জম্মু ও কাশ্মীর: লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হল না কেন
বিধানসভা নির্বাচন না হলে পাকিস্তান সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের জয় হয়েছে বলে ভাববে
- Total Shares
জম্মু ও কাশ্মীরে লোকসভা নির্বাচন হতে পারে কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন নয় - নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত আমাকে হতচকিত করেছে। এটা ঠিক যে আমার বরাবরই দাবি করে থাকি যে মানসিকতার দিক থেকে আমরা পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। কারণ, আমাদের দেশে এখন সংসদীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে যেখানে ব্যালট ক্ষমতা নির্ণয় করে, দেশের সেনাবাহিনী কিংবা একনায়তকতন্ত্র নয়।
উপত্যকার মানুষেরা যে বেশি মাত্রায় লোকসভা কিংবা বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দেবে না তাও আমরা জানি। এই মুহর্তে, তারা কোনও মতে একটি যুদ্ধেক্ষেত্রে নিজেদের দিন গুজরান করছে এবং যে কোনও ভারতীয় প্রকল্পের থেকে তারা শতহস্ত দূরে রয়েছে। তা সত্ত্বেও, আমি মনে করি ওই রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।আমরা বলে থাকি, খুব খারাপ পরিস্থিতিতেও কাউকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।
কিন্তু যেটা ভাবলে অবাক লাগে তা হল, রাজ্যজুড়ে যদি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সেই ব্যবস্থা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বলবৎ করা যায় না কেন?
লোকসভা নির্বাচনের ব্যবস্থা যখন করা গেল, তখন বিধানসভার নিয়ে কেন? [ছবি: রয়টার্স]
রাজ্যের ছ'টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করা হবে কারণ ওই তিনটি কেন্দ্রে হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজ্যের বিধানসভা সদস্যদের নির্বাচিত করার জন্য আবার সেও একই ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি করা হবে কেন? জনসাধারণের টাকা সঞ্চয় করতে ক্ষতিটা কোথায়?
কাশ্মীরে মোট ৮৭টি বিধানসভা আসন রয়েছে। এটা ঠিক যে বিধানসভা নির্বাচন করতে হলে এই ৮৭টি আসনের প্রার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। অতীতে, বহু প্রার্থীই জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছিল। ১ই ৮৭টি আসনের মধ্যে ৪৬টি আসন রয়েছে কাশ্মীর অঞ্চলে, ৩৭টি আসন রয়েছে জম্মু অঞ্চলে ও বাকি চারটি আসন রয়েছে লাদাখ অঞ্চলে। লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে আমরা যদি অর্ধেকটা রাস্তা হাটতে পারি তাহলে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে আমরা কেন পুরো প্রক্রিয়াটাকে সম্পন্ন করলাম না কেন?
কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করতে গেলে মানসিকতা বদলেরও প্ৰয়োজন আছে [ছবি: রয়টার্স]
জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন না হওয়ায় বেশ কিছু প্রভাব কিন্তু পড়বে।
যারা কাশ্মীরের ভারতীয় গণতন্ত্র নিয়ে ঠাট্টা মস্করা করে থাকে তারা আরও বেশি করে সুযোগ পেয়ে গেল। তারা এখন বলবে যে ভারত কাশ্মীরকে সেনাবাহিনীর শাসনে রাখতে চায় যাতে সরাসরি দিল্লি থেকে এই রাজ্যটির উপর নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ন্যাশনাল কনফারেন্স কিংবা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মতো রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো, যারা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কাজ করে, মনে করে যে কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন না হওয়া মানে তা পাকিস্তান সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জয়।
গোটা দেশের বিরোধীরা জোর গলায় বলবে যে মোদী সরকারের কাশ্মীর নীতি সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। নির্বাচন কমিশন নিব্রাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরের দিনই বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর মুখে এই কথা শোনা গিয়েছে।
কাশ্মীরিদের পাথর ছুড়তে না দিয়ে, ভোটাধিকার দেওয়া হোক [ছবি: রয়টার্স]
যারা বিশ্বাস করে যে হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য দুটি আলাদা রাষ্ট্রের প্রয়োজন তারা বিধানসভা নির্বাচন না হলে যারপরনাই খুশি হবে কারণ এই রাজ্যের একটি অংশ কিন্তু মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। দেশের যেখানেই কাশ্মীরি শালওয়ালা প্রহৃত হয় বা কোনও মুসলমানকে গণধোলাই দেওয়া হয় তখন এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কিন্তু আনন্দে ফেটে পড়ে।
এই পরিস্থিতি আমরা কাশ্মীর নিয়ে লড়াই করি এবং কাশ্মীরিদের অমানবিক করে তোলার চেষ্টা করি। আমার মতে, আম কাশ্মীরিরা শুধুমাত্র দু'দেশের বল প্রদর্শনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে যাদের নিয়ে আমরা টিভির পর্দায় নিত্যদিন তর্ক বিতর্ক করে থাকি। এই রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সন্ত্রাসবাদের একটি ইতিহাস রয়েছে কিন্তু আমরাও এই রাজ্যের প্রতি মানবিকআচরণ করছি ন।
এই ভণ্ডামি আমাদের বন্ধ করতে হবে।
একটি সাবানের বিজ্ঞাপনে যদি একজন হিন্দু ছেলেকে একজন মুসলমান মেয়ের বন্ধু হিসেবে দেখানো হয় তাহলে সেই বিজ্ঞাপনের উপরও আক্রমণ নেমে আসে। আবার, অন্যদিকে আমরা গালি বয়ের মতো সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই যেই সিনেমার মুখ্য চরিত্রগুলো সব হিন্দু। দেশের নানা মুনির নানা মত আমাদের সময় বিশেষে বিভিন্ন দিকে টেনে নিয়ে চলে।
আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে থাকি যে কাশ্মীর ভারতেরই অঙ্গ। কাশ্মীরিদের সঙ্গেও সেই মতো ব্যবহার করা উচিত আমাদের।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে