অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দুর্গাপুজো হয় দেড় দিনে, সপ্তমী অষ্টমী নবমীর পুজো একদিনেই
সকালে লুচি-খিচুড়ি-আলু ফুলকপির তরকারি, রাতে বিরিয়ানি বা পোলাও-মাংস
- Total Shares
সিডনি বলতে গোটা বিশ্বই সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউস বা সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের কথাই বোঝেন। এই দু'টি দ্রষ্টব্যের থেকে গাড়িতে মাত্র আধ ঘণ্টা লাগে শহরতলির কনকর্ডে পৌঁছাতে। আর এই কনকর্ডের একটি হাই স্কুল ভাড়া করে আগামী শুক্রবার আয়োজিত হতে চলেছে শহরের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজো।
শুক্রবার তো তৃতীয়া। তা হলে সিডনিতে শুক্রবার থেকেই পুজোর ঢাকের কাঠি পড়তে চলেছে কেন? আসলে এই সুদূর দেশে তো আমরা দুর্গাপুজোর জন্য আলাদা করে ছুটি পাই না। তাই সকলকে একত্রিত করতে আমরা পুজোর লাগোয়া কোনও একটি উইকেন্ডে পুজো আয়োজন করি। সিডনিতে এখন ১২-১৩টি দুর্গা পুজো হয়। এদের মধ্যে কয়েকটি এই শুক্রবার থেকে শুরু হবে। আবার কয়েকটি পরের শুক্রবার থেকে।
উইক এন্ডের দেড় দিনেই শেষ হয়ে যায় সিডনির দুর্গাপুজো
প্রতিটি পুজোয় আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখছি। কারণ আমি এই শুক্রবার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পুজোতে থাকব। আবার পরের সপ্তাহে অন্য কোনও একটি পুজোতে গিয়ে আনন্দ করব।
সিডনির পুজো কলকাতার মতো দিনক্ষণ দেখে বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মেনে হয় না বা করা সম্ভব হয় না। তা বলে এখানে আনন্দ-আয়োজনের কোথাও কোনও অন্ত নেই।
এখানকার মূল পুজোটি দেড়দিনেই শেষ হয়ে যায়। শনিবার, একই দিনে, সপ্তমী অষ্টমী ও নবমীর পুজোর করা হবে। দশমী বলতে (রবিবার) শুধু ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা আর মিষ্টি বিতরণ। আমাদের প্রতিমা বিসর্জনের কোনও বালাই নেই। এখানে স্টোরেজ হাউসের ব্যবস্থা আছে। পুজো শেষে বার্ষিক চুক্তিতে প্রতিমা সেই স্টোরেজ হাউসে রাখা হয়। পরের বছর সেখান থেকে মূর্তি বের করে এনে ফের পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
থাকে খাওয়া-দাওয়ার এলাহি আয়োজন
শুনতে মাত্র দেড় দিনের হলেও এই পুজোর আয়োজন করতে রীতিমতো কালঘাম ছুতে যায় উদ্যোক্তাদের। প্রায় প্রতিটি পুজো কমিটিই শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা (পুজো শুরুর আগেরদিন) আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত করে থাকে। আনন্দমেলা মানে খাবারের স্টল। আনন্দমেলায় খাবার বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দেশে (ভারতে) বিভিন্ন চ্যারিটির জন্য পাঠানো হয়। এ ছাড়া দু'দিন ধরেই নাচ,গান, আবৃত্তি সহযোগে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যার জন্যে মাসখানেক ধরে শনি ও রবিবারগুলোতে জোর কদমে রিহার্সালের আসর বসে।
পুজোর মাসখানেক আগে থেকে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রিহার্সাল পর্ব
এর পর আছে পুজোর মূল আকর্ষণ, মানে খাওদাওয়ার পর্ব। শনিবার সারাদিন ধরেই ভোগ বিতরণ হয় - লুচি-তরকারী, খিচুড়ি-আলু ফুলকপির তরকারি, দই-মিষ্টি সহ নানা ধরণের উপাদেয় বাঙালি নিরামিষ পদ। সন্ধ্যাবেলা অবশ্য আমিষ ভোজন - কখনও বিরিয়ানি আবার কখনও পোলাও-পাঁঠার মাংস। সব মিলিয়ে, বিদেশ বিভুঁইতে ভোজন রসিক বাঙালির কাছে এই দুর্গা পুজোর অনুষ্ঠানস্থলকে শেষ গন্তব্য হিসেবে বলে মনে হয়।
পুজোর দিনে নাচে গানে আবৃত্তি ও নাটকে মেতে থাকেন সিডনির বাঙালিরা
ভারতে, বিশেষ করে কলকাতায়, পুজো তো এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। আসমুদ্রহিমাচলে বাঙালির দুর্গাপুজোই নাকি এখন সর্ববৃহৎ উৎসব হয়ে উঠেছে। সময় পেলে একবার স্টিভ ওয়া ও মার্ক ওয়ার শহরের দুর্গাপুজো দেখে যান। আশা করি নিরাশ হবেন না।
আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ রইল!