারতীয় নাগরিকদের যেন নিশানা না করা হয়।
সর্বদা সজাগ থাকার জন্য সৈনিকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আর, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নাগরিকরা এই পরিস্থিতিতে পড়ে নিজেরাই সাহসী হয়ে উঠেছে। এখন সরকারের উচিত যে কোনও মূল্যে ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষা রক্ষা করা।
একজন খামখেয়ালি প্রতিবেশীর সঙ্গে লড়তে গিয়ে ভারতকে যেন দেশের সাধারণ নাগরিকদের না হারাতে হয়। এই গ্রামবাসীদের শেষ ভরসা নরেন্দ্র মোদী। মোদীর উচিত তাদেরকে নিরাশ না করা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে